অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকের আস্থা অর্জন করছে বলে দাবি করে আসছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ কোম্পানি। কোম্পানটিকে আন্তর্জাতিক মানের করতে এরইমধ্যে চীনের প্রতিষ্ঠান আলিবাবার বিনিয়োগও টেনেছে।
কিন্তু এই আস্থার মাঝে বড় ধরনের অনাস্থা তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি একের পর এক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেড় সপ্তাহ আগে দারাজের ওয়েবসাইট থেকে একটি মাউস কেনার অর্ডার দেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন শোভন।
তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে দেখানো ছিল দাম ৫৯৯ টাকা। ছাড়ের পর আসে ৩৯৯ টাকা। অর্থাৎ একটি মাউসেই কোম্পানিটি ২০০ টাকা ছাড় দিয়েছে। এক সপ্তাহ পর পণ্যটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠাওয়ের এক কর্মী নিয়ে আসেন।
‘তার সামনেই দারাজের প্যাকেট খুলে মাউস বুঝে পাই। পণ্য পেয়ে পাঠাওয়ের ওই কর্মীর কাছে রীতিমতো চার্জসহ (৩৯৯+৪৫) ৪৪৪ টাকা বুঝে দিই। কিন্তু ভিতরের প্যাকেট খোলার পরই দেখি, মূল দাম আরও ১০০ টাকা কম। লেখা এমআরপি ২৯৯ টাকা। মানে ৩০০ টাকা ছাড়!
সাজ্জাদ বলেন, আমি ৫৯৯ টাকার পণ্য কিনেছি। কিন্তু ডেলিভারির পর ২৯৯ টাকার পণ্য পেয়েছি। এটা কোনওভাবে হতে পারে না। দারাজের মতো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজ করতে পারে না।
‘অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি আমার আস্থা আছে। কিন্তু দারাজ আমার সঙ্গে বাটপারি করলো। আমি কেন? দারাজ কোনওভাবেই জনগণের সঙ্গে এমন প্রতারণা করতে পারে না। তারা এভাবে জনগণের আস্থা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমি এর বিচার চাই।’
দারাজের বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করেন সাজ্জাদ। তিনি বলেন, পণ্য পাওয়ার পর আমি বেশ কয়েকবার তাদের হটলাইনে ফোন দিই। কিন্তু তাতে প্রবেশ করানো সম্ভব হয়নি।
‘পরে দারাজের এক কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পণ্যের অর্ডার আইডি নিয়ে জানান টাকা ফেরত দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে দারাজের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ বলেন, আমরা অভিযোগটি আমলে নিয়েছি। পণ্যটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পরদিনই ভুক্তভোগির সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।
তবে ভুক্তভোগী সাজ্জাদ বলছেন, তারা আমার সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছে। জানিয়েছে টাকা ফেরত নেন, পণ্যও নেন।
শুধু সাজ্জাদ শোভন নয়, দারাজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগেও এসেছে। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভির স্টাফ রিপোর্টার হাসান মাহমুদ (সাইরাস মাহমুদ) নামের এক ভোক্তা কিছুদিন আগে দারাজের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন।
অভিযোগে তিনি বলেন, বিশেষ ছাড়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে দারাজ দেড় হাজার টাকার স্কাই শপের কোমরে বাঁধার বেল্ট ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এ বিজ্ঞাপন দেখে তিনি একটি বেল্টের অর্ডার করেন। কিন্তু দারাজ প্রতারণা করে স্কাই শপের বেল্ট না দিয়ে একটি দেশীয় বেল্ট পৌঁছে দেয়। যার মূল্য লেখা ছিল ৫০০ টাকা। অর্থাৎ দারাজ ৫০০ টাকার দেশি বেল্টকে বিদেশি ১৫০০ টাকার বলে বিক্রি করছে।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে শুনানি হয়। অভিযোগটির তথ্য প্রমাণ হয়। এতে দারাজের বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, এমআরপি নীতি এবং ওয়ারেন্টি পলিসি বাস্তবায়ন করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রতিপক্ষ নন। আমরা চাই, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভোক্তাদেরও স্বার্থ সংরক্ষিত হোক। কম্পিউটার ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পূর্ণ অধিকার বাস্তবায়িত হোক এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাসী। তার উপর যদি কোনও প্রতিষ্ঠান এমআরপি থেকে বিক্রয়মূল্য বেশি নিয়ে থাকে তাহলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইনগত ব্যবস্থা নিবে। তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইন।