রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে পাঁচ বছর মুনাফা দেখানোর পর এবছর ফের লোকসানে চলে এসেছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাবে চলতি অর্থবছর (এপ্রিল পর্যন্ত) নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছর কর উত্তর নিট লোকসান ৫ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে হিসাব করা হয়েছে।
২০১২-১৩ অর্থবছর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো নিট ২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা লোকসান করে। পরবর্তী পাঁচ বছরে সম্মিলিতভাবে মুনাফা অর্জন করে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকায় পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বড় অংকের মুনাফা করে। তাছাড়া টেলিকমিউনিকেশন খাতেও বড় মুনাফা হয়। এজন্য সম্মিলিতভাবে নিট মুনাফা অর্জিত হয়।
অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী— ৪৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠান ব্রেক ইভেনে এবং ১৩টি প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মোট লোকসানের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুত্ খাতের লোকসান ৯৩১০ কোটি যা ১৩ প্রতিষ্ঠানের মোট লোকসানের প্রায় ৮১.৭০ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, বিটিআরসি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, রাজউক, পল্লী বিদ্যুত্সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান লাভজনক হওয়ায় সার্বিক ভাবে নিট লোকসান কম হয়েছে। তবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লাভ আগের চেয়ে কমেছে।
লোকসান প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট ডকুমেন্টে উল্লেখ করেছেন, দেশর ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এবং জনকল্যাণার্থে উত্পাদন ব্যয়ের চেয়ে কম মূল্যে বিদ্যুত্ সরবরাহের ফলে বিদ্যুত্ খাত লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে হবে। কারণ অনেক দেশেই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে।
এগুলো থেকে সরকার ও জনগণ উভয়ে লাভবান হচ্ছে। তবে যেগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যায় সেগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানে বড় অংকের ভর্তুকিও দিচ্ছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মাত্র পাঁচ বছর ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি দেওয়া হয় ৫৯১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ৮২৬ কোটি টাকা এবং এক হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সর্বোচ্চ লোকসানে আছে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড। এর লোকসান বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ২৭১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের বছর এর লোকসান ছিল ৯ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বিজেএমসির নিট লোকসান ৬৯৫ কোটি টাকা যা আগের বছর ছিল ৪৯৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) লোকসান আগের বছর ৫৫৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এবছর ৯১১ কোটি টাকা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন সর্বোচ্চ নিট মুনাফা করেছে। আগের অর্থবছর নিট মুনাফা ৬২৬৩ কোটি টাকা থেকে হ্রাস পেয়ে এবছর ২৫৪৮ কোটি টাকা হয়েছে। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ২০১৮-১৯ অর্থবছর ১৯৪৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের বছর মুনাফা করেছিল ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।
তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন চলতি অর্থবছর ৮৮৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নিট মুনাফা ৭৯২ কোটি টাকা হতে চলতি অর্থবছর ৫৯১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের নিট লোকসান বৃদ্ধি পেয়ে ৬৯৫ কোটি টাকা হয়েছে।
গত বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে ৪৯৭ কোটি টাকা। বিআরটিসি এবছর লোকসান দিয়েছে ৬০ কোটি টাকা, বিআইডব্লিউটিএ লোকসান করেছে ৬১ কোটি টাকা। তবে রাজউক নিট লাভ করেছে ৪৮৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) মুনাফা করেছে ৩২১ কোটি টাকা তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক।