সীমা পড়াশোনা করেছেন ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতক ও কৃষি বিপণনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কৃষি সম্পর্কিত কোনো চাকরির সাথে যুক্ত না হয়ে তিনি যুক্ত হন প্রকাশনার সাথে। কৃষি নিয়ে লিখে ফেলেন একাধিক বই। একসময় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ কাপ্তাইয়ের নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো ভালো লাগলেও সন্তান হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেন। বাসায় সন্তানের দেখাশোনা ছাড়া তেমন কোনো কাজ ছিল না তার।
২০১১ সালের দিকে অনলাইনে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুটি জামা কেনেন। এই সময় তিনি খেয়াল করেন, অনলাইনে খুব কম পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব এবং এই ব্যবসায় লেগে থাকলে ভালো করাও সম্ভব। নিজে ভেবেচিন্তে এবং স্বামীর সাথে আলোচনা করে দেখলেন ঘরে বসেই সংসার ও ব্যবসা দুই-ই করা সম্ভব। তার মাথায় তখন ভালোভাবেই ঢুকে যায় অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া। তার স্বামীর কর্মস্থল রাঙামাটি। এই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রথম দিকে দ্বিধা এলেও পরে তা ঝেড়ে ফেলেন। আইডিয়া মতো স্বামীর ল্যাপটপ ও পঞ্চাশ হাজার টাকা পুঁজি করে সে বছরই নেমে পড়েন কাজে।
কিন্তু এত কিছু থাকতে জামদানি বিক্রি কেন? সীমা জানালেন, ঐতিহ্যের গৌরব ও ক্রেতাদের চাহিদার কারণে তিনি ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে জামদানিকে বেছে নেন। সীমা জানালেন, নারায়ণগঞ্জের জামদানিপল্লী ও দেশের বিভিন্ন এলাকার তাঁতিদের কাছে ঘুরে বেড়িয়েছেন ভালো মানের জামদানি সংগ্রহের জন্য। এরপর ফেসবুকে খুলে ফেলেন একটি ফ্যানপেজ।
পেজের নাম রাখেন রংধনু জামদানি (www.facebook.com/rangdhanujamdani)। বিভিন্ন ডিজাইনের জামদানি শাড়ির ছবি আপলোড দিতে থাকেন। লাইক বাড়তে থাকে এবং তিনি ক্রেতাও পেতে থাকেন। ক্রেতাদের চাহিদামতো পণ্য কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন দেশের নানা জায়গায়। এজন্য ক্রেতাকে কুরিয়ার বা অন্য কোনো আলাদা খরচ দিতে হয় না। সীমা বলেন, তার পণ্যের মান আকৃষ্ট করে সবাইকে। তার পণ্য শুধু দেশে নয়, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়। বর্তমানে তার এই অনলাইন শপটি দেশের অন্যতম সেরা অনলাইন শপে পরিণত হয়েছে।
২০১৪ সালে রাঙামাটির বনরূপায় ‘রংধনু ই-বাজার’ নামের একটি কাপড়ের দোকানও খোলেন তিনি। স্থানীয় ক্রেতারা এখন সরাসরি শোরুম থেকে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা পাচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়। রাঙামাটি জেলায় পর্যটকদের ভিড় থাকে সবসময়। তাদের কথা মাথায় রেখে তিনি চালু করেছেন ‘রংধনু গেস্ট হাউস’। এটিও ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচালিত হয় (www.face book .com/rangdhanuguesthouse)। গেস্ট হাউসে ঘরোয়া পরিবেশ, ওয়াইফাই, রান্নাঘর, শিশুদের খাবারের বিশেষ যত্ন ইত্যাদি সুবিধা যুক্ত করেন।
এসব কাজের মাধ্যমে তিনি নিজে স্বাবলম্বী তো হয়েছেনই আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিয়েছেন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে তিনজন কর্মচারী কাজ করছেন। ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে সীমা জানান, দেশের পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থানে অবদান রাখতে চান তিনি।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক