সময় বদলেছে। বদলাচ্ছে। সেই সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের চাহিদা, কৃষ্টি-কালচার। একটা সময় ছিল, যখন মনমতো চাকরি পাওয়া খুব সহজ ছিল। সে সময় মানুষের এত চাহিদা ছিল না। চাকরি ছিল শুধুমাত্র খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অবলম্বন। হয়তোবা সামাজিক স্ট্যাটাস। এর থেকে বেশি কিছু নয়।
কিন্তু এখন চাকরি শুধু ওই পর্যায়ে নেই। মানুষ এখন চাকরির ভিতরেও ঘরোয়া আনন্দ পেতে চায়, অফিসে পার্টি এনভায়রনমেন্ট চায়, অফিস শেষে কলিগদের সাথে ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে চিকেন ফ্রাই খেতে খেতে সেলফি তুলতে চায়। ফেসবুকের চেক-ইন এ “At Office” লিখতেও দেখা যায় অনেককে। সবাই এখন নিজের কাজটাকে আরো বেশি উপভোগ করতে চায়, আনন্দের সাথে করতে চায়। এই উপভোগের মন্ত্র আগেও ছিল। কিন্তু এতটা ব্যাপকভাবে ছিল না। এটাই এখন হয়ে গেছে “স্ট্যাটাস” এর আরেক রূপ। যেটা আগে ছিল শুধুই একটা বড় চাকরি, অথবা টাকা-পয়সা।
“Quality Life” এখন সবাই চান। এটা পাশ্চাত্যের ধ্যান-ধারণা। নিজের কাজের পরিবেশটিকে আনন্দময় রাখা, সঠিক সময়ে অফিস থেকে বের হয়ে পরিবারের সাথে সময় কাটানোই “Quality Life।” কিন্তু আমাদের দেশে এখনো বেশিরভাগ চাকরিতেই এরকম ধারণা প্রতিষ্ঠিত নয়। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এবং হাতে গোণা কিছু দেশীয় কোম্পানিতে এরকম পরিবেশ আছে। আবার কিছু কিছু চাকরি আছে, চাকরির ধরণের কারণেই আপনি অফিস শেষে ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে সেলফি তোলার মতো আগ্রহ পাবেন না।
হয়তোবা, আপনি সে ধরণের চাকরি করেন। আপনারও ইচ্ছা হয়, আপনার বন্ধুদের মতো অফিসের পর আড্ডা দিতে। পার্টি এনভায়রনমেন্ট এ কাজ করতে। কিন্তু আপনি তা পারছেন না। আপনাকে হয়তো চাকরি করতে হয় ঢাকা থেকে বহুদূরে, প্রত্যন্ত কোন অঞ্চলে। একারণে আপনার সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে। সবসময়ই মনে হয়, আমি কি পিছিয়ে পড়ছি সবার থেকে?
যদি এরকম আপনার মনে হয়ে থাকে, তাহলে এ লেখাটি আপনার জন্য। খুব কম মানুষেরই সৌভাগ্য হয়, নিজের মনমতো চাকরি ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পাওয়া। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষেরই ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরতে কিছুটা সময় লাগেই। অথবা এমন হতে পারে, আপনার পড়াশোনার বিষয়বস্তুর কারণে চাকরির ধরণই একটু কঠিন। নিজের জন্য সময় বের করে নেওয়ার সুযোগ খুব কম। এজন্য হয়তো চাকরিতে আপনার মন বসে না। বিষন্ন মনে অফিসে কাজ করেন। জীবনে সফল হতে গেলে ধৈর্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে সুদিনের জন্য। তাই চাকরিতেও খুঁজে নিতে হবে আনন্দ। সেটা করতে পারেন এইভাবে-
দিনের শুরুটা হোক খুব সকালেঃ সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে তার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই নানান টেনশনে আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হবে। হয়তো অফিসে আপনি ঠিক সময়েই গিয়েছেন, কিন্তু ঘুম থেকে উঠেছেন অফিসে যাওয়ার ১ ঘন্টা আগে। তড়িঘড়ি করে কোন রকমে নাকে-মুখে খাবার গুঁজে শার্টটা ইন করতে করতে বাসে উঠেছেন।
