1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

দিন দিন কমেছে সবজি রপ্তানি!

মানের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় ইউরোপে সবজি রপ্তানি এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যেও তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে পিছিয়ে পড়ছে। সে জন্য গত তিন অর্থবছর ধরে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে।

সবজি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি রপ্তানির ৬০ শতাংশের গন্তব্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। গত বছরের মার্চে মানের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কড়াকড়ি আরোপ করায় ইইউতে সবজি রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জুলাইয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

ইউরোপে সবজি রপ্তানিতে ধস নামায় মধ্যপ্রাচ্যই মূল বাজার হয়ে ওঠে। সেখানেও ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছে না বাংলাদেশ। কারণ, এই দেশগুলো কম খরচে উড়োজাহাজের পাশাপাশি জাহাজে মধ্যপ্রাচ্যে সবজি পাঠাচ্ছে। সে জন্য তাদের পণ্যের দাম কম পড়ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সবজি রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ কোটি ডলার। পরের অর্থবছরে সেটি নেমে আসে ১৪ কোটি ডলারে। আর গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ কম।

ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হওয়ায় ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে পান রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইইউ। এ ছাড়া পোকামাকড় ও রোগবালাই এবং অতিমাত্রায় কীটনাশক উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানির ওপর কয়েক বছর ধরে নন-কমপ্লায়েন্স নোটিফিকেশন জারি করেছে ইইউ।

ইইউ থেকে সতর্কতা জারি হওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় গত মার্চে মরিচ, বড়ই, করলা ও চিচিঙ্গা রপ্তানির ওপর সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তার কয়েক দিন পরই রপ্তানিকারকদের সবজি ও ফল রপ্তানিতে চুক্তিবদ্ধ চাষ পদ্ধতি (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) অনুসরণ করতে নির্দেশনা জারি করে বলা হয়, অন্যথায় ফাইটোস্যানেটারি সনদ (পিসি) দেওয়া হবে না।

মন্ত্রণালয়ের এই কড়াকড়ি আরোপের পর থেকেই ইউরোপের বাজারে সবজি রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, রপ্তানিকারকদের কেউই কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করেন না। এরপর নির্দেশনাটি শিথিল করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন সবজি রপ্তানিকারকেরা। জুলাইয়ে সেটি শিথিল করা হলেও সবজি রপ্তানির আগে তা পুরান ঢাকার শ্যামপুরে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে মোড়কজাত করা বাধ্যতামূলক করা হয়।

শ্যামপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশে ফাইটোস্যানিটারী সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের’ অধীনে ১ একরের একটি প্লটের ৬০ শতাংশ জমির ওপর সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসটি করা হয়। সেখানে তিনতলা ভবনের নিচতলায় সবজি ও ফলমূলের মান যাচাই-বাছাই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধোয়া ও শুকানো এবং মোড়কজাত করার জন্য আলাদা কক্ষ আছে। দোতলায় একই ব্যবস্থা আছে। দোতলায় পণ্যবাহী ট্রাক ওঠার জন্য আলাদা র‍্যাম্প করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সবজি ও ফলমূল সংরক্ষণের জন্য পাঁচটি কুলিং কক্ষ রয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ বলেন, শ্যামপুরের প্যাকেজিং হাউসটি তেমন একটা কাজে আসছে না। পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ হয়নি। তা ছাড়া শ্যামপুর থেকে বিমানবন্দরে যেতে যানজটের কারণে ৫-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। বিমানবন্দর এলাকায় একই সুবিধাসংবলিত আরেকটি প্যাকেজিং হাউস করা গেলে সুবিধা হয়।

রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়ে মনসুর আহমেদ বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে সবজি রপ্তানি করতে হলে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করতে হবে। সেটি করার মতো আর্থিক সক্ষমতা ব্যবসায়ীদের নেই। সে ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত সবজি রপ্তানির জন্য আলাদা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) করেছে। আমাদের এখানে কৃষি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করার জন্য বড়সড় জায়গা নির্বাচন করতে পারে। কৃষকেরা সেখানে চাষ করবেন। ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে নেবেন। সবজি রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন শতভাগ। তা ছাড়া কৃষকেরা ভালো দাম পান। তাই সরকারকে শিগগিরই সবজি রপ্তানি বাধা দূর করতে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ডটকম।

More News Of This Category