বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মান সনদ ছাড়া মত্স্য ও পশুখাদ্য বিক্রি নিষিদ্ধ হচ্ছে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে। ৪ জুলাই এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে শিল্প মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, মত্স্য ও পশুখাদ্য বিক্রি করতে হলে বিএসটিআইয়ের মান সনদ অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে। সনদ ছাড়া এসব খাদ্য বিক্রয়, বিতরণ বা বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির পর একটি প্রতিষ্ঠান মান সনদ সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সনদ সংগ্রহের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় দেশেই চাহিদা অনুযায়ী মত্স্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন হতো। তবে সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় তা অনেকটা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ে। কিন্তু আমদানিকৃত এসব খাদ্যসামগ্রী মানসম্মত কিনা, তা যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
তাছাড়া এসব খাদ্যপণ্য বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বিএসটিআই বিষয়টি এড়িয়ে যেত। তবে চলতি বছর থেকে মত্স্য ও পশুখাদ্য জাতীয় মান সংস্থার বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকায় স্থান পায়।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ জুলাই মন্ত্রণালয় থেকে মত্স্য ও পশুখাদ্য বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্য তালিকায় যুক্ত করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী ও সরকারের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বিএসটিআইয়ের মান সনদ ছাড়া ফিশ ও পোলট্রি ফিড বিক্রি, বিতরণ ও বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
ওই প্রজ্ঞাপন সরকারি গেজেট প্রকাশের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরদিন থেকে কার্যকর হবে, অর্থাৎ আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, মত্স্য ও পশুখাদ্য বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকায় যুক্ত হওয়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর বিরোধিতা করে আসছে। কেউ বাস্তবায়নের জন্য সময় দাবি করে, আবার অনেকেই মান সনদ নেয়ার জন্য আবেদনও করে।
বিএসটিআই থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে. ফরিদপুরের মেসার্স এন আর পোলট্রি ফিড অ্যান্ড ফিশ ফিড মিলস লিমিটেড মত্স্যখাদ্যের জন্য মান সনদ গ্রহণ করেছে। এছাড়া মান সনদ গ্রহণের জন্য আরো আটটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে।
সেগুলো হচ্ছে, গাজীপুরের এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট, একই জেলার ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ও এগ্রোটেক ফিড লিমিটেড এবং নারায়ণগঞ্জের এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এছাড়া পোলট্রি খাদ্যের মান সনদ নেয়ার জন্য আবেদন করেছে গাজীপুরের এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড, একই জেলার এগ্রোটেক ফিড লিমিটেড, আলিয়া ফিডস লিমিটেড ও মুন্সীগঞ্জে অবস্থিত কাজী গ্র্যান্ড প্যারেন্টস লিমিটেড।
জাতীয় মান অনুযায়ী, ফিশ মিলে ময়েশ্চার সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ, প্রোটিন কমপক্ষে ৪০, ফ্যাট অয়েল শূন্য ৭, অ্যাশ সর্বোচ্চ ২০, ক্যালসিয়াম সর্বোচ্চ শূন্য ৬ ও ফসফরাস কমপক্ষে শূন্য ২ শতাংশ থাকতে হবে। মিট ও বোন মিলে ময়েশ্চার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ, প্রোটিন ৪০ , ফ্যাট শূন্য ৭, অ্যাশ ৩০, ক্যালসিয়াম সর্বোচ্চ ১১ ও ফসফরাস কমপক্ষে শূন্য ৪ শতাংশ থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) প্রকৌশলী এসএম ইসহাক আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ফিশ ও পোলট্রি ফিডের জাতীয় মান থাকলেও পণ্যগুলো বাধ্যতামূলক তালিকায় না থাকায় সেগুলো নজরদারিতে আনা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি এসআরও জারি হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
মত্স্য অধিদপ্তরের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা বিভাগে মোট ১৮৭টি খাদ্য গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে হেভিমেটাল শনাক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭৬টি নমুনার মধ্যে একটি, রাজশাহীতে ১৩৭টি নমুনার মধ্যে একটি ও ময়মনসিংহে ৪৪টির মধ্যে ২৩টি পরীক্ষা করে চারটিতে হেভিমেটাল শনাক্ত করা হয়েছে।
মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮ কেজি পশুখাদ্য জব্দ করছে। পাশাপাশি ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ভেজাল ২ হাজার ৭৬৬ কেজি পশুখাদ্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং একজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মত্স্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৯৯টি প্রতিষ্ঠান মত্স্য খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, বিতরণ বা বাজারজাত করে আসছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৭৭টি, রাজশাহীতে ১৫টি, চট্টগ্রামে ১০টি, খুলনায় ছয়টি ও বরিশালে রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান।
তথ্যসূত্র: বনিকবার্তা ডটকম।