নিলামে ওঠা গাড়িগুলো জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এসব গাড়ির বয়স ১১ থেকে ২৩ বছর। যুক্তরাজ্যের তৈরি বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের বিলাসবহুল গাড়ি ল্যান্ড রোভার। এই ব্র্যান্ডের কালো রঙের রেঞ্জ রোভার স্পোর্টস ভি৮ মডেলের গাড়ি বিক্রির জন্য ২০১৬ সালে নিলামে তুলেছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নিলামে প্রায় ১২ বছরের পুরোনো ৪৩৯৪ সিসির এই গাড়ির জন্য ১ কোটি ১১ লাখ টাকার সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করেছিল চট্টগ্রামের পিএইচপি গ্রুপ। কিন্তু ওই দরে বিক্রি না করে ২০১৭ সালে আবার নিলামে তোলা হয়। সেবার কোনো ক্রেতা ছিল না এই গাড়ির। এবার নিলামে এই গাড়ির সর্বোচ্চ দর পড়েছে ২১ লাখ ৫ হাজার টাকা।
২১ লাখ টাকায় হলেও নিলামে এই গাড়ি ক্রেতা পাওয়া গেছে, কিন্তু একই ব্র্যান্ডের ৪১৯৭ সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির আরেকটি গাড়ির কোনো ক্রেতা খুঁজে পায়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অথচ প্রথম দফায় ৯০ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা দর পড়েছিল গাড়িটির।
এই দুটো গাড়ির মতো এবার ১১১টি গাড়ি তৃতীয় দফায় নিলামে তোলা হয়েছিল। গত ২৯ ও ৩০ মে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। গত সোমবার নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে কাস্টম। তাতে দেখা যায়, আগের তুলনায় এবার নিলামে খুব বেশি সাড়া পড়েনি। বেশির ভাগ গাড়ির দরও কম পড়েছে আগের তুলনায়।
দুই বছর আগের নিলামে রেঞ্জ রোভার ব্র্যান্ডের একটি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছিলেন আর অ্যান্ড এইচ সিন্ডিকেটের কর্ণধার মো. ইকবাল হোসেন। দুই দফায় নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও গাড়ি না পেয়ে এবার নিলামেই অংশ নেননি তিনি। তিনি প্রথম, দুই দফায় একটি গাড়িও বিক্রি করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন কনটেইনারের ভেতরে পড়ে থাকা এসব গাড়ি আগের মতো ভালো অবস্থায় নেই। ফলে অনেকেই আগ্রহ দেখায়নি।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকেরা কারনেট বা পর্যটন সুবিধায় ছয়-সাত বছর আগে এসব বিলাসবহুল গাড়ি এনেছিলেন। কিন্তু ওই সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানিকারকেরা গাড়িগুলো বন্দরে ফেলে রেখে সটকে পড়েন। তাই এসব গাড়ি বিক্রির জন্য বারবার এ নিলাম আয়োজন হচ্ছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এবার ১১১টি গাড়ি নিলামে তোলা হলেও ৪৫টি গাড়ি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দরদাতারা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, যা আগের নিলামের চেয়ে কম। আবার এই ৪৫ গাড়ির মধ্যে ২৫টিতে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন দুজন। এর আগে ২০১৬ সালে ৫৬টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয় ২৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে ৯৩টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
জানতে চাইলে কাস্টমসের নিলাম শাখার উপকমিশনার তপন চন্দ্র দে বলেন, নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে নিলাম কমিটি ঠিক করবে, কোনটি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হবে আর কোনটি দেওয়া হবে না। যেসব গাড়ি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হবে না সেগুলো আবার নিলামে তুলে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হবে। নিয়মিত নিলামে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী সৈয়দ জহিরুল ইসলাম বলেন, বারবার নিলামে তুলে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাড়ি বিক্রি না করায় এবার সাড়া পড়েছে কম।
কোন গাড়ির কত দাম:
নিলামে সর্বোচ্চ দরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিলামে সবচেয়ে বেশি দর উঠেছে বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের এক্স৫ স্পোর্টস মডেলের একটি গাড়ির। এই গাড়ির জন্য ৭০ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন এক ব্যক্তি। এই ব্র্যান্ডের ১১টি গাড়ির দর পড়েছে ৬ লাখ থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে কম দর দিয়ে ভক্সওয়াগন ব্র্যান্ডের একটি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে মেসার্স এল আর সুমন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই গাড়ির সর্বোচ্চ দর পড়েছে দেড় লাখ টাকা।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ফোর্ড ব্র্যান্ডের তিনটি গাড়ির দর পড়েছে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্যের তৈরি জাগুয়ার ব্র্যান্ডের তিনটি গাড়ির দর পড়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্র্যান্ডের তিনটি গাড়ির দর পড়েছে ২১ লাখ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্যের ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডের দুটি গাড়ির দর পড়েছে ১৯ লাখ থেকে ২১ লাখ টাকা। জাপানের লেক্সাস ব্র্যান্ডের পাঁচটি গাড়ির দর পড়েছে সাড়ে ৬ লাখ থেকে ৩৬ লাখ টাকা। জার্মানির মার্সিডিজ বেঞ্জ ব্র্যান্ডের নয়টি গাড়ির দর ২ লাখ থেকে ৩৬ লাখ টাকা। জাপানের মিতসুবিশি সোগান ব্র্যান্ডের ছয়টি গাড়ি ৭ থেকে ২৬ লাখ টাকায় কেনার দর দিয়েছেন ক্রেতারা।
এসব গাড়ি জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এসব গাড়ির বয়স ১১ থেকে ২৩ বছর। গাড়িগুলো পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মধ্যে পড়ে আছে।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।