দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ও ব্যবসাবান্ধব দেশ মালয়েশিয়া এখন তাবৎ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। টেকসই অর্থনীতিতে উদার বাণিজ্যের সুযোগ থাকায় সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীদের কাছেই মুসলিম প্রধান এই দেশটি এখন নিশ্চিত বাণিজ্য গন্তব্য। বাংলাদেশিদের জন্যও বিজনেস ভিসায় সপরিবারে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ আছে দেশটিতে।
সঠিক পরিকল্পনা আর বাস্তবসম্মত ধারণা নিয়ে যে কেউ ব্যবসা করতে পারেন ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে ওঠার দৌড়ে নামা মালয়েশিয়ায়। দেশটির শ্রমবাজারে যেমন বাংলাদেশি দক্ষ শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তেমনি স্বল্প, মাঝারি বা বড় পুঁজি বিনিয়োগকারীদের নিরাপদে মূলধন বিনিয়োগেরও আদর্শ বাজার ৩ দিকে জলবেষ্টিত মালয়েশিয়া।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে যে কেউ ভাগ্যান্বেষণে পাড়ি জমাতে পারেন মালয়েশিয়ায়। দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা কারণে গত ১১ মাস দেশটিতে বিজনেস মাইগ্রেশন কঠিন হয়ে পড়লেও বর্তমানে ফের শুরু হয়েছে ফাইল প্রসেসিং। নতুন কিছু আইন সংযোজন ও বিয়োজনের পর বাংলাদেশিরা ফের বিজনেস মাইগ্রেশন করতে পারছে।
দেশটিতে বিজনেস মাইগ্রেশনের বর্তমান অবস্থা, সুযোগ-সুবিধা ও নতুন আইন-কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড মাইগ্রেশন কনসালট্যান্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, স্বল্প বিনিয়োগকারীদের জন্য মালয়েশিয়া আদতেই অনেক ভালো বাজার।
জমি-জমা লিজ নিয়ে কৃষি খামার, মৎস্য চাষ, ডেইরি ফার্ম করে, মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি করে বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খুলে, গাড়ি বিষয়ক ব্যবসা বা খাবার ও থাকার ছোট-বড় রেস্তোরাঁ দিয়ে বা চেইন শপ এর ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে কিংবা আইটি রিলেটেড ব্যবসা বা ফাস্ট ফুড এর দোকান দিয়ে সহজেই ব্যবসা করা যায়।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করতে হলে আপনাকে প্রথমেই একটি কোম্পানি খুলতে হবে। দেশটিতে ২ ভাবে কোম্পানি খুলে ব্যবসা করা যায়। Offshore Company (International Company) এর অধীনে শতভাগ ফরেন শেয়ারে বা Sdn. Bhd. কোম্পানির মাধ্যমে Employment Pass নিয়ে যে কেউ বৈধ ভিসায় সপরিবারে বসবাস ও ব্যবসা করতে পারেন।
আন্তর্জাতিক কোম্পানির অধীনে বিজনেস রেসিডেন্স ভিসা বা SDN-BHD কোম্পানির মাধ্যমে কোম্পানি করলে পাঁচ বছর পরে মালয়েশিয়ার স্থায়ী নাগরিকত্ব (পিআর) পাওয়া যায় বেশ সহজেই। চাইলে ২ বছর পর পর ভিসা নবায়ন করে আজীবনও বসবাস করা যায়। ড. রাজু বলেন, নতুন আইনানুযায়ী প্রতিটি রেজিস্টার্ড কোম্পানিকে ESD এর অধীনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এতে রিজেক্টেড হবার সুযোগ নেই। যদিও এতে সময় ও ব্যয় দুটোই বেড়ে গেছে। তবে বিষয়টি মোটেও অসম্ভব বা অবাস্তব নয়। তাহলে আর দেরি না করে শিক্ষাগত যোগ্যতার সর্বশেষ সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে তৈরি হোন মালয়েশিয়া যেতে। এর মধ্যেই ব্যবসার পরিকল্পনাটি প্রস্তাবনা আকারে তৈরি করে নিন।
আপনার প্রয়োজন ও যোগ্যতা অনুযায়ী RPT-Talent/ Talent Visa নবায়ন যোগ্য ভিসার মাধ্যমে ১০ বছরের Approval সহ ৫ বছরের স্টিকার নিয়ে দীর্ঘসময় দেশটিতে বসবাসের চিন্তা করতেই পারেন। সিনিয়র সিটিজেনরা নিতে পারেন মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম পলিসি। মূলত সবকিছুই নির্ভর করছে আপনার চাহিদা ও দক্ষতার উপর।
গত কয়েক বছর ধরেই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের বিজনেস রেসিডেন্স ভিসাসহ অন্যান্য ভিসা নিয়ে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজু। তার হাত ধরেই অনেকে নিয়েছেন মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব। কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, একাউন্ট ওপেনিং (ATM কার্ড)সহ সব ধরনের ব্যবসা স্থাপনে সকল প্রকার আইনগত সহযোগিতা দিয়ে আসছেন তিনি।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি কখনোই মালয়েশিয়ায় ক্যাটাগরি ২ বা ৩ বা অন্য কোন ধরনের ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে কাজ করি না বা করবো না। বাংলাদেশের প্রকৃত ও যোগ্য নাগরিকদের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক রাস্তা দেখানোই আমার মূল কাজ।
মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাগজপত্র দাখিল করলে কোনো প্রার্থীরই আবেদনের ফাইল প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এক্ষেত্রে সততাই বড় বিষয়। তিনি বলেন, ভালো কনসালটেন্সি ফার্ম মূলত মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশি প্রার্থীদের রেসিডেন্স অনুমোদন সেবা দেওয়ার কাজ করে থাকে। তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ২৪ ডটকম।