দেশের পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতের অবস্থান যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে দুটি খাত এখন পুরোপুরি বিপরীতে মেরুতে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাস জুলাই-জানুয়ারিতে ১ হাজার ৭৬৫ কোটি ৫১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে আলোচ্য ৭ মাসে দেশ থেকে ৭০ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।
অবশ্য চামড়ায় খারাপ করলেও হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, টেরি টাওয়েল, বাইসাইকেল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ২ হাজার ১৩২ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ২৩ শতাংশ কম হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের ২ হাজার ১ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ের মোট রপ্তানির ৮২ দশমিক ৭৬ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে। ১ হাজার ৭৬৫ কোটি ডলারের এই রপ্তানির মধ্যে ৮৯০ কোটি ডলার নিট পোশাকে ও ৮৭৫ কোটি ডলার আয় হয়েছে ওভেন পোশাকে। নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ওভেন পোশাকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম, পৌনে ৫ শতাংশ।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আগামী জুন পর্যন্ত ভালো ক্রয়াদেশ আছে। সে জন্য আমরা আশা করছি, চলতি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। তবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন ও নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মজুরি ঘোষণার কারণে আগামী অর্থবছর নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে।‘মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার কিছুটা অবমূল্যায়ন হয়েছে। তাতে গত দুই-তিন বছরের চেয়ে আমরা রপ্তানিতে কিছুটা প্রতিযোগীসক্ষম হয়েছি। সে জন্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
অন্যদিকে চামড়া খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস, অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে চলতি অর্থবছরে অনেক ক্রেতাই অন্যত্র ক্রয়াদেশ দিয়েছেন। তা ছাড়া উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংকট ও ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ঋণ না পাওয়ায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। তবে ক্রেতারা ফিরছেন এবং গতি ফিরতে শুরু করেছে।’
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ৬৬ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৩৫ কোটি ডলারর হিমায়িত খাদ্য ও মাছ, ৩৬ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য, ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ১৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ৩ কোটি ১৭ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ডটকম।