বিদেশি ব্যাংকসহ দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক নির্দেশনা আমলে না নেয়ার মধ্যে নতুন চাপ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতে সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কমিয়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত সবশেষ একটি প্রজ্ঞাপন সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ নির্দেশনার ফলে যেসব ব্যাংক সীমার বাইরে ঋণের বিপরীতে সুদ নিয়ে থাকে, তা কমিয়ে আনতে হবে। আর আমানতের ক্ষেত্রে যারা মাত্রাতিরিক্ত কম সুদ দেয়, তাদের সুদহার বাড়াতে হবে। ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর জারি করা সার্কুলারে কার্ড ও ভোক্তাঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতে ঋণ এবং আমানতের গড়ভারিত সুদ হারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সেই সার্কুলার পরিবর্তন করে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রকার ঋণের সুদহার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে। ঋণের সুদহার অযৌক্তিক মাত্রায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন নতুন এই নির্দেশনা দিয়েছে, তার এক মাস আগেও দেখা যায়- মার্চ শেষে দেশি-বিদেশি ১০ ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধারিত সীমায় ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, বিদেশি খাতের পাঁচটি ব্যাংকের স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপর অবস্থান করছে। গত মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭০ শতাংশ সুদ; স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৪০ শতাংশ। বেশিরভাগ বিদেশি ব্যাংক বরাবরই স্প্রেড নির্দেশনা অমান্য করে।
আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো গড়ে ঋণের বিপরীতে সুদ আদায় করেছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ হারে, অন্যদিকে আমানতে সুদ দিয়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।
নির্দেশনা না মানা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।
বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমার হার (সিআরআর) সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক সিআরআর সাড়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করে, যা ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এর ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে আসবে অতিরিক্ত ১৩ হাজার কোটি টাকা।
পাশাপাশি তারল্য সংকট কাটাতে সরকারি আমানতেরও ৫০ শতাংশ সংগ্রহের অনুমতি পেয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এতদিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যেত। বাধ্যতামূলকভাবে ৭৫ শতাংশ রাখতে হতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। এসব উদ্যোগের ফলে এক মাসের মধ্যে সুদের হার এক অংকে নেমে আসবে বলে ১ এপ্রিলই জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সবকটিতেই এখন দুই অঙ্কের সুদ গুনছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে দেয়া ঋণের বিপরীতে ১৫ শতাংশেরও বেশি হারে সুদ আরোপ করছে কোনও কোনও ব্যাংক।অর্থমন্ত্রী ওই সময় বলেন, সুদহার এক অংকে পৌঁছে যাবে। সেদিকে নজর দেয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা এ বছর দেখলাম হঠাৎ ব্যাংকগুলোর সুদের হার বাড়তে লাগলো। এই সুদের হার বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এমএ মুহিত বলেন, এ বছর নির্বাচনের বছর। এ বছর অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইন।