কৌতূহলপ্রিয়তার কারণে মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে গড়ে তুলেছে আধুনিক সমাজ। বহু ত্যাগ, ধৈর্য আর শ্রমসাধনার সমন্বিত ফসল আজকের এ যুগোপযোগী সমাজকাঠামো। এ সভ্যতা গড়ার মূল হাতিয়ার বাহ্যিক দিক থেকে মানুষের মানসিক ও কায়িক শ্রমের সংমিশ্রণ হলেও এর গহিনে গ্রথিত মূলত মানুষের সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণ, তা থেকে নিজেকে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করার অদম্য ইচ্ছা। বাহ্যিক খোলসে কোনো সভ্যতা বিনির্মাণে মানুষের শ্রমের প্রাধান্য থাকলেও ভেতরের মূল কারিগর হলো তার ইচ্ছাশক্তি। এ ইচ্ছাশক্তিকে ভেতর থেকে অবিরাম তাড়িত করে শিক্ষা, শিখন ও প্রশিক্ষণ।
বিজ্ঞরা তাই বলেন, ‘মানুষকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার প্রক্রিয়ার প্রবাহমান ধারাকে বেগবান করার অত্যাবশ্যকীয় বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত কৌশল হলো প্রশিক্ষণ।’ কেউ বলেন, ‘প্রশিক্ষণ কোনো সমাজ ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া নির্দিষ্ট শ্রেণী, পেশা বা গোষ্ঠীর কোনো বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান-বুদ্ধি, মনোগঠিত পরিবর্তন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনমান পরিবর্তনে নিয়ামকস্বরূপ।’ আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিরাজিত সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশিক্ষণ আজ এ দেশের বেকারত্ব দূরীকরণেও হতে পারে একটি কার্যকর মহৌষধ। এ প্রশিক্ষণ যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে মানুষের অগ্রযাত্রা হয় কচ্ছপের মতো ধীরগতি সম্পন্ন। ‘প্রশিক্ষণ কেন ব্যর্থ হয়’ একজন পেশাগত প্রশিক্ষক হিসেবে প্রায়ই এ প্রশ্নটি; আমাকে তাড়িত করে।
সময়ের বিবর্তনে প্রশিক্ষণ আজ শুধু প্রশিক্ষণার্থীর জ্ঞান বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি আর মনোবৃত্তি পরিবর্তনের বিশেষ কোনো প্রক্রিয়া নয়; প্রশিক্ষণ আজ মানবসম্পদ উন্নয়নের উন্নততর প্রযুক্তি। যে প্রযুক্তির উত্কর্ষতা সাধন এবং যথাযথ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে দেশের অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে রূপান্তর করা যায় দক্ষ মানবসম্পদে। কারণ প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের মনোভাব, দক্ষতা, জ্ঞান অর্থাৎ এ তিনটি বিষয়ের গঠনমূলক বা ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করা যায়। যে কারণে প্রশিক্ষণকে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ‘বিশেষ প্রক্রিয়া’ বলা হয়। তাই তো ধারণা করা হয়, প্রস্তর যুগ কিংবা তারও আগে মানুষ যখন অগ্রসরমান সিঁড়িতে পা রেখেছে, তখন থেকেই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রয়োজন দক্ষ জনবল। আর এ দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রয়োজনমাফিক প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এ প্রশিক্ষণ ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনমাফিক পরিবর্তনে বিপর্যয় ঘটে, যার প্রভাব প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করে নীরবে নিভৃতে।
