ওয়াশিং মেশিন এমন একটি উপকরণ যা কেনা খুবই জটিল ব্যাপার। এগুলো বহন করা খুব যন্ত্রণাদায়ক, বাজারগুলো জটিল অব্যবহারযোগ্য ও লোভনীয় নতুন উপকরণাদি দিয়ে ভরপুর, এবং যখন আপনি কোন বড় ও দামি ওয়াশিং মেশিন কিনতে যাবেন তখন অবশ্যই আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়বে।ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় কি কি জিনিস বিবেচনা করবেন?
কিন্তু আশাজনক জিনিস হল যে, একটি ভাল ওয়াশিং মেশিন অনেক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত টিকে থাকে। তাই আপনি যদি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ভাল মেশিনটি কিনতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক দীর্ঘ দিন যাবত এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ধরণ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন- আপনি কি ফ্রন্ট-লোডিং ওয়াশিং মেশিন অপেক্ষা ওয়াশিং মেশিনের উপরে থাকা লোডিং এবং আনলোডিং লন্ড্রিগুলোকে বেশি পছন্দ করেন?
ফ্রন্ট লোডার বনাম টপ লোডার
প্রথমে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি ফ্রন্ট-লোডিং অথবা টপ লোডিং মেশিনের থেকে কোনটি পছন্দ করবেন। আপনার অবশ্যই আগের মডেল অনুযায়ী, লন্ড্রির স্পেস অনুযায়ী, অথবা এমনকি আপনার কার্যক্ষমতা অনুযায়ী একটি পছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু কেন একটি অথবা অন্যটি আপনার জন্য ভাল হবে তা যাচাই করা খুবই ভাল। এই কারণগুলো নিচে দেয়া হলঃ
টপ লোডার:
সুবিধাসমূহ: ফ্রন্ট লোডারের চেয়ে অল্প পরিমাণ ক্ষয় হয় ও অল্প মেরামত করার প্রয়োজন হয়। দ্রুততম ওয়াশিং পদ্ধতি। সাধারণত কেনা খুব সস্তা। অপেক্ষাকৃত হালকা এবং সহজে সরানো যায়। একবার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলেও সহজে অন্য কাপড় দেয়া যায়। সাধারণত খুব ভালভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে পারে।
অসুবিধাসমূহ: সাধারণত কাপড়ের জন্য খুবই কঠোর। ফ্রন্ট লোডারের চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার করে। যখন উষ্ণ থেকে গরম পানি দিয়ে ধোয় তখন বেশি শক্তি ব্যবহার করে। বেশি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে। ব্যবহারের জন্য বেশি ব্যায়বহুল।
ফ্রন্ট লোডার:
সুবিধাসমূহ: কাপড়ের জন্য খুব ভাল। সাধারণত কম পানি ব্যবহার করে। যখন উষ্ণ থেকে গরম পানি দিয়ে ধোয় তখন কম শক্তি ব্যবহার করে। কম ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে। বেশি কার্যক্রম ও উচ্চ তাপমাত্রায় ধোয়ার অপশন। কম খরচে চালনা করা যায়। উচ্চ ঘূর্ণন গতি, যে কারণে এরা বেশি পানি বের করতে পারে- এমনকি কাপড় শোকানোর জন্যও উপকারী, এবং ক্লথ ড্রাইয়ার ব্যবহার করলেও খরচ কম পড়ে।ছোট পরিসরের জন্য খুব ভাল- আপনি কোন বেঞ্চির নিচেও এটি রাখতে পারবেন অথবা এর উপর ড্রাইয়ারও রাখতে পারবেন।
অসুবিধাসমূহ: কাপড় ধুতে বেশি সময় নেয়- কোন কোন ক্ষেত্রে তিন ঘন্টারও বেশি সময় নেয়। ( কিন্তু বেশির ভাগেরই তাড়াতাড়ি ধোয়ার অপশন আছে।) সাধারণত কেনা খুবই ব্যয়বহুল। উচ্চ ঘূর্ণন গতি ও কম পানির জন্য ( এবং উচ্চ ওয়াশিং তাপমাত্রার অপশন) কাপড়ে বেশি ভাজ পড়ে। কিছুর অবশ্য ভাজ-নিরোধক পদ্ধতি আছে। কিছুগুলোর মধ্যে আপনি ওয়াশিং পদ্ধতি শুরু হয়ে গেলে সহজে কাপড় যোগ করতে পারবেন না। সহজে নড়াচড়া করা যায় না। কাঠের মেঝের উপর স্থাপন করতে কিছুগুলোর জন্য বিশেষ বন্ধনীর প্রয়োজন হয়। উচ্চ ঘূর্ণন চক্র বেশি থাকে, কিছু মানুষ এই বিষয়টির প্রতি খুব সংবেদনশীল। কিছুগুলো কম পানি ব্যবহারের কারণে এত ভালভাবে ধুতে পারে না।
