1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

ইঞ্জিনিয়ারদের জীবন বদলে দেওয়ার মত একটি লেখা!

আজকের লেখাটি আমার প্রিয় সকল ছাত্র-ছাত্রিদের জন্য যাদের সাথে কিছুদিন সময় কাটানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। শিক্ষকতা জীবণের ঐ অল্প কিছুদিনেই তোমরা আমাকে যে পরিমাণ সম্মান আর ভালোবাসা দিয়েছিলে, যেভাবে গ্রহণ করে নিয়েছিলে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে তা কোনভাবেই ভোলার নয়। তোমাদের সেই সম্মান আর ভালোবাসা আজও আমাকে টানে ফের শিক্ষকতা পেশার দিকেই।

ঠিক কি কারণে তোমরা আমাকে এতটা ভালোবাসতে, এতোটা সম্মান করতে, এতোটা কাছে পেতে চাইতে তা আজও অজানা। আজ এতোদিন পর তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে তোমাদের মাঝে আবার হাজির হই, আবার সেই ইলেক্ট্রনের গতিবিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি, কথা বলি ইন্ডাকশন মোটর নিয়ে, ধারণা দিই কিভাবে জীবণ যুদ্ধে আশা ধরে রেখে কঠিণ বিপদের মোকাবেলা করতে হয়, কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়।

আজ আমি তোমাদের কিছু কঠিণ বস্তবতার কথা বলব, যেটা শুনে তোমাদের অনেকেরই মন খারাপ হবে। কথাগুলো যে ঠিক কিভাবে বল তা ভেবে পাচ্ছি না, পেটে আসছে মুখে আসছে না এমন টাইপ একটা ব্যাপার।

তোমরা নিশ্চয়ই অনেক আশা নিয়ে, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করে, টাকা খরচ করে, সময় খরচ করে পড়া-লেখা করে যাচ্ছ, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছ। নিশ্চয়ই তোমরা স্বপ্ন দেখ একদিন তোমাদের ছাড়া ফ্যাক্টরীতে মোটর ঘুরবে না, পিএলসির প্রোগ্রাম কাজ করবে না, পাওয়ার হাউজের ডিজেল ইঞ্জিন চালু হবে না, গ্যাস টার্বাইন রানিং মুডে যাবে না, সিমেন্ট কারখানায় সিমেন্ট বেরুবেনা।

নিশ্চয়ই তোমরা স্বপ্ন দেখ বিভিন্ন কোম্পানির সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার, কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার, প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার, সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পোষ্টগুলো অলংকৃত করবে, চেয়ারে বসবে, ভালো মাইনে পাবে, ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দটি শোভা পাবে, সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করবে।

আমি জানি, তোমরা প্রায় প্রত্যেকেই এই স্বপ্ন দেখ। প্রথম বেঞ্চের ছাত্রটি যেমন দেখ, শেষ বেঞ্চের ছাত্রটিও তেমন দেখ; আইকিউ ভালো ছাত্রটি যেমন দেখ, গোবেট মার্কা ছাত্রটিও তেমন দেখ, বিত্তবান ছাত্রটি যেমন দেখ, দরিদ্র ছাত্রটিও তেমন দেখ। কিন্তু চরম সত্যি কথা হচ্ছে তোমাদের সবার এ স্বপ্ন পূরণ হবে না; হাতে গোনা দুই-এক জনের হবে, বাকী সবার আত্নিক মৃত্যু ঘটবে। দেহের মৃত্যুর হিসেব রাখা হয়, কিন্তু আত্নিক মৃত্যুর কোন পরিসংখ্যান রাখা হয় না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কাদের স্বপ্ন পূরণ হবে আর কাদের হবে না? থিওরী বলে “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতী” কিংবা আরও বলে “লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে” অথবা বলে “কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে”। সে হিসেবে তোমরা যারা যারা কষ্ট করে, ধৈর্য ধরে পড়বে পরীক্ষায় পাস করবে সার্টিফিকেট পাবে তাদের সবারই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কথা।

কিন্তু না, প্র্যাক্টিক্যাল বলে ভিন্ন কথা। আমি জানি, প্র্যাক্টিক্যল যা বলে তোমাদের তা বললে মানুষিক ভাবে অতীসহজেই নিতে পারবে না, অনেককে হয়তো বোঝাতে সমর্থও হব না, অনেকে হয়তো আমার সাথে একমতও হবে না। তবুও বলছি, দেখ ধরতে পার কিনা, দেখ একমত হতে পার কিনা!

