নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছা, ধৈর্য আর চেষ্টা থাকলে অনেকভাবেই আয় করা যায়। এমনই এক দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন সিরাজ নামের এক যুবক। কোয়েল পাখির খামার দিয়ে ডিম ও পাখি বিক্রি করে তিনি এলাকার বেকারদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। নিজেও হয়েছেন স্বাবলম্বী।টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বেগম দুল্ল্যা গ্রামের ছেলে সিরাজ মাহমুদ। বাড়ির আঙিনায় পা রাখতেই দেখা গেল তাঁর হাতে গড়া কোয়েলের তিনটি খামার। বাড়ির পাশে নিজেদের জমিতে ঘর তৈরি করে তার চারপাশে নেট দিয়ে তৈরি করেছেন কোয়েলের খামার। খামারের পাশেই ছোট এক ঘরে বসে কোয়েল চাষের নানা বিষয়ে কথা হলো সিরাজের সঙ্গে।
সিরাজ বলেন, ২০০০ সালে স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে তিনি। তখন তাঁর বাবা ও ভাই সিঙ্গাপুরে থাকতেন। দেশে মা ছাড়া তেমন কোনো অভিভাবক না থাকায় তাঁর আর বেশি দূর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। এরপর বাবার মাধ্যমে একই বছর তিনিও সিঙ্গাপুরে চলে যান। সেখানেই কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় চার বছর প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফেরেন। বিদেশ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশেই বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু তাতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বেকার হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় দফায় আবারও বিদেশে যাওয়ার জন্য এক দালালের মাধ্যমে আর্থিকভাবে প্রতারিত হন। কিন্তু দমে যাননি। পরিবারে সদস্যদের হাতের দিকে না তাকিয়ে নিজে কিছু করার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
দুই বছর আগে একজনের কাছ থেকে কোয়েল পাখির চাষ বিষয়ে জানতে পারেন। সেখান থেকে শুরু হলো তাঁর কোয়েল পোষার ইচ্ছা। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নয়, কয়েকজন কোয়েল খামারির সঙ্গে ১৫ দিন থেকে ১ মাস কাজ শিখে তিনি নিজেই খামার দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সবার অমতেই স্থানীয় এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কোয়েল পালন শুরু করেন। প্রথম দিকে ১ দিনের ১৩০০ কোয়েলের বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন। প্রতিটি কোয়েলের বাচ্চা সাড়ে সাত টাকা দিয়ে কেনেন।
১ মাস পালনের পর সেই বাচ্চাগুলো ২৭ টাকা দরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। সিরাজ বলেন, প্রথম মাসে খরচ বাদে তাঁর লাভ হয়েছিল ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এভাবে আস্তে আস্তে তাঁর খামারের বিস্তার বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাঁর খামারে কয়েক হাজার কোয়েল আছে। এর মধ্যে পুরুষ কোয়েলগুলো তিনি বিক্রি করে দেন। এরপর কোয়েলের পাশাপাশি ডিম বিক্রিও শুরু হয়। একটি স্ত্রী কোয়েল ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ডিম পাড়া শুরু করে। এরা ১৮ মাস পর্যন্ত ডিম দেয়।
সিরাজ বলেন, ‘এখন আমি প্রতিদিন গড়ে ২৬০০ থেকে ২৭০০ ডিম পাই। শীতের সময় ডিমের চাহিদা বেশি থাকে। এসব ডিম প্রতিদিনই কয়েকজন হকার বাড়ি থেকে নিয়ে যান। প্রতি হালি ডিমের দাম রাখা হয় ৮ টাকা।’ এ ছাড়া স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের কাছেও তিনি ডিম বিক্রি করেন। পাইকারদের কাছে ১ হাজার ডিম ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি করেন।
সিরাজ জানান, সব মিলিয়ে খরচ বাদে এখন প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেন। তাঁর কাজে স্ত্রী ও বাবা-মা সহযোগিতা করেন। তবে নিজের খামারেই যদি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়, এতে আরও লাভ হবে বলে জানান তিনি। আধুনিক যন্ত্র এনে তাঁর খামারেই একদিন ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোসহ খামার প্রসারে সামনে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বললেন সিরাজ।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ডটকম।