গরু উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেলজিয়াম। দেশটির বিখ্যাত এক গরুর জাত হচ্ছে ‘বেলজিয়ান ব্লু’ বা ‘নীল গরু’। বেলজিয়ান ব্লু ছাড়াও এই গরুকে ‘হোয়াইট ব্লু’, ‘ব্লু হোয়াইট’, ‘হোয়াইট ব্লু পাইড’সহ আরও নানান নামে ডাকা হয়। গরুর গায়ের রঙের ওপরই এই নাম নির্ভর করে। যেমন, গরুতে সাদা রঙের আধিক্য থাকলে হোয়াইট ব্লু কাউ, আর নীল রঙের আধিক্য থাকলে ব্লু ব্ল্যাক কাউ নামে ডাকা হয় এগুলোকে।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে গত প্রায় ৭০ বছর ধরে মাংসের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রেখে আসছে এই গরুর জাত। ‘বেলজিয়ান ব্লু’ জাতটি বেলজিয়ামের প্রায় দুশো বছরের পুরনো একটি জাতেরই উন্নত সংস্করণ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৫০ সালে কৃত্রিম প্রজনন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর হ্যাটসেট ক্রস ব্রিডিং এর মাধ্যমে বেলজিয়ামের আদি একটি জাতকে উন্নত করে বেলজিয়ান ব্লু হিসেবে পরিচিত করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে এটি ছড়িয়ে যায় ইউরোপ আমেরিকায়।
‘বেলজিয়ান ব্লু’ গরুর বৈশিষ্ট্য
গরুর বিস্ময়কর এক জাত বেলজিয়ান ব্লু। শক্তিশালী পা বিশিষ্ট বিশালদেহী গরুটির শরীরে থরে থরে মাংসপেশী সাজানো। প্রাকৃতিকভাবেই মাংসের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে জাতটির। যথেষ্ট শক্তিশালী ও শান্ত প্রকৃতির গরুটির পিঠে কোন কুঁজ নেই। এই জাতের গরু ৭০ কেজি ওজন নিয়েই জন্ম নেয়।
মাত্র এক দিন বয়সী বাছুর প্রতিদিন পাঁচ লিটার পাউডার দুধ খায়। তিন মাস বয়স থেকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দানাদার খাদ্য দেওয়া হয়। অবাক করা ব্যাপার হলেও সত্য যে, প্রতিদিন প্রায় এক কেজি করে ওজন বাড়তে থাকে বাছুরের। দু’বছরের মাথায় কমপক্ষে ৬০০ কেজি ওজন হয় একটি গরুর। তিন বছরে এর ওজন দাঁড়ায় ৭৫০ কেজিতে। এভাবে ওজন বেড়ে ১০০০ কেজি থেকে ১২০০ কেজি পর্যন্ত পৌঁছায়।
আপাততদৃষ্টিতে মনে হলেও বেলজিয়ান ব্লুতে কোনো এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। গরুগুলোতে স্বাভাবিক বৃদ্ধিই এ রকম। জাতটির শরীরে দুই ধরনের মিয়োস্ট্যাটিন জিনের কারণে এ রকম বৃদ্ধি হয়ে থাকে। যা এক আশ্চর্য ঘটনাও বটে। ডাবল মাসলিং বৈশিষ্ট্যের বেলজিয়ান ব্লু বিশ্বের যে কোনো গরু থেকে বেশি মাংস দিয়ে থাকে। শীত কিংবা গ্রীষ্ম, যেকোনো আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে পারে বলে এটি অনন্য জাত।
ইতোমধ্যে ইউরোপ, ব্রাজিল, আমেরিকা, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে বেলজিয়ান ব্লু ব্যাপকভাবে লালন-পালন করা হচ্ছে। মাংসের গুণগত মান ভালো তাই এর জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। উন্নত বিশ্বে পরিচিতি থাকলেও বেলজিয়ান ব্লু আমাদের দেশে অপরিচিত।
কুরবানিকে সামনে রেখে মাংসের চাহিদার প্রশ্নে আমাদের দেশে উৎপাদিত গরু কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে বেলজিয়ান ব্লু জাতটিকে দেশে এনে গবাদি পশু পালনে এই জাতটি যুক্ত করা যেতে পারে।