নাটোরের আলফাজুল আলম। নিজে ভুমিহীন হলেও মাছ চাষ ও ফলের বাগান করেছেন প্রায় দেড়শ’ বিঘা জমিতে। তার আমেরিকা প্রবাসী ছেলে আখেরুল আলম দেশে ফিরে এসে নাটোরের বিভিন্ন এলাকার মোট ছয়টি পয়েন্টে বাবার পরিচালিত এসব কৃষি প্রকল্প নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করছেন। এসব প্রকল্পে নিয়মিত কাজ করেন এলাকার শতাধিক শ্রমিক। যার এক তৃতীয়াংশ মহিলা। রয়েছেন বেশ ক’জন প্রতিবন্ধীও।
এলাকাবাসী জানান, নাটোর শহরের নীচাবাজার এলাকার তমিজ উদ্দিন কন্ট্রাক্টারের বড় ছেলের মাথায় তখন প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার ঋণের বোঝা। ঠিক সেসময় প্রতিবেশীদের পরামর্শে শহরতলীর একডালায় গিয়ে ছোট এক চিলতে জমি কিনে বসবাসের পাশাপাশি সারের ব্যবসা শুরু করেন। কিছুদিন পরে তিনি একডালায় এবং পরে বড়ভিটার ভূয়াপুকুরে সরকারি জলাশয় লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন।
সব কিছুতেই তিনি সাফল্য পান। এরপর ভূয়া পুকুরের লিজ বাতিল হয়ে গেলেও তিনি একডালা ভাটা পুকুরে ২০ বিঘা এবং জলারকান্দিতে ১৬ বিঘা ব্যক্তি মালিকানা জলাশয় লিজ নিয়ে আবারও মাছ চাষ শুরু করেন। একই সাথে বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলায় যুগীপাড়ায় ১৯ বিঘা, নাটোরের আলাইপুরে ২৩ বিঘা, সদর উপজেলার বাকশোঘাটে ৪১ বিঘা এবং নাটোর সিটি কলেজের পিছনের রেলের প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বাগান তৈরি করেন।
এসব বাগানে আপেল কুল, থাইকুল, বাওকুল, থাই পেয়ারা, কাজি পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, এলাচি লেবু, কলম্ব লেবু, চায়না লেবু, বেদানা ও ড্রাগন ফলসহ অনেক ধরনের দেশী বিদেশী ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন। এছাড়াও তিনি তেবাড়িয়ায় গাছের চারা সংগ্রহের জন্য নার্সারিও গড়ে তোলেন।
এসব করে তিনি গত ৩০ বছরে ঈর্ষনীয় সাফল্য লাভ করেছেন। জানা যায়, হাতে কলমে বা পুথিগত প্রশিক্ষণ তার তেমন একটা নেই। চাষীদের সাথে কথা বলে আর সরকারি দফতরে গিয়ে তাদের পরামর্শ নিয়ে তার শ্রমিকদের দিয়ে এসব করিয়েছেন।
কৃষক আলফাজুল আলম জানান, গভীর পুকুরে এ ধরনের মাছ চাষে কেউ সফল হয়নি। কিন্তু তিনি ১৫ থেকে ১৬ ফুট গভীর পুকুরে বিদেশী কৈ মাছ চাষ করে বিঘা প্রতি ৬০ মণ ফলন পেয়েছেন। মাত্র আটটি মাছেই এক কেজি হয়েছে। এগুলো এ অঞ্চলের রেকর্ড।
তিনি বিভিন্ন ধরনের কুল ও পেয়ারা চাষে সাফল্য পাওয়ার পর এখন উন্নতজাতের লেবু, বেদেনা ও ড্রাগন ফল চাষেও সাফল্য পেয়েছেন। এবার তিনি বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন। প্রতি কেজি ড্রাগন তিনি তার বাগান থেকেই চারশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। বিদেশী এই ফলের চাহিদা দেখে তিনি এর আবাদ বাড়িয়েছেন।
সময়ের পরিবর্তনে তার সংসারেও পরিবর্তনের হাওয়া। ছোট ছেলে আখেরুল আলমকে লেখাপড়া শেখার জন্য পাঠান আমেরিকা। সেখানে কাজ কর্ম শুরু করলেও বাবার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে এসব কৃষি প্রকল্প নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। বড় ছেলে আতিকুল আলম ও ছোট ভাই মোঃ শহীদুল আলমও সম্পৃক্ত হয়েছেন এক সময়ের এই ভুমিহীন কৃষক আলফাজুল আলমের প্রকল্পে।
নাটোরের এই ভুমিহীন কৃষক আলফাজুল আলম সারা দেশের কৃষক, বেকার ও হতাশাগ্রস্থ মানুষদের কাছে অনুসরণীয় হতে পারেন বলে মনে করেন নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহমেদ ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাইফুল আলম।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।