প্রশিক্ষণ ব্যর্থতার কারণ: ‘প্রশিক্ষণ ব্যর্থতার কারণ’ নেহাত কোনো প্রপঞ্চ নয়, যা তার দায়ভার এককভাবে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বহন করবে; বরং তার দায়ভারের ব্যাপ্তি আরো ব্যাপক। আমরা জানি প্রশিক্ষণ হলো বিজ্ঞান ও কলার সমন্বয়ে গঠিত একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া; যে প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকেন একজন প্রশিক্ষক। প্রশিক্ষণের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে একজন প্রশিক্ষকের ওপর। প্রশিক্ষণ শাস্ত্রে প্রশিক্ষককে বলা হয় অংশগ্রহণকারীর চিন্তাশক্তির গভীরতা ও প্রসারতা আর দক্ষতা বৃদ্ধির নিভৃত কারিগর কিংবা পরিবর্তনের নীরব সহযোগী।
যে কোনো প্রশিক্ষণ প্রশিক্ষকের ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে এক নিপুণ শিল্প। তাই বলা হয়ে থাকে, প্রশিক্ষকের ভেতর যদি শিল্পবোধ না থাকে, তাহলে তার সৃষ্ট কর্মের মধ্যেও শিল্পবোধের প্রতিফলন ঘটে না। এ শিল্পবোধ জাগ্রত করার জন্য একজন প্রশিক্ষককে গ্রহণ করতে হয় পঞ্চ বটিকা; যথা পড়া, চর্চা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক গবেষণা ও সৃজনশীল লিখন। আমার প্রশিক্ষণ গুরু ড. গোলাম সামদানী ফকির প্রায়ই বলতেন, ‘তুমি যদি কাউকে এক ছটাক জ্ঞান দিতে চাও, তাহলে তোমার সেই বিষয়ে থাকতে হবে এক সের জ্ঞান।’ এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, আমরা যারা নিজেকে প্রশিক্ষক বলে দাবি করি, আমাদের সেই বিষয়ভিত্তিক এক সের জ্ঞান আছে কিনা এবং জ্ঞানার্জনের প্রথম ধাপ হলো বই পড়া।
আমি প্রায়ই ‘প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ’ ক্লাসে প্রশিক্ষণার্থীদের জিজ্ঞেস করি আপনারা বিগত এক মাসে ক’টি বই পড়েছেন? প্রত্যুত্তর আমাকে প্রায়ই আশাহত করে। সাধারণত তারা দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন কিংবা সাধারণ কোনো বইয়ের কথা বলে। আমি তাদের কী করে বোঝাই এগুলো পাঠে তথ্যসমৃদ্ধ হওয়া গেলেও মেধাকে শানিত করা কিংবা সৃজনশীল করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন এগুলোর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক বই, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বহির্বিশ্ব, রসবোধ জাগ্রত, প্রশিক্ষণ এবং আইকিউ সম্পর্কিত বই পড়া। তাহলেই কেবল তথ্য ও মেধার সংমিশ্রণ ঘটবে সহজে। এজন্য বিজ্ঞরা বলেন, একটি দক্ষ প্রশিক্ষক শ্রেণী বা কোনো প্রতিষ্ঠানে সফল প্রশিক্ষণ বিভাগ গড়ে তোলার অনেকগুলো পূর্বশর্তের অন্যতম একটি হলো একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে তোলা।
অতঃপর কোনো পঠিত বিষয় বোধগম্য, অভ্যাসগত কিংবা হূদয়ে চিরস্থায়ী করার প্রয়াসে প্রশিক্ষকদের মাঝে অর্জিত জ্ঞানের নিয়মিত অনুশীলন বা চর্চা। এ চর্চার আছে বহুবিধ উপায়। তার মধ্যে ১. প্রাত্যহিক সকালবেলা কমপক্ষে ৩০ মিনিট সব প্রশিক্ষক একসঙ্গে বসে তথ্যভিত্তিক কোনো শিখন শেয়ারিং করা। ২. সপ্তাহে একদিন পঠিত বইয়ের মূল শিখন সবার সামনে উপস্থাপন এবং মাসে কমপক্ষে একটি বই পড়া ও মূল শিখনগুলো এক পৃষ্ঠায় লিখে সবার মাঝে বিতরণ করা। ৩. প্রতি সপ্তাহে একদিন স্টাডি সার্কেল করা। ৪. মাসে একদিন প্রশিক্ষণ ডে পালন; যেখানে ব্যক্তিগত উপস্থাপনা, বুক ব্রাউজিং, প্রশিক্ষণ মেথডস, গেমস, কৌশল, সাম্প্রতিক তথ্যাবলি উপস্থাপন, বিগত দিনে প্রশিক্ষণ ক্লাসের কোনো ধরনের সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা, কোনো নতুন বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন এবং পরবর্তী মাসের কর্মপরিকল্পনা শেয়ারিং করা যেতে পারে। ৫. বছরে কমপক্ষে দুবার ছয় মাস অন্তর কর্মশালার আয়োজন করা; যেখানে একজন রিসোর্স পারসন থাকবেন, যিনি হবেন প্রশিক্ষণ বা বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ। এতে করে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষকদের জ্ঞানের পরিধি যেমন বাড়বে, তেমনি উপস্থাপন কৌশলেও নতুনত্ব আনতে পারবেন। তার সঙ্গে প্রয়োজন হবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ।
