আমরা বাংলাদেশীরা ভোজন বিলাসী মানুষ। ভিন্ন ভিন্ন রন্ধনপ্রনালীর জন্য আমাদের খাবার বিশ্বব্যাপি সুপরিচিত। তবে বর্তমান সময়ের ব্যস্তময় কর্মজীবনে ঝামেলা মুক্ত রান্নার তাগিদে বেশির ভাগ মানুষই রান্নার পিছনে ভালভাবে সময় দিতে পারে না। আর তাই যারা দ্রুত রান্না করতে চায় তাদের এই অবস্থা দূর করার জন্য উপযুক্ত সমাধান হচ্ছে মাইক্রোওয়েভ ওভেন। মাইক্রোওয়েভ ওভেন এ আছে ভিন্ন ভিন্ন খাবার রান্নার জন্য আলাদা আলাদা ফাংশন। বাজারে অনেক কোম্পানির মাইক্রোওয়েভ ওভেন আছে। আর চাহিদা অনুযায়ী মাইক্রোওয়েভ এর প্রকারভেদ ও ভিন্ন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন কেনার সময় আপনি আপনার চাহিদা অনূযায়ী সলো, গ্রিল বা কনভেকশন টাইপের মাইক্রোওয়েভ ওভেন বেছে নিতে পারেন।
বাংলাদেশের বাজারে এলজি, স্যামসাং, হুয়ার্লপুল, ওয়ালটন, আরএফএল এর ভিসন সহ আরো অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের মাইক্রোওভেন পাওয়া যায়।স্যামসাং মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সরবরাহক ট্রান্সকম ডিজিটাল এবং র্যাংগস ইলেকট্রনিক্সের তিন ধরনের ওভেন যেমনঃ কনভেকশন, গ্রিল এবং সোলো আকারের ওভেন সরবরাহ করছে। হুয়ার্লপুল ব্র্যান্ডও এই তিন ধরনের মাইক্রোওয়েভ ওভেন বাজারজাত করছে।
আপনি যখন নতুন মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনতে যাবেন তখন আপনাকে কিছু বিষয় নিয়ে দ্বিধা দ্বন্ধের মধ্যে পড়তে হবে যেমনঃ আপনার কী ধরনের মাইক্রোওয়েভ কেনা উচিত? আপনার চাহিদা অনুযায়ী কেমন আকারের এবং ক্ষমতার ওভেন কেনা উচিত? সলো, গ্রিল, কনভেকশন এই তিন ধরনের মাইক্রোওয়েভের মধ্যে পার্থক্য কী? কেনার আগে আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যার সাথে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ধারনক্ষমতা তুলনা করে নিন ।
কেনার সময় আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে আপনি যে মাইক্রোওয়েভ কিনতে যাচ্ছেন সেটির ধারনক্ষমতা আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী উপযুক্ত কিনা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা মাইক্রোয়েভ ওভেনের ধারনক্ষমতা (লিটারে): ২-৪ জন ——– ১৭-২০ লিটার, ৫-৭ জন ——– ২১-২৫ লিটার, ৮-১০ জন ——- ২৬-৩০ লিটার।
যেসব বিষয় পরীক্ষা করে দেখবেন: মাইক্রোওয়েভ মোডে নূন্যতম ৫ পাওয়ার লেভেল আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখে নিবেন। কনভেকশন (খাবার সেক দেয়ার জন্য) মোডের জন্য তাপমাত্রা ২৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত সেট করা যায় কিনা পরীক্ষা করবেন। কন্ট্রোল প্যানেল (নিয়ন্ত্রন করা এবং চালানোর মেনু) সহজে পরিচালনা করা যায় কিনা এবং ব্যবহারকারীর জন্য সহজবান্ধব কিনা দেখে নিন। ওয়ারেন্টি সুবিধা আছে কিনা।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর প্রকারভেদ: বাজারে সাধারনত তিন প্রকার মাইক্রোওয়েভ ওভেন পাওয়া যায় আর এগুলো হচ্ছেঃ সলো, গ্রিল, কনভেকশন।
সলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন: মাইক্রো ওয়েভ উৎপন্ন করার জন্য এই মডেলে মাত্র একটি ম্যাগনেট্রন থাকে। আর এটি শুধু মাত্র সিদ্ধ এবং গরম করতে পারে যা দিয়ে শুধু রোস্ট বা বেক করা যায়। সলো হচ্ছে মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর সাধারন মডেল।
গ্রিল: মাইক্রোওয়েভ ওভেন গ্রিল মডেল এর মাইক্রোওয়েভ ওভেন এ তাপ উৎপন্ন করার কয়েল থাকে। ভাজাভাজির কাজে এই গরম কয়েল ভাজা এবং রোস্টিং প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে।