অফিসে গিয়েই হন্তদন্ত হয়ে কাজ শুরু করেছেন। এরকম হলে কোন কাজের পরে কোন কাজ করবেন, ঠিকমতো গুছিয়ে উঠতে পারবেন না। এ কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিজের কাজটা আপনার খারাপ লাগা শুরু করবে। আপনি আনন্দ পাবেন না, আগ্রহ পাবেন না। কাজেই, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠুন। প্রার্থনা করুন, জগিং করুন। অথবা হালকা জিম। সুন্দরভাবে অফিসে যান। কাজ করতে ভালো লাগবে। আনন্দও পাবেন।
ছুটির দিনটির জন্য করে রাখুন পরিকল্পনাঃ আপনার হয়তো সপ্তাহে ১ দিন ছুটি। টানা ৬ দিন গাধার খাটুনি খেটে আপনি বিনোদনের কোন সুযোগ পান না। তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেন ছুটির দিনটির জন্য। কিন্তু ছুটির দিনেও দেখা যায়, ঘুম থেকে ওঠেন বেলা ১২ টায়। তারপর দুপুরে কিছুটা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পরেন। বিকালে চা-নাস্তা করে, রাতে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ টিভিতে দেশ ও জাতির খবর শুনে বিষণ্ণ মন নিয়ে বিছানায় যান। পরেরদিন আবার অফিস। শোয়ামাত্রই ঘুমিয়ে যান। এভাবে ঘুমে ঘুমেই হয়তো কেটে যায় আপনার একেকটি ছুটির দিন।কিন্তু আপনার যে একটা পরিবার রয়েছে, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, এটা ভুলে গেলে কি চলবে?
তাছাড়া ঘুমের মধ্যেই সব সুধা নিহিত আছে, এটাও তো সত্যি নয়। ছুটির দিনটাতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন দর্শনীয় কোন স্থান থেকে। অথবা আপনার বাসার কাছেই কোন ফাস্টফুড শপ, নিদেনপক্ষে চায়ের দোকানেই আড্ডা দিতে পারেন বন্ধুদের সাথে। আপনি ভালো বোধ করবেন। টানা ৬ দিনের অফিসের কাজ আর আপনার মাথার উপর পাহাড় হয়ে দাঁড়াবে না। কাজেই, ছুটির আগের দিনটায় আপনার স্ত্রী অথবা বন্ধুদের সাথে, কিংবা বাবা-মা’র সাথেই প্ল্যান করে রাখুন পরেরদিন কি করবেন। উৎসবমুখর একটি আবহ তৈরী হবে। সেটা ছড়িয়ে পরবে আপনার কর্মক্ষেত্রেও।
নিজের কাজটির জন্য মনে রাখুন গর্ববোধঃ হতে পারে, আপনি অনেক কম টাকা বেতন পান আপনার বন্ধুদের তুলনায়। অথবা খুব ছোট কোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। দিনশেষে আপনার বন্ধুরা যখন ফেসবুকে সেলফি/চেক-ইন দিচ্ছে, আপনি হয়তো অফিসের কাজেই ডুবে আছেন।
মাথায় রাখুন, আপনার চাকরিটা ততটা ভালো না হতে পারে।কিন্তু আপনি ভিক্ষা তো করছেন না! অথবা ঘরেও বসে নেই। কে ই বা বলতে পারে, আপনার এই কাজের প্রতি আত্মনিবেদন, পরিশ্রম সামনে আপনার জন্য একটা বড় কোম্পানির চাকরির দুয়ার খুলে দিবে না? আমরা তো কেউই আমাদের ভবিষ্যৎ জানি না। কাজেই, নিজের চাকরির জন্য মনে কষ্ট রাখবেন না।
ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে থাকুন। কাজের মাঝে আনন্দ খুঁজে নিন নিজের মতো করে। আর মনে রাখুন আত্মমর্যাদা, গর্ববোধ।নিজের কাজকে ভালোবাসুন। ভালোবাসুন নিজের জীবনকে। জীবনও আপনাকে ভালোবাসবে। আপনাকে ভরিয়ে দিবে সাফল্যের মণি-মুক্তোও।
ইশফাক জামান
তথ্যসূত্র: পরামর্শ ডটকম।