জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে শৈশব, কৈশোর আর যৌবন যখন চলে যায় তখন বার্ধক্য এসে ভর করতে শুরু করে। বাস্তবজীবনের সুখ দুঃখ আর সাধারণ সব অংশগ্রহণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শুরু হয়। সেই সঙ্গে যোগ হয় ভয়ঙ্কর একাকীত্ব। মন জুড়ে অবসাদ।
আজকাল ব্যস্ত জীবনে সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখার সময় নেই তাদের। বাড়িতে একলা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। আর এটাই তাদের নিয়তি এখন। আর নইলে সন্তানদের কাছ থেকে বহুদূরে পড়ে থাকেন। কেউ থাকে না আশেপাশে। এই দূরে থাকা বাবা-মায়ের মনের অবস্থা বুঝে কীভাবে কি করবে সন্তানেরা? এটাই প্রশ্ন- সন্তানেরা যে যার সংসার, কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ অন্য শহরে, কেউ বিদেশে। ফোনে কথা হয় দিনে দুই-একবার। কারও কয়েকদিন পর পর। অনেকের সন্তান আবার খোঁজই নেন না।
সেই গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সবখানেই এই একই চিত্র। বয়স্করা একা হয়ে পড়ছেন আস্তে আস্তে। সবার সন্তান যে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ঝেড়ে ফেলে দূর দেশে পালিয়ে যান, তা নয়। সবাই নিজের নতুন সংসারের ব্যস্ততায় মা, বাবাকে ভুলতে বসেছেন, তাও নয়। বিশ্বায়ন, সমাজ পরিবর্তন, আর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতির জন্য বৃহৎ সংসার থেকে ছিন্ন হয়ে পড়ছেন সমাজে প্রবীণদের একাংশ। ছোট পরিবারে একলা হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। যার পরিণতি অবসাদ। একরাশ মানসিক অবসাদ জাপটে ধরে তাঁদের।
তবে শুধু ছেলে-মেয়ে দূরে থাকলে বা তাঁদের সঙ্গে কোনও কারণে সম্পর্ক তিক্ত হলেই যে এই একাকীত্বের অবসাদ আসে তা একমাত্র কারণ নয়। বয়সকালীন ডিপ্রেশনের কারণ একাধিক। স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর শোক, সাংসারিক অশান্তি, সন্তান যত্ন না নিলে, পরিবারে গুরুত্ব কমলে, শারীরিক অসুস্থতা, অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ার মতো বহু কারণ রয়েছে।
বয়স্কদের মানসিক অবসাদের লক্ষণ
এই বয়সে এসে বেশকিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন- সব কিছুতেই হতাশা-দুঃখ পাওয়া। আনন্দের ঘটনাতেও আনন্দিত না হওয়া। ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ করা। সমাজে কারও সঙ্গে মিশতে না চাওয়া। নিজের শখের কাজেও উৎসাহ না পাওয়া। ওজন কমা, খিদে না পাওয়া। কোনও কাজ করতে ইচ্ছা না করা। নিজেকে উৎসাহিত করার ব্যাপারেও অনীহা। ঘুমের সমস্যা (দিনের বেলায় ঘুম পাওয়া, রাতে ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঘুম)। কথা কম বলা। হাঁটাচলার গতি কমে যাওয়া। আত্মহত্যার প্রবণতা, মৃত্যুচিন্তা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া। নিজের প্রতি যত্ন না নেওয়া (খাবার না খাওয়া, ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া, নিজের পুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর না দেওয়া)।
দূরে থেকেও পাশে
বয়স্ক বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখতে না পারার কষ্ট পান ছেলেমেয়েরা। তাঁদের অসহায়তার কথা ফোনে শুনলেও বেশিরভাগ সময়ই বিশেষ কিছু করার থাকে না। তবু মনে রাখা দরকার, শুধু মাত্র আর্থিক সচ্ছলতা দিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করাটাই সব নয়। এই সময় তাঁদের মধ্যে একাকীত্বে ভোগার সমস্যা হয় যা থেকে ধীরে ধীরে অবসাদ গ্রাস করে।
তাই বিভিন্ন কারণে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা পরিবারের থেকে দূরে থাকলেও দিনে কয়েক বার ফোনে কথা বলুন। সব সময় যে জরুরি কথা বলতে হবে এমন নয়। স্বাস্থ্যের খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের কথাও মন দিয়ে শুনুন। আর অবসাদের লক্ষণ বুঝতে পারলে প্রথমে নিজে কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করুন।
তথ্যসূত্র: বাংলা ইনসাইডার