মনে রাখতে হবে, যে প্রশিক্ষক নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ পান না বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চান না, সে প্রশিক্ষণ মজার করতে পারলেও কার্যকর করতে পারেন না। আর প্রয়োজন প্রতিষ্ঠান কিংবা নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ বিষয়ক গবেষণা ও সৃজনশীল লিখন কর্মযজ্ঞ। প্রশিক্ষণ বিষয়ক নতুন নতুন ধারণার অঙ্কুর গজাবে এ প্রশিক্ষণ গবেষণার মাধ্যমে। সঙ্গে থাকতে হবে একজন প্রশিক্ষকের লিখন প্রতিভা। একজন প্রশিক্ষকের পরিপূর্ণতা মাপার ব্যারোমিটারের স্কেল হলো তিনটি— যথা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, উপস্থাপন কৌশল ও লিখন প্রতিভা। প্রশিক্ষণ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে দৌড়াতে পারে, সে হাঁটতে পারে কিনা, সে প্রশ্ন যেমন অবান্তর, ঠিক তেমনি যে প্রশিক্ষক সৃজনশীল লিখন লিখতে পারেন, তার প্রশিক্ষণের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন করাও অনেকাংশে অবান্তর।’ সুতরাং একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের লিখনগুণ তার স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করে তা আজ হলফ করে বলা যায়। সেই কবে রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন, ‘তুমি যে পথ দিয়ে যাবে সে পথে একটি আঁচড় দিয়ে যাবে, যাতে তোমার অনুপস্থিতিতে সেই আঁচড় তোমার উপস্থিতি জাগিয়ে তোলে।’ এ বহুবিধ চর্চায় একজন প্রশিক্ষক হয়ে ওঠেন ফলদ গাছের মতো পরিপূর্ণ এবং আঁচড় কাটতে পারেন প্রশিক্ষণার্থীর হূদয়ে, প্রতিফলিত হন তাদের কর্মে এমনকি তাদের আদর্শিক দিক থেকেও। কোনো প্রশিক্ষণ ব্যর্থ হলে তার দায়ভার প্রশিক্ষককে নিতে হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন সঠিক না হলেও প্রশিক্ষণ ব্যর্থ হতে পারে। আমরা জানি শিক্ষার্থীর শিখন ক্ষেত্র হলো তিনটি। যেমন ১. কগনেটিভ ডোমেইন: জ্ঞানমূলক। যেসব শিখন জ্ঞান বা চিন্তার ভিত্তিতে হয়, সেসব শিখনকে জ্ঞানমূলক শিখন বলে। লেখক বেঞ্জামিন ব্লুম জ্ঞানমূলক শিখন ক্ষেত্রকে ছয় ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন জ্ঞান, অনুধাবন বা উপলব্ধি, প্রয়োগ, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন। তাই জ্ঞানমূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের কোনো বিষয় অনুধাবন করে ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার ইচ্ছা বা সুযোগের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে দুটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে কোনো নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিতকরণ, বিষয়ভিত্তিক বা ব্যবস্থাপকীয় প্রশিক্ষণ।
২. সাইকোমটর ডোমেইন: মনোবৃত্তিমূলক। যেসব শিখন মনোগঠিত বা মনোপরিবর্তন বিষয়ক, সেসব শিখনের ক্ষেত্রকে মনোবৃত্তিমূলক শিখন ক্ষেত্র বলা হয়। যখন কোনো প্রশিক্ষণের বিষয় হবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, মূল্যবোধ, আগ্রহ ও যথাযথ গুণ বিচারক ক্ষমতার পরিবর্তন নিয়ে কাজ; তখন সে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করা।