তোমরা জান, একেকটি ট্রেন একেকটি নির্দ্রিষ্ট প্ল্যাটফর্মে চলে। রেল স্টেশনে লোকাল ট্রেনের একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে আবার দ্রুতগামী ট্রেনের একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে। একটি ট্রেন কত দ্রুত সময়ে কতদূর যাবে তা বোঝাযায় ঐ ট্রেনটি কোন প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে আছে তা দেখই যদিও দ্রুতগামী ঐ ট্রেনের থেকে লোকাল ট্রেনটির ইঞ্জিন ভালো হলেও হতে পারে। ট্রেনের মত আমরা মামুষরাও জন্মগত ভাবে একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে জন্মগ্রহণ করি, যে প্ল্যাটফর্ম ঠিক করে দেয় আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের গন্তব্য, আমাদের পজিশন, আমাদের সম্মান।

পারিবারিক-সামাজিক ভাবে উপরে অবস্থিত একটি ছেলে আর পারিবারিক-সামাজিক ভাবে নিচে অবস্থিত একটি ছেলে যদিও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, একই রেজাল্ট নিয়ে, একই ডিগ্রী অর্জন করে, একই স্বপ্ন দেখতে থাকে তথাপী পারিবারিক-সামাজিক ভাবে উপরে অবস্থিত ছেলেটির পটেনশিয়ালিটি বেশি থাকে, তার স্বপ্ন পূরণের সম্ভবনা বেশি থাকে।

বিষয়টা আরো একটু পরিষ্কার করে বলছি। তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে তোমরা যখন মাধ্যমিক লেভেলে পড়তে তখন বাংলা সাবজেক্টের মার্কস দুই ভাগে বিভক্ত থাকত। ৫০% রচনামূলক আর ৫০% নৈর্ব্যক্তিক। কেউ একজন রচনামূলকে খুব ভালো, সে পঞ্চাশে আটচল্লিশ পেল। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিকে ভালো না, বাকী পঞ্চাশে ত্রিশ পেল। তাহলে কিন্তু আর তার এ+ পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হল না। কিন্তু কেউ একজন রচনামূলকে তেমন ভালো না, সে পঞ্চাশে পঁয়ত্রিশ পেল।

কিন্তু নৈর্ব্যক্তিকে ভালে, বাকী পঞ্চাশে পয়তাল্লিশ পেল। তাহলে কিন্তু তার এ+ পাওয়ার স্বপ্ন ঠিকই পূরণ হয়ে যাচ্ছে। লেখাপড়া শেষে স্বপ্নের কর্মজীবণ খুঁজেপেতে ডিগ্রী যেমন একটা ফ্যাক্ট ঠিক তেমনই রেফারেন্স বা মাধ্যমও একটা ফ্যাক্ট। লেখা-পড়ার ব্যাপারটা তোমাদের হাতে থাকলেও রেফারেন্স ব্যাপারটা তোমাদের হাতে নেই।

এটা যারা পাওয়ার তারা জন্মগতভাবে পেয়েছ আর যারা না পাওয়ার তাদের স্বপ্নপূরণ হওয়ার কোন ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি নেই। ঠিক এই জায়গায় এসে তোমাদের আমি বলতে চাই, “জন্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভালো” কবির এই উক্তিটি ঠিক নেই। ভালো কর্মের জন্য ভালো ঘরেই জন্মাতে হবে। ভালো ঘরে জন্মাতে পারা এটাও একটা যোগ্যতা।

তোমাদের অনেক অনেক হতাশার কথা হয়তো বলে ফেললাম। এবার আশার কিছু কথা বলি। যারা জন্মগত ভাবে ভালো প্ল্যাটফর্মে জন্মাতে পারনি তারা হতাশ হইও না। তোমরা দৌড়াতে না পারলে হাট, হাটতে না পারলে হামাগুড়ি দাও। তবুও থেমে থেকো না। তোমরা জ্ঞাণ অর্জন করো, তবে সে জ্ঞাণ বিক্রি করে টাকা উপার্জন করতেই হবে এমনটা ভেবো না।

শেখ সাদীর একটি সুন্দর উক্তি আছে, জ্ঞাণ-বিদ্যা-বুদ্ধি যদি টাকা কামানোর একমাত্র হাতিয়ার হত তবে মূর্খ লোক না খেয়ে মারা যেত।” সূতরাং তোমরা জ্ঞাণ অর্জন করবে আত্নিক শান্তি আর মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে। জ্ঞাণ থাকলে কর্মজীবণে তোমরা মোটা মাইনের কর্ম না পেলেও পেতে পার, কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তোমরা মানুষের সম্মান পাবে।

তোমার জ্ঞাণের কারণে কিছু মানুষ তোমাকে হিংসা করবে, প্রকাশ্যে তোমাকে ছোট করার চেষ্টায় মেতে থাকবে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই তোমাকে ভয় করবে। কিছু মানুষ ঠিকই বসার জন্য তোমাকে একটি চেয়ার এগিয়ে দেবে। জ্ঞাণের পূজারীরা ঠিকই একসময় তোমাকে খুঁজে নেবে।

মনে রাখবে জীবণ মানুষকে অন্তত একটি হলেও সুজোগ দেয় উপরে উঠে আসার জন্য, আর সে সুজোগটি তুমি বুঝে উঠতে পারবে না যদি তোমার মধ্যে জ্ঞাণের ঘার্তি থাকে। তাই আমি তোমাদের বলব, তোমাদের ভালো ঘরে জন্ম হোক বা না হোক, রেফারেন্স থাকুক বা না থাকুক নিজ আগ্রহে নিজ প্রচেষ্ঠায় জ্ঞাণ অর্জন করে যাও।

মনে রাখবে জ্ঞাণ অর্জনের জন্য টাকা খরচ হলে, সময় খরচ হলে সেটা কোন ক্ষতি না, বরং ক্ষতি তখনই হবে যখন তুমি হতাশ হয়ে বসে থাকবে। সবার জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা। লেখকঃ আশিকুর রহমান হিরা

More News Of This Category