কারিগরি দিকগত পার্থক্যসমূহ:
ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিনগুলো কাপড়গুলোকে খুব ভালভাবে একের পর এক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ধৌত করে যা কাপড়ের জন্য খুবই উপকারী। এই ধরনের পরিষ্কার করার পদ্ধতি টপ লোডিং ওয়াশিং মেশিনের তুলনায় কম শক্তি ( যখন গরম পানি দিয়ে ধোয়) ও কম পানি ব্যবহার করে, এবং অতিরিক্ত চাপ নিতেও খুব দক্ষ। ধৌত করার পদ্ধতিটি টপ লোডারের চেয়ে প্রায়শই সময় বেশি নেয়, যদিও বেশির ভাগ ফ্রন্ট লোডারেরই তাড়াতাড়ি ধোয়ার পদ্ধতি ও অপশন আছে।
আপনার যদি চুলায় গরম করা পানি থাকে এবং এটিকে ধোয়ার জন্য ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনাকে গরম পানির সংযোগসহ একটি ওয়াশিং মেশিন লাগবে, গরম এবং ঠাণ্ডা পানির দ্বিমুখী সংযোগসহ ফ্রন্ট লোডার খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে ( বেশির ভাগের অভ্যন্তরীণ উনুন থাকে)। ওয়াশার ড্রায়ার কম্বোগুলো ফ্রন্ট লোডারের খুবই ছোট একটি অংশ এবং এতে একটি কনডেনসার ড্রায়ার প্রস্তুত করা থাকে।
প্রায় একই ধরনের অন্যান্য ফ্রন্ট লোডার ছাড়া, তিন ধরনের টপ লোডার রয়েছে:
এগিটেটরঃ এই ডিজাইনটির সাথে আপনি সম্ভবত খুব পরিচিত। একবার মেশিনটি পানি দিয়ে পূর্ণ হলে, বেশির ভাগ মডেলই একটি আন্দোলক দ্বারা কাজ করে যা ড্রামটির উপরিভাগ থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত লেগে থাকে, সবলভাবে পেঁচানো থাকে এবং ধৌত করার কার্যক্রমকে চতুর্দিকে পরিচালন করে। এটি তাড়াতাড়ি ময়লা পরিষ্কার করে, কিন্তু কাপড়ের জন্যও ক্ষতিকর।
ইমপেলারঃ কম প্রচলিত ইমপেলার মডেলগুলোর একটি উন্মুক্ত গামলা থাকে যা ড্রামের উপরিভাগের অংশে দেখা যায়। পাখাগুলো এর মাঝখানে থাকে আর কার্যক্রম ইমপেলারের ঘূর্ণন অনুযায়ী ড্রামের নিম্নাংশ থেকে শুরু হয়, যা আলোড়নের সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়া এগিটেটরের থেকে কাপড়কে বেশি জট পাকায়। এরা সাধারণত এগিটেটরের চেয়ে বেশি পানি ও শক্তি ব্যবহার করে, এবং এগুলো ব্যবহার করাও অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল।
নিচু আকারের এগিটেটরঃ এতে একটি ইমপেলার ও সম্পূর্ণ আকৃতির এগিটেটরের মাঝখানে আরেকটি এগিটেটর থাকে।
যা খুঁজবেন: আপনি দোকানে প্রবেশ করার আগে অথবা অনলাইনে খোজার আগে কিভাবে আপনার নতুন ওয়াশার ব্যবহার করবেন তা সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করুন।
ধারণক্ষমতা:
ধারণক্ষমতা ৪.৫ কেজি থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে, তাই প্রত্যেক গৃহস্থালির জন্যই এমন একটি মেশিন খুঁজে বের করা উচিত যা তাদের সাথে মানানসই হয়। যদিও বেশি বড় মেশিনগুলো বড় গৃহস্থালির জন্য অথবা বিশাল আয়তনের জিনিসপত্রের জন্য খুব উত্তম হয়, এর জন্য আসল উপায় হল প্রস্তুতকারক কর্তৃপক্ষ মেশিনটির ধোয়ার জন্য প্রকৃত ধারণক্ষমতা কতটুকু বলছে তা জানা- এবং এটি হল এমন কিছু যা আপনি ভিতরের অংশ দেখে বলতে পারবেন না।
আপনার কত ধারণক্ষমতা প্রয়োজন তা সিদ্ধান্ত নিতে, আপনার ধোয়ার মাপ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ওজন পরিমাপ করুন। আপনার যদি বাথরুম স্কেলের সেট থাকে, তাহলে প্রথমে খালি বালতিটির প্রাথমিক ওজন নিন, এরপর আপনি মেশিনে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ কাপড় রাখবেন তা দিয়ে বালতিটি পূর্ণ করুন। সম্পূর্ণকৃত বালতিটির ওজন নিন এবং এটিকে প্রথম ওজনের সাথে বিয়োগ করুন। আপনার প্রকৃতপক্ষে কতটুকু ধারণক্ষমতা প্রয়োজন তা বের করার জন্য এটি একটি ভাল পদ্ধতি।
সময়:
