দেশে আরেক দফা বাড়ছে গ্যাসের দাম। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যেদিন থেকে সরবরাহ শুরু হবে, সেদিন থেকে নতুন দরে গ্যাস কিনতে হবে শিল্পকারখানার মালিকদের। নতুন দর এখনকার চেয়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি হতে পারে। এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে ১৫ মের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম চেম্বারের এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়েছেন।
সরকার কাতার থেকে জাহাজে করে এলএনজি এনে কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে চায়, যা যুক্ত হবে জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থায়। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বর্তমানে শিল্পকারখানায় ৭ টাকা ৭৬ পয়সা দরে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করা হয়। এটা যেমন বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যিক এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়।
এলএনজি আমদানি হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। এতে শিল্পকারখানায় সংযোগ দিতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ওই অঞ্চলের ২৬৫ শিল্পকারখানাকে ডিমান্ড নোট (চাহিদাপত্র) দিয়েছে বলে সংস্থাটির দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন। এ চাহিদাপত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর ধরা হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। এর মধ্যে কিছু নতুন কারখানাও রয়েছে। একইভাবে কিছু পুরোনো কারখানা সম্প্রসারিত অংশে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তারা।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ এলএনজি সরবরাহের দিন থেকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামের শিল্পকারখানাগুলোর চাহিদাপত্রে উল্লেখ করা দর থেকে গ্যাসের দাম সামান্য কম হতে পারে। আমদানি করা গ্যাস মুনাফা ছাড়া বিক্রি করা হবে। দেশের শিল্পকারখানা বিকাশের স্বার্থে পেট্রোবাংলা এ ক্ষেত্রে কোনো মুনাফা করবে না। শুধু খরচ তুলে নেবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, শুধু শিল্পকারখানা নয়, অন্যান্য শ্রেণির ব্যবহারকারীর গ্যাসের দর আনুপাতিক হারে বাড়বে। দর চূড়ান্ত করতে বিশ্লেষণ চলছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এখন দেশে দৈনিক গড়ে ২৬৭ কোটি থেকে ২৬৮ দশমিক ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়। এ গ্যাসের ৩০ শতাংশ ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। শিল্পকারখানায় গ্যাসের ব্যবহার মোট সরবরাহের প্রায় ১৬ শতাংশ। সার কারখানায় মোট গ্যাসের ৫ শতাংশ ব্যবহার করা হয়।
বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম হিসেবে পেট্রোবাংলাকে দেয় ৩ টাকা ১৬ পয়সা। সবচেয়ে কম দরে গ্যাস পাচ্ছে সার কারখানাগুলো। এই শিল্পে প্রতি ঘনমিটারের দর ২ টাকা ৭১ পয়সা। এ ছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে (শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র) প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৬২ পয়সা, চা-বাগানে ৭ টাকা ৪২ পয়সা, বাণিজ্যিক (রেস্তোরাঁ ও বেকারি) ১৭ টাকা ৪ পয়সা এবং আবাসিকে (গৃহস্থালি কাজ) ৯ টাকা ১০ পয়সা দরে গ্যাস দেওয়া হয়। গ্যাসের দর সবচেয়ে বেশি পরিবহন খাতে। সিএনজি ফিলিংস্টেশন প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কেনে ৩২ টাকায়। আর ভোক্তারা ফিলিংস্টেশন থেকে গ্যাস কেনে ৪০ টাকা দরে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, গ্যাসসংকটের কারণে চট্টগ্রামের অনেক শিল্পকারখানা রুগ্ণ হয়ে যাচ্ছিল। চট্টগ্রামের শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায় বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানান। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার সেই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেবে।
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, চট্টগ্রামের কারখানায় দর দ্বিগুণ হলে সারা দেশে গ্যাসের একই দর নির্ধারণ করতে হবে। এতে শিল্পপণ্যের দাম বাড়বে। তবে একই দরে গ্যাস দিলে শিল্পকারখানাগুলোকে অসম প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে না।
প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলীকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস (-) ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসই হচ্ছে এলএনজি। দেশে গ্যাসের মজুত কমে আসায় বিকল্প হিসেবে কাতার থেকে গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এলএনজি মহেশখালী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আনোয়ারা হয়ে সীতাকুণ্ডের গ্রিডে যুক্ত হবে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ডটকম।