ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ার ভারত না চীন পাবে, এ সংক্রান্ত বিতর্কের অবসান ঘটেছে। অবশেষে ডিএসই’র ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পেয়েছে চীন। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সভায় চীনের কাছে শেয়ার বিক্রির বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে গত বিশেষ সাধারণ সভায় ডিএসইর সদস্যরা চীনের পক্ষে সর্বসম্মতি দিয়েছিল।
বিএসইসি’র অনুমোদনে বলা হয়, চীনের শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ডিএসই’র মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার বিক্রির চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ২১ টাকা। তিনটি শর্তে এই চুক্তি হবে। এক্ষেত্রে চুক্তির কার্যক্রম সিকিউরিটিজ আইন ও ২০১৩ সালের একচেঞ্জেস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের শর্ত অনুসারে হতে হবে। চুক্তির সইয়ের ১ বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া চুক্তির কোনও শর্ত পরিবর্তন করা যাবে না।
জানতে চাইলে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, ‘বিএসইসি থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। শিগগিরই চীনের সঙ্গে চুক্তি সই হবে। প্রাথমিকভাবে চুক্তির জন্য ১৪মে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর সময়ের ওপর নির্ভর করছে। তিনি দেশে এলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
জানতে চাইলে ডিএসই’র পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এই ঘটনা স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জের ইতিবাচক। আর ইতিবাচক বিষয়টি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে দেশের গণমাধ্যম।’
প্রসঙ্গত, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদাকরণ) শর্ত অনুসারে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি বাধ্যতামূলক। এ কারণে শেয়ার বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করে ডিএসই। এরপর চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে দুই কনসোর্টিয়াম আলাদাভাবে দরপত্রে অংশ নেয়। এক্ষেত্রে চীনের প্রতিষ্ঠান ডিএসই’র ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দরপ্রস্তাব করেছে ২২ টাকা (লভ্যাংশ সমন্বয়ের পর ২১ টাকা)। এতে ৪৫ কোটি শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৯৯০ টাকা।
এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি সহায়তার জন্য আরও ৩০৭ কোটি টাকা দেবে চীন। ফলে চীনা প্রতিষ্ঠানের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ টাকা। বিপরীতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রস্তাব করেছে ১৫ টাকা। এতে শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৬৭৫ কোটি টাকা। ফলে কারিগরি সহায়তাসহ চীনের সঙ্গে ভারতের মূল্যের পার্থক্য দাঁড়ায় ৬২৫ কোটি টাকা। তবে প্রভাবশালী একটি অংশ ভারতের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে চাপ দিয়েছিল। এক্ষেত্রে ভারতকে শেয়ার দেওয়ার ব্যাপারে কমিশনের দু-একজন সদস্যের অতি উৎসাহী তৎপরতা ছিল চোখের পড়ার মতো।
এনিয়ে অনেক ঘটনার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। আর এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইতে পাঠানো হয়। ওইদিনই ডিএসইর প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে কমিশন। এরপর ১৯ মার্চ ডিএসইর দেওয়া চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার প্রস্তাবের ব্যাপারে কিছু ব্যাখা চাওয়া হয়। এছাড়াও সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনের কথা বলা হয়েছিল। এ নিয়ে কয়েক দফা চিঠি চালাচালির পর বিএসইসি’র শর্তের অনুসারে ইজিএম করে সাধারণ সদস্যদের সম্মতির সিদ্ধান্ত নিলো ডিএসই। এই সিদ্ধান্তের লিখিত কপি পাওয়ার ২ দিনের মধ্যেই অনুমোদন দিলো বিএসইসি।
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।