আমাদের অনেকেরই লক্ষ লেখাপড়া শেষ করে একটা ভাল চাকুরী করতে হবে। দিন রাত পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরী করছেন কিভাবে চাকুরীর প্রতিযোগীতায় এগিয়ে রাখা যায়। আবার এই প্রতিযোগীতার বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কখনও কখনও অর্থের লেনদেনও করছেন অনৈতিক উপায়ে। কিন্তু যে লেখাপড়া আপনাকে শিক্ষা দিয়েছে সৎ উপায়ে চলতে সেই লেখাপড়ার কতটুকু কাজে লাগিয়ে নিজের চরিত্র গঠন করতে পেরেছেন?
আমাদের বাবা-মায়ের অনেক আশা সন্তান লেখাপড়া শেষ করে বড় একটা চাকুরী করবে। সংসারের জন্য একটা সম্পদ হবে। কষ্টের দিন গুলোর ইতি টানবে। সেই বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে যে ছেলেটি একটা চাকুরীর সন্ধানে প্রতিনিয়ত দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে সেই ভাল জানে সাগরে নেমে সে কি খুঁজছে। সোনার হরিন নয় সোনার হাতি বধ করা কি এত সহজ? যেখানে দেশে বিশ লক্ষের বেশী বেকার দ্বারে দ্বারে টাক খেয়ে বেড়াচ্ছে হতাশা নিয়ে।
চাকর যার শ্রুতিমধুর উচ্চারন চাকুরী। বৃটিশ আমাদেরকে যখন শাসন করেছে তখনই আমাদের মনে খুব ভালভাবে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে চাকুরী মানেই নিরাপত্তা। চাকুরী মনেই সম্মান। চাকুরী মানেই নিশ্চিত আয়। আর সেই সময়ে আমাদেরকে ব্যবহার করে বৃটিশ তার ব্যবসায়ের রাজত্ব আর প্রভাব বিস্তার করেছে। আমাদের সমৃদ্ধ মসলিন শিল্পকে ধ্বংস করে নীল চাষে বাধ্য করেছে। দাসত্ব কিভাবে অর্জন করতে হয় প্রতিযোগীতা করে তাও খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
নিজে কিছু একটা করব, উদ্যোক্তা হব, ব্যবসায়ী হব, সেরা ধনীদের একজন হব, সুপারম্যান হব, সুপার হিরো হব। ছোট বেলার এমন স্বপ্নগুলো কবে কবরে পাঠিয়েছেন বলতে পারবেন? ছোট বেলা ম্বপ্ন গুলো দেখেছেন ঠিকই কিন্তু লালন করতে পারেন নি। অনিশ্চয়তা দেখে ইদুরের গর্তে মুখ লুকিয়ে বলছেন চাকুরীই তো ভাল। মাস গেলেই বেতন। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য, নিজে কিছু করার জন্য চেষ্টা করেছেন বিফল হয়েছেন। আর ফিরে এসে সেই হাল ধরতে পারেন নি। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই চাকুরী নামক নিরাপত্তার খোঁজে। কখনওবা নিজেকে সপে দিয়েছেন মৃত্যুর মুখে কিংবা হারিয়েছেন শেষ সম্বল ভিটা মাটি টুকুও প্রতারণায় পড়ে।
ঝুঁকি নিতে চান না কেন? একটা ঝুঁকি নিয়ে যদি জীবনের স্বাদ গ্রহন করা যায়, স্বপ্নগুলোকে আলোর মুখ দেখানো যায়, দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে কিসের এত ভয়। রোম যেমন একদিনে তৈরী হয়নি সফলতাও একদিনে আসবে না এটুকু বুঝতে কেন এত অসুবিধা হয়? ধৈয্য ধরে লেগে থাকুন আপনার পছন্দের কাজ নিয়ে। শিক্ষাকে চাকুরী পাবার উপকরন হিসেবে না দেখে নিজেকে সমৃদ্ধ করার উপকরন হিসেবে গ্রহন করুন। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়তে আরও একবার ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করুন।
শিক্ষিত চাকর হওয়ার চেয়ে শিক্ষাকে নিজের কাজে লাগান। শিক্ষা যখন নিজের কাজে লাগাতে পারবেন তখন আপনি হবেন আপনার বস। আর কর্মসংস্থান হবে আপনার গড়া প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য মানুষের। আপনার ভেতরের ভীতি টাকে জয় করুন। যতক্ষন পর্যন্ত না অনিশ্চিয়তার মধ্যে নিশ্চয়তা খুজে নিতে না পারছেন ততক্ষন পর্যন্ত বড় কিছুর দেখা পাবেন না। বড় কিছু করতে গেলে স্রোতের বিপরীতে চলেই করতে হয়। শিক্ষালব্ধ জ্ঞানকে নিজের জন্য কাজে লাগান চাকুরীর প্রত্যাশায় জুতার তলা ক্ষয় না করে।
লেখক:
মোঃ মাসুদুর রহমান মাসুদ
উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম।