জীবন হল উপভোগের জন্য। আর আপনাকে সব কিছুই উপভোগ করতে হবে। সেটা ভাল কিংবা মন্দ। একবার কল্পনা করুন আপনার পেছনে ফেলে আসা দিনগুলো। আপনার গ্র্যাজুয়েশন, চাকুরী, সম্পর্কগুলো, সাফল্য, বিফলতা, বিষণ্ণতা, বন্ধুদের সাথে আড্ডার সময় গুলো। এইগুলো আমাদের সমাজের বেঁধে দেয়া কিছু আচার-অনুষ্ঠান।
তেমনি ভাবে ভয়ও আমাদের জীবনের অনুষঙ্গ। এটাকে আমাদের জীবনে ম্যাচিউরিটির মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভাবুন ছোট বেলায় আপনি যে বিষয়টিতে অথবা জিনিসটিকে ভয় পেতেন নিশ্চয় ২০ বছর বয়সে সেগুলোর অনেক গুলোতে ভয় পাননি বা পাবেন না। আর এই ভয় কে জয় করার মাধ্যমেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দেখা পাবেন। ভয়কে জয় করার মধ্যেই আপনার সামর্থ বিদ্যমান।
আমরা আজ ভয়কে জয় করার সাতটি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আপনাকে আপনার ভয়গুলোকে জয় করতে সাহায্য করতে পারেঃ
১। আপনার ভয়ের রহস্য বের করুনঃ
আপনি কিসে ভয় পান তা খুজে বের করুন। আপনার ভয় যত ভয়ংকরই হোক না কেন এটাকে আলিঙ্গন করুন। ভয়ের বীভৎসতা দেখে পিছপা না হয়ে পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিন। সাহস সঞ্চয় করে একে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করুন আর দৃঢ়তা আনুন যে আমাকে এটা করতেই হবে। প্রয়োজনে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যারা গিয়েছে তাদের সাহায্য নিন।
২। অতীতকে স্বরন করুনঃ
আপনার পূর্বের সফলতাকে স্বরন করুন। এটা আপনাকে ভয়কে জয় করার শক্তি জোগান দিবে, আপনার আত্মবিশ্বাস কে সুদৃঢ় করবে। ভাবুন ভয় আপনাকে আবার গ্রাস করবে! আর এর জন্য শক্তভাবে প্রস্তুত হোন। দেখবেন পরবর্তিতে সেই ভয় আপনাকে আর সেভাবে কাবু করতে পারবে না। ভয়কে জীবনে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাঠশালা হিসাবে নিন। জীবনে অনেক বাঁধা আসবে, লক্ষ্যে পৌছার আগে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। পৃথিবীতে অনেক ব্যক্তি আছেন যারা বার বার ব্যর্থ হয়েও থামেননি, চূড়ান্ত দেখে ছেড়েছেন। আপনিও পারবেন, আপনিও স্পেশাল।
“আপনি জীবনে যে যে সফলতা চান সেগুলো কিন্তু ভয়ের অপর পাশেই অবস্থান করে” – জর্জ অ্যাডিয়ার
৩। কর্মই আপনার পরিচয়ঃ
আপনার ভয় আসলে আপনার মনে। এটা কাজ শুরুর পূর্বেই কাজের ফলাফল সম্পর্কে আপনাকে উদ্বিগ্ন করে সামনের দিকে এগুতে বাঁধা দেয়। ধৈর্য ধারণ করুন, ভাল কোন কিছু করা বা কোন কিছু করার জন্য পরিশ্রম করা এক ধরনের জয়ের অনুভূতি দেয়, যা শুধু কাজ শুরু করলেই বোঝা যায়। এই অনুভূতিই আপনার ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করার মন্ত্র হিসাবে কাজ করবে। বার বার আপনাকে এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। যতোই ভুল ভ্রান্তি, ব্যর্থতা, বাঁধা, বিপত্তি আসুক না কেন এগুলোই আপনাকে ভয় দূর করতে সাহায্য করবে।
৪। স্বাস্থ্য সচেতন হোনঃ
মন আর শরীর হল মন্দিরের মত, আপনি এগুলোর যেভাবে যত্ন করবেন ঠিক সে রকম অনুভব করবেন। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রমের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা আমাদের শরীরের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, প্রয়োজনে জিমে যান। এটা আমাদের শরীর-মন-আত্মাকে সতেজ করে।ভয় আমাদের ভেতরে বাস করে আর একে প্রশমিত করতে নিজের ভারসাম্য ঠিক রাখুন। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার, সঠিক ঘুম ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ। বডি বিল্ডিং আমাদের কঠোর পরিশ্রম আর কষ্টের মাধ্যমে প্রাণবন্ত হতে শেখায় যা ভয়কে জয় করে আমাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
৫। সাহায্য নিনঃ
প্রত্যেকের জীবনে একজন ব্যক্তি থাকে যার সাথে সবকিছু নিয়ে কথা বলা যায় বিশেষ করে কষ্টের সময়ে। সাহস সঞ্চয় করুন আর কথা বলুন কিন্তু বিব্রত বা তিরস্কারের ভয় পাবেন না, মনে রাখবেন এরকম পরিস্থিতিতে আপনিই একমাত্র না।সাহয্য চাইতেও সচেতন হোন। যাতে বাঁধা বিপত্তি পেরুতে আপনি কিছু গতি খুজে পান আর আপনার স্বপ্ন অর্জনে পথপ্রদর্শন পান। এমন একজনকে খুঁজে বেড় করুন যে আপনাকে খারাপ সময়ে আগলে রাখবে আর আপনার দুর্বলতায় শক্তির জোগান দিবে।
৬। স্বপ্ন ও একাগ্রতায় বাঁচুনঃ
জীবনকে উপলব্ধি করুন আর ইতিবাচক থাকুন। নেতিবাচক কোন কিছুতে মনোযোগ দিবেন না। নিরবে কঠোর পরিশ্রম করুন সাফল্যই আপনার কণ্ঠস্বর উচ্চ করে দেবে। ভয়ের দিকে তেড়ে যান ভয় নিজেই দৌড়ে পালাবে। ভয় নিতান্তই আলেয়া যা আলো মনে হলেও বাস্তব না। আপনিই জয়ী হবেন এরকম স্বপ্ন দেখুন।
“কখনো কোনকিছুকেই অসম্ভব মনে করবেন না, কারণ যে কারণে আপনি কোনকিছুকে অসম্ভব মনে করছেন সেই ভয় শুধুমাত্র ক্ষণিকের বিভ্রম”- মাইকেল জর্ডন।
৭। আস্থা ও বিশ্বাসঃ
আমরা ভয়, বাঁধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়েই যাই। আমাদের জীবনে যাই ঘটুক না কেন একটা অন্যটার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তেমনি সাফল্যের সাথে ভয় আর বাঁধা-বিপত্তিও যুক্ত।ভবিষ্যৎ সর্বদাই অনিশ্চিত। নিজের উপর আস্থা রাখুন, বিশ্বাসকে দৃঢ় করুন আর অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হোন। এই বিশ্বাস আপনার ভয়কে জয় করে সাফল্য এনে দেবে।
লেখাটি উসমান মাহমুদের লেখা থেকে অনুদিত। যিনি মূলত জেনেটিক সাইন্স নিয়ে লেখালেখি করে জনপ্রিয়। তবে তার পাশাপাশি তিনি এরকম অনুপ্রেরণামূলক লেখালেখিও করেন।
তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট।