1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

পরিকল্পনায় ভুল, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে সহ বেশ কিছু প্রকল্প মাঝপথে বাতিল

সঠিক পরিকল্পনার অভাব বা বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা ছাড়া প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কারণে মাঝপথে বাতিল হচ্ছে প্রকল্প। অনেক সময় বারবার প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হচ্ছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থের অপচয় বাড়ছে বলে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ ধরনের কিছু প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ‘কৃষিভিত্তিক পণ্যে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নামে এসব প্রকল্পে ৭১ শতাংশ অর্থ খরচ করার পর প্রকল্পের কাজ হয় মাত্র ৭ শতাংশ। ২২৮ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১৩ সাল। খরচ হয়েছে ১৬২ কোটি টাকা। যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তা অর্জনের আর কোনো সম্ভাবনা না থাকায় গত অর্থবছরে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।

অন্যদিকে সরকারি শিশু পরিবারের জন্য হোস্টেল ভবন নির্মাণ প্রকল্পেরও একই অবস্থা। ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে পাঁচ বছরে খরচ হয়েছে নয় কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০ শতাংশ অর্থ খরচ হচ্ছে করে এর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ। এ প্রকল্পও বাতিল হয়েছে।

মাদারীপুরের শিবচরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহরতলি উন্নয়নে জরিপ প্রকল্প এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প দুই বছর পর বাতিল হয়েছে। এসব প্রকল্পে কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি। একইভাবে গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করেই বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ।

এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রকল্পের বাকি কাজ মূল রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এক লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের বরাদ্দের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ১২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারভিত্তিক এবং চাহিদাভিত্তিক বিশ্নেষণ না করে প্রকল্প নেওয়া হয় বলে বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং বারবার প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। অনেক সময় কিছুদিন চলার পর প্রকল্প বাতিল করার প্রয়োজন পড়ে। এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের নীতিমালায় প্রকল্পের দ্বৈততা পরিহার করতে বলা হয়। অর্থাৎ একই কাজ একাধিক প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা যাবে না। কিন্তু দ্বৈততা থাকায় প্রকল্পগুলো সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ অন্য প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, নকশা অথবা পরিকল্পনা ভুলের কারণে অনেক সময় বাস্তবায়ন পর্যায়ে জটিলতা তৈরি হয়। এতে শেষ পর্যন্ত প্রকল্প বাতিল করে দিতে হয়। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণেও অনেক সময় কাজ বাকি রেখে প্রকল্প শেষ করা হয়। তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা বিবেচনা না করেই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কিছু প্রকল্পের অনেক অংশ বাদ দিতে হয়। এর মাধ্যমে জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০৬ প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে কাজ বাকি রেখেই। ওই অর্থবছরে মোট ২৪৬ প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে ১৪০ প্রকল্পের। অবশিষ্ট প্রকল্পের কিছু না কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সমাপ্ত ঘোষিত মাত্র নয়টি প্রকল্পের শতভাগ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। বরাদ্দ থাকলেও কিছু না কিছু অর্থ অবশিষ্ট রয়েছে ২৪৭ প্রকল্পের। তথ্যসূত্র: সমকাল

More News Of This Category