৩. এফেকটিভ ডোমেইন: দক্ষতামূলক ক্ষেত্র, যেটাকে বেঞ্জামিন ব্লুম বলেছেন, যেসব প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য করতে পারা এবং যেটা দৈহিক ও মোটর দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে, সেসব প্রশিক্ষণ এই ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত। তাই প্রশিক্ষণ আয়োজনকারীদের জেনে নিতে হবে প্রশিক্ষণের মূল বিষয়বস্তু কোন ক্ষেত্রমূলক এবং তা অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী বাছাই করা। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের সঙ্গে বিষয়ের সম্পর্ক, বোঝার ক্ষমতা, আচরণগত দিক, পারিবারিক গভীর কোনো সমস্যা থাকলে তা বিবেচনায় নেয়া, তার আগ্রহের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন করলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাই বলা হয়, কোনো প্রশিক্ষণ ব্যর্থতার দায়ভার প্রশিক্ষণার্থীকেও নিতে হয়।
পেশাগত কারণে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতে আমাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই যেতে হয়, কথা বলতে হয় প্রশিক্ষণ আয়োজনকারীদের সঙ্গে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, প্রশিক্ষণ আয়োজনকারীরা যতটা না তৎপর; প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু, প্রশিক্ষকের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান-গভীরতা, তার উপস্থাপনার প্রায়োগিক কৌশল ও দক্ষতা যাচাইয়ের ওপর তার চেয়ে ঢের মনোযোগী অনুমোদিত প্রশিক্ষণ বাজেট নিঃশেষ করার প্রতি। বাজেটের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান থাকে বহুমাত্রিক জটিলতা। জটিলতার মূল কারণ পেশাদার কোনো প্রশিক্ষক নন, অন্য কোনো অপেশাদার কর্তৃক প্রশিক্ষণ বাজেট প্রণয়ন কিংবা মূল প্রকল্প প্রস্তাবনা উন্নয়নের সময় গতানুগতিক ধারায় বাজেট সংযোজন। যে কারণে বাজেট কখনো মাত্রাতিরিক্ত আবার কখনো কম হয়ে থাকে।
অপেশাদারি বাজেট প্রণয়নকারী অধিকাংশ সময় যে বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, সে বিষয়টির ওপর স্পষ্ট ধারণা রাখেন না বা কোনো অংশে রাখলেও বৃত্তাবদ্ধ ধারণা পোষণ করেন। দেখা যায়, তারা মূল বিষয় কয়টি হবে, শিখন ইউনিটভিত্তিক কতগুলো উপবিষয় হবে, প্রকৃতপক্ষে কত দিনের প্রশিক্ষণ হওয়া উচিত, প্রশিক্ষণ শিখনবান্ধব ও কার্যকরণে উপকরণ ও এইড কী হবে, আউটডোর ও ইনডোর অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, ভিডিও ক্লিপিং কিংবা মাঠ পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এবং প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন না। যার ফল প্রশিক্ষণ বাজেটের এ হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
তবে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীর লেভেলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে; সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থী যদি হয় সমাজের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী, তখন আরো গুরুত্বসহকারে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়। প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত জ্ঞান বাস্তব ক্ষেত্রে কতটুকু কাজে লাগবে, তা নির্ভর করে বিদ্যমান কর্মপরিবেশ ও নিবিড় ফলোআপের ওপর। তাই প্রশিক্ষণ ব্যর্থ হলে চাহিদামাফিক কর্মপরিবেশ ও নিবিড় ফলোআপের অভাব অনেকাংশে দায়ী। তাই প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞরা মোটা দাগে ছয়টি বিষয়— যথা প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী, চাহিদামাফিক প্রশিক্ষণ বিষয়বস্তু, প্রশিক্ষণ পরিবেশ ও উপকরণ, প্রশিক্ষণ বাজেট এবং কর্মপরিবেশ ও প্রশিক্ষণ ফলোআপকে প্রশিক্ষণ ব্যর্থ হওয়ার পেছনে মূলত দায়ী বলে চিহূিত করেছেন।
লেখক: প্রশিক্ষণ ও প্রতিবন্ধিতা বিশ্লেষক।
তথ্যসূত্র: বনিক বার্তা ডটকম।