বাংলাদেশে এখন বেশ পরিচিত কিছু শব্দ হচ্ছে স্টার্টআপস, সামাজিক ব্যবসা এবং অ্যাপ ডেভেলপার। এ দেশের অনেক তরুণ যারা মেধা আর যোগ্যতার গুণে বহুজাতিক কম্পানিগুলোতে চাকরি নিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন পার করে দিতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করছে। উদ্যোমী তরুণদের এ প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। আমি নিজ প্রচেষ্টায় একজন উদোক্তা। তাই আমিও চাই এ দেশের সাহসী তরুণরা উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে আসুক।
ছোটবেলায় উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবিনি। বরং বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জেতার পর মনের লুকায়িত ইচ্ছে ছিল একজন ক্রিকেটার হব। অন্যদিকে মা-বাবার চাপ ছিল আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার বা একটি নিরাপদ চাকরি করি। এটিই হচ্ছে আমাদের দেশের মূল সমস্যা। আমাদের সমাজ এবং পরিবার চায় প্রত্যেকেই আরেকটি কম্পানিতে চাকরি করুক।
কিন্তু কেউ ভাবে না যদি সবাই অন্যের চাকরি করে তবে চাকরিদাতা হবে কে, কম্পানি তৈরি করবে কে। স্বাধীনতার পর উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের পথচলা খুব বেশি গতিময় না হলেও দেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন বেশ কিছু প্রতিভাবান উদ্যোক্তা। যাঁরা স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন পূরণে ঝুঁকিও নিয়েছেন। তাঁদেরই প্রচেষ্টার ফল আজকের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড স্কয়ার, আকিজ, রহিমআফরোজ, অটবি এবং প্রাণসহ আরো অনেক।
বলা যায়, ধনী পরিবার থেকে উদ্যোক্তা হলে কিছু আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি কোন ঝুঁকিতে পড়লে তা কাটিয়ে উঠার সুযোগ থাকে। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে এ সুযোগ পাওয়া যথেষ্ট কঠিন। প্রতিটি পদক্ষেপেই তাকে একেকটি বাধা মোকাবিলা করতে হয়। যা শুরু হয় অর্থনৈতিক দৈন্যতা থেকেই। নিজের পরিবারের সমর্থন কিংবা পরিচিতদের মধ্যে যদি বড় কেউ না থাকে এবং পুঁজির যদি স্বল্পতা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সাহস নিয়েই এগোতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আপনার লক্ষ্য স্থির থাকতে হবে, আপনি কী অর্জন করতে চান এবং কোন পথে তা অর্জন করবেন। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানও অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে খুঁজতে হবে, বই পড়া এবং অব্যাহতভাবে সে পথের তথ্য অনুসন্ধান করতে হবে যে পথে আপনি এগোতে চান।
তৃতীয়ত, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হচ্ছে ধৈর্য, যা একজন উদ্যোক্তার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম প্রক্রিয়ায় সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি আসে। কিন্তু আপনাকে অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে সে সময়টুকু অতিবাহিত করতে হবে। এ জন্য ফোকাস রাখতে হবে লক্ষ্যবস্তুতে। চতুর্থত, আপনাকে সীমিত অর্থের যথাযথ ও প্রত্যাশিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আপনি এসেছেন, সুতরাং অন্য কোনো সহায়তার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
ঝুঁকি যারা নিতে পারে তারাই উদ্যোক্তা এবং তাদের তৈরি সেবা, পণ্য কিংবা উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে সমাজের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়। কিন্তু যারা জুয়া খেলার মতো কোনো ব্যবসা দিয়ে অনেক অর্থ উপার্জন করে, অথচ সমাজের পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না, তারা পুঁজিবাদী। তারা শুধু অর্থই কামাবে, কিন্তু সমাজের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।
যখন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি যাত্রা শুরু করি, তখন নিজেও কোনো সাহায্যকারী পাইনি এবং শিখতে হয়েছে অনেক কষ্টে। আমি অনেক বই পড়েছি, যদিও সেগুলোতে বাস্তব জ্ঞানের বিষয়গুলো কদাচিৎই ছিল। সত্যিকার অর্থে আমি চলতে চলতেই শিখেছি। এগিয়েছি, বাধা পেয়েছি এবং সেখান থেকে শিখেছি। আশা করছি নিজের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা ও বাধাবিপত্তি নিয়ে একটি বই লিখব। একজন নতুন উদ্যোক্তাকে বলব, হয়তো কয়েক বছরই আপনার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে না।
আপনি হয়তো ১০০টি বৈঠক করবেন, কিন্তু ফলাফল আসবে তার দুই-একটি থেকে। হয়তো বা আপনি আশপাশে এমন অনেক মানুষ দেখবেন যারা আপনাকে হারাতে অনৈতিক পথ বেছে নেয়। উদ্যেক্তা কখনোই হারে না, সে কোন না কোন পথ বের করে নেই। আপনাকে আপনার মতো করেই এগিয়ে যেতে হবে। তার মধ্যে পরাজয় মেনে নেওয়ারও সক্ষমতা থাকতে হবে। যদি আপনার মধ্যে সততা এবং পরিশ্রম থাকে তবে একদিন না একদিন আপনি কাজের স্বীকৃতি পাবেন। সেই সঙ্গে মানুষও আপনাকে মনে রাখবে অনেক দিন।
লেখক : বিজ্ঞাপন পেশাজীবী
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।