ইতিবাচক জীবন তৈরির জন্য আমরা কী করব আর কী করব না, তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় থাকি। নিজের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে বেশ কিছু কাজ কিংবা অভ্যাস পরিবর্তন করলেই আমরা নিজেকে বদলাতে পারি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলর কাজী রুমানা হক বলেন, ‘কিছু কাজ আছে যা থেকে নিজে এড়িয়ে চলতে পারলে আমরা দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি ও বিরক্তি কাটাতে পারব। প্রতিদিনের ইতিবাচক অভ্যাস আমাদের জীবনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনে। কী কী কাজ করব না, তা জানতে পারলে নিজের ইতিবাচক মনন বিকাশে জোর পাওয়া যায়।’ আর এ জন্য যে নয়টি কাজ করা যাবে না।
নিজেকে কখনোই অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না:
আমরা যখন ব্যর্থ হই কিংবা মনে বিষণ্নতা ভর করে, তখন আমরা অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করি, যা কখনোই করা উচিত নয়। আমাদের বিশ্বাস করা উচিত, প্রত্যেক মানুষই অনন্য, আমিও আলাদা। নিজের দুঃখ কিংবা ব্যর্থতায় অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে নিজেকে ছোট করা অনুচিত। সবাই যার যার জায়গায় অনন্য ও আলাদা—এমনটাই ভাবুন।
ব্যর্থতাকে নিজের ওপর ভর করতে দেবেন না:
এগিয়ে চলা জীবনে সাফল্য-ব্যর্থতা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ আসবে। ব্যর্থতা মানে যে সব শেষ, এমনটা কখনোই ভাববেন না। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতা থেকে শেখার চেষ্টা করুন। ব্যর্থ কেন হলেন তার পেছনে অকারণে সময় নষ্ট না করে পরবর্তী কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। ব্যর্থতাকে শিক্ষা হিসেবে ভেবে এগিয়ে চলুন।
নিজের শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থাকে অবহেলা করবেন না:
স্বাস্থ্য সব সময়ই মূল্যবান। দুর্বল স্বাস্থ্য মানেই দুর্বল মনন। প্রতিদিন ব্যায়াম করা শিখুন, প্রচুর পানিপানের অভ্যাস করুন, সিঁড়ি দিয়ে চলাফেরা করুন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলবেন না:
নিজের জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা শিখুন। আপনার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে যে দারোয়ান আপনার জন্য দরজা খুলে দেয়, তাকে ধন্যবাদ জানাতে শিখুন। হাসুন।
পরচর্চা করবেন না:
নিজেকে অন্য মানুষের জায়গায় কল্পনা করতে শিখুন। অন্যের খারাপ গুণ কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে হাসাহাসি কিংবা গল্পগুজবে সময় দেবেন না। গল্পগুজবকে বেশ আনন্দদায়ক মনে হলেও আপনি আসলে নিজের ক্ষতিই করেন। নিজেকে বড় মনের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য পরচর্চা থেকে বিরত থাকুন। নেতিবাচক গল্পগুজবের পরিবেশ ও মানুষকে এড়িয়ে চলা শিখুন।
অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলবেন না:
কর্মক্ষেত্রে আপনি নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করুন। কোথায় ‘হ্যাঁ’ আর কোথায় ‘না’ বলতে হয় তা আয়ত্ত করুন। বিনয়ী হয়ে নিজের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যের চাপিয়ে দেওয়া অযৌক্তিক সিদ্ধান্তকে যৌক্তিকভাবে না বলা শিখুন। নিজের অনিচ্ছায় কাজ করার অভ্যাস বাদ দিতে শিখুন।
নেতিবাচক পরিবেশে থাকবেন না:
আমরা যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি কিংবা যাদের সঙ্গে চলাফেরা করি, তারাই নির্ধারণ করে আমরা আসলে কতটা ইতিবাচক-নেতিবাচক। নেতিবাচক মননের মানুষকে পরিহার করতে শিখুন। নেতিবাচক মানুষ ও পরিবেশ আপনার জীবনীশক্তির জোর কমিয়ে দেয়, তাই যেকোনো মূল্যেই তাদের পরিহার করুন।
অহংবোধ চর্চা করবেন না:
আপনি শ্রেষ্ঠ, আপনিই সেরা—এমন মনোভাব এড়িয়ে চলুন। বিনয়ী হওয়া শিখুন। কেউ দাম্ভিকতাকে সম্মান দেয় না, তাই দাম্ভিকতা এড়িয়ে চলুন।
অন্যের নেতিবাচক মতামতে নিজেকে ভাসিয়ে দেবেন না:
নিজের জোর আর নিজের শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখা শিখুন। যারা আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত দিচ্ছে, তারা কেউই হয়তো পাঁচ বছর পরে আপনার জীবনে থাকবে না। ব্যর্থতা নিয়ে যারা নেতিবাচক কথা বলে, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের ক্ষতি করবেন না।
তথ্যসুত্র: প্রথম আলো ডটকম।