টপ লোডারের সাধারণত ফ্রন্ট লোডারের চেয়ে কম ওয়াশ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। আপনি যদি ফ্রন্ট লোডার পছন্দ করে থাকেন, তাহলে দ্রুত ওয়াশ পদ্ধতি সম্পন্ন একটি নির্বাচন করুন- কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিবেচনাযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন। শুকানোর সময়ও একটি ভাল বিবেচনার বিষয়। কারণ ফ্রন্ট লোডারের উচ্চ ঘূর্ণন গতির প্রয়োজন হয় এবং কাপড় থেকে অধিক পানিও বের করে, শুকানোর সময়ও কম লাগে। আপনি যদি কাপড় শুকানোর ড্রায়ার ব্যবহার করেন তাহলে এটি টাকার জন্যও সাশ্রয়ী হবে।, এবং স্বাভাবিকভাবেও খুব উপকারী হবে।
আপনার জায়গা:
আপনার কতগুলো রুম আছে? মেশিনটি কোথায় রাখবেন? আপনার দরজাটি খুলতে অথবা বন্ধ করতে কতটুকু জায়গার প্রয়োজন, মেশিনটিকে লোড ও আনলোড করুন, ভেজা কাপড় ভর্তি একটি বালতি নিয়ে চলাফেরা করে দেখুন, এবং লন্ড্রির খালি জায়গার কাছে এটিকে খুলুন ও বন্ধ করুন। প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রিসিটি, পানি ও গ্যাস পয়েন্ট কি সহজে প্রবেশ করতে পারে নাকি আদৌ নয়? মাপার জন্য ফিতা আনুন, মাপগুলো একটি নোটবুকে লিখুন (আপনার বর্তমান মেশিনের মাপ সহ।) এবং আপনি যখন কেনার জন্য দোকানে যাবেন তখন এগুলোকে সাথে করে নিয়ে যান।
শব্দ:
ফ্রন্ট লোডারের সাধারণত টপ লোডার অপেক্ষা উচ্চতর ঘূর্ণন প্রক্রিয়া থাকে, কারণ এরা দ্রুততর ঘূর্ণন গতি সম্পন্ন হয়ে থাকে। আপনার লন্ড্রি যদি আপনার থাকার জায়গার কাছাকাছি হয় তাহলে একটি শব্দকারী মেশিন বড় ব্যাপার হতে পারে, তাই আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটি বিবেচনা করুন।
গরম ও ঠান্ডা পানির সংযোগ:
কিছু মেশিনকে সঠিকভাবে চালনা করতে ঠান্ডা ও গরম দুই ধরনের পানিরই প্রয়োজন হয়, অথবা আপনি যদি ঠান্ডা পানির সাথে গরম পানি মেশানোর ব্যবস্থা করতে চান তাহলে, একটি বিশেষ কানেক্টর অথবা সিলিং ক্যাপের প্রয়োজন হতে পারে। আপনি যদি শুধুমাত্র ঠান্ডা পানি মিশাতে চান তাহলে হিটার সম্পন্ন মেশিন ( শুধুমাত্র ফ্রন্ট লোডার।) আপনার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন হবে।
দ্বৈত সংযোগের মডেলের জন্য অনেক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্টান সর্বোচ্চ গরম পানি ডেলিভারি পদ্ধতির চেয়ে সর্বাপেক্ষা নিচু তাপমাত্রা পদ্ধতির সুপারিশ করে- বিশেষত গরম পানির সোলার সিস্টেম। গরম পানির কারণে দাগের সৃষ্টি হয়, তাই ঠান্ডা পানি ভর্তি করার পর তা ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় গরম হলে তা দাগ উঠা থেকে বিরত রাখে। কিন্তু যদি একটি দ্বৈত সংযোগের ওয়াশার ভালভাবে ডিজাইন করা হয়, এটি প্রথমে ঠান্ডা থাকে তারপর গরম পানি যোগ করে।
ওয়াশিং মেশিনের চাইল্ড-লক:
কিছু মেশিনে চাইল্ড-লক ফাংশন থাকে- এটি হয় ওয়াশারের দরজাতে থাকে যা কার্য চলাকালীন সময়ের মাঝখানে ওপেন করা যায়, অন্যথায় এমন প্রোগ্রাম থাকে যা কার্যক্রম চলাকালীন সময় কখনও বদলানো যায় না। যে বাড়িতে বাচ্চা আছে সেই বাড়িতে ওয়াশার যখন ব্যবহৃত হয় না তখন দরজার লক চালু করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও মাঝে মাঝে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়াশারের প্রান্তগুলোতে ময়লা পড়ার কারণে ফ্রন্ট লোডারের সামান্যতম অংশ খুলে রাখার সুপারিশ করে। আপনি যদি কৌতূহলী বাচ্চাদের ওয়াশার নিয়ে খেলার বিষয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই লন্ড্রীর জন্য একটি বাচ্চাদের নিরাপত্তামূলক গেট ব্যবহার করতে হবে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।