নেত্রকোনায় রামবুটান ফলের চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন কৃষক উসমান গনি। তিনি বহু দিন আগে বিদেশ থেকে ফেরার পথে সঙ্গে করে এই ফল নিয়ে আসেন। তা থেকে চারা করে দুটি গাছ থেকে বছরে দেড় লাখ টাকার ওপরে ফল বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ছোট চারাও বিক্রি করে আরও পাচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
এই রামবুটানের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার কয়েক ইউনিয়নজুড়ে। তাঁর বাড়িটিকে এখন রামবুটানের বাড়ি বলেই সবাই চেনে। উসমান গনির বাগানে এই ফল ছাড়াও ডুরিয়ান, পিস ফল, লঙ্গাম, মাংগোস্টিন, টিসা ফল, জাবটিকাবা, অস্ট্রেলিয়ান আপেল, স্টার আপেল, ড্রাগন ফল, টক ও মিষ্টি করমচা, মিষ্টি তেঁতুলসহ দেশ-বিদেশের আরও শতাধিক ফল, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, উন্নত জাতের রঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। তবে তাঁর প্রধান আয়ের উৎস রামবুটান ফল। পেশায় তিনি পল্লি চিকিৎসক। গ্রামের বাজারে তাঁর একটি ছোট ওষুধের দোকান আছে।
কলমাকান্দা বাজার থেকে হরিপুরে উসমান গনির বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আধা পাকা দুটি ও টিনশেড দুটি ঘর নিয়ে ছিমছাম বাড়ি। সামনে বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান। পাশে একটি ছোট পুকুর। কাজের সন্ধানে ১৯৯২ সালের জুন মাসে মালয়েশিয়ায় যান উসমান গনি। ১৩ মাস পর শ্রমিকের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। আসার পথে অন্য জিনিসের সঙ্গে ৪ রিঙ্গিত কেজি (বাংলাদেশে ৬০ টাকা) দরে দুই কেজি রামবুটান ফল আনেন।
আপনজনদের বিলিয়ে শেষে ওই ফলের ১০টি বীজ বাড়ির আঙিনায় মাটিতে পুঁতে রাখলে তা থেকে জন্ম নেওয়া চারটি চারার মধ্যে একটি টিকে যায়। ছয় বছর পর গাছে ফুল আসে। বর্তমানে এই একটি গাছ থেকে বহু গাছ হয়েছে। তবে ফল পাচ্ছেন দুটি গাছ থেকে। বছরে অন্তত ৪৫০ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি ফল তিনি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। আর একটি চারা গাছ ১ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। প্রতিবছর চারা উৎপাদন আর ফল বিক্রি করে প্রায় ২ লাখ টাকার ওপরে পান তিনি। ছেলে আমিনুল হক বাবার কাজে সহযোগিতা করেন আর ওষুধের দোকানটি চালান। আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত গাছে ফল থাকে। উসমানের এই সাফল্যের কথা এখন ছড়িয়ে গেছে দূর-দূরান্তে।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘শুধু আমাদের ইউনিয়ন নয়, পাশের কয়েকটি ইউনিয়নে রামবুটানের বাড়ি যাব বললেই উসমান গনির বাড়ির পথ চিনিয়ে দেবে। তিনি একজন সফল চাষি। নিজে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদেরও রামবুটান চাষে উৎসাহিত করছেন।’ রামবুটান ফলটি লিচু পরিবারের। আদি নিবাস মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। ফলটির খোসা হালকা চুলের মতো আবরণে ঢাকা। মালয় ভাষায় ‘রামবুট’ শব্দের অর্থ চুল।
তাই অনেকে একে হেয়ারি লিচু, কেউ কেউ ফলের রানিও বলেন। এই ফল চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূল। নেত্রকোনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রামবুটান দেখতে অনেকটা আমাদের দেশীয় কদম ফুলের মতো। কাঁচা অবস্থায় এই বিদেশি ফলটি সবুজ বর্ণের হলেও পাকার পর টকটকে লাল রং ধারণ করে। ফলটির ভেতরে লিচুর মতো শাঁস থাকে। খেতে খুব সুস্বাদু ও মুখরোচক। রয়েছে ঔষধি ও পুষ্টিগুণ।’
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ডটকম।