কনভেকশন মাইক্রোওয়েভ ওভেন: এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন এ আছে মাইক্রোওয়েভ ফাংশন, খাবার ভাজা বা গ্রিল করার জন্য কয়েল, সিদ্ধ করার জন্য হিটার এর সুবিধা।আরেকটি বিষয় হচ্ছে ভিতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের জন্য এই ওভেনে হীটারটিকে একটি থার্মোস্ট্যাটের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। থার্মোস্ট্যাট এর তাপমাত্রার পরিধি হচ্ছে ৯৫-২৩০ ° সেন্টিগ্রেড। খাবার রান্না করা ছাড়াও এই ধরনের মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে আপনি কেক, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরি এবং গরম করতে পারবেন।
আকার এবং গঠন অনুযায়ী মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর প্রকারভেদ: আকার এবং গঠন অনুযায়ী মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে চার ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ১. কাউন্টারটপ মাইক্রোওয়েভ ওভেন। ২. এবোভ রেঞ্জ ইউনিট। ৩. মাইক্রোওয়েভ ড্রয়ারস। ৪. এবং কম্বিনেশন মাইক্রোওয়েভ ওভেনস।
কাউন্টারটপ মাইক্রোওয়েভ ওভেন: কাউন্টারটপ মাইক্রোয়েভ ওভেন কমপ্যাক্ট (ছোট) বা পোর্ট্যাবল (বহনযোগ্য) মাইক্রোওয়েভ ওভেন নামেও পরিচিত। এ ধরনের ওভেন হচ্ছে সবছেয়ে ছোট আকারের মাইক্রোওয়েভ ওভেন এবং তাৎক্ষনিক খাবার গরম করার জন্য ব্যবহারকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি দিয়ে আপনি ঠান্ডা বা জমে যাওয়া খাবার গরম করতে পারবেন, পপকর্ন তৈরী করতে পারবেন এবং এইরকম আরো অনেক রান্নার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এই মাইক্রোওভেন এর সাইজ কোম্পানির স্টাইলভেদে বিভিন্ন রকম। এর সাইজ হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি প্রশস্ত, ১৪ ইঞ্চি গভীর এবং ১২ ইঞ্চি লম্বা। এছাড়া ধারনক্ষমতা সাধারনত ১ কিউবিক ফিটের মত এবং পাওয়ার হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ ওয়াটের মধ্যে।
এবোভ-রেঞ্জ মাইক্রোওয়েভ ওভেন: এবোভ-রেঞ্জ সাধারনত ওভার রেঞ্জ মাইক্রোওয়েভ ওভেন নামেও পরিচিত। এদেরকে সাধারনত রান্নাঘরের নির্দিষ্ট জায়গার বসানোর জন্য তৈরী করা হয়।এই মডেলগুলোতে বিভিন্ন গতির ফ্যান সহকারে তৈরী করা হয় যেগুলো পরিবর্তনযোগ্য কয়লার ফিল্টার ব্যবহার করে বাতাস সরবরাহ করে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে নিরাপদ রাখার জন্য অনেক কোম্পানী নিষ্কাশন পাখা ব্যবহার করে যেগুলো ওভেন অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে সয়ংক্রিয় ভাবে চালু হয়। এই মডেলের জন্য আপনার চুলার উপরে জায়গা থাকতে হবে। এটি বসানোর জন্য আপনাকে চুলার উপরের একটি ক্যাবিনেট সরানোর প্রয়োজন হতে পারে। শার্প মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর মডেলগুলোতেও এই সুবিধা রয়েছে।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন ড্রয়ারস: মাইক্রোওয়েভ ড্রয়ারস অনেক দামী এবং রান্নাঘরে বসানোর জন্য অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন হয়। এছাড়া এই মডেল যদি আপনার কাছে সম্পূর্ন নতুন হয় তাহলে অন্যান্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর তুলনায় এটি রান্নাঘরে বসানো আপনার জন্য অনেক কঠিন হবে।
প্রচলিত কম্বিনেশন কম্বিনেশন মাইক্রোওয়েভ ওভেন: এটি হচ্ছে সবছেয়ে অভিজাত এবং সর্বাধিক দামী মডেল যেটি আপনার ঘরের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এনে দিবে। এই মডেলটি সাধারনত প্রচলিত বড় ওভেনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। কম্বিনেশন মডেলগুলোতে সাধারনত দুইটি চলা এবং নিচের দিকে টান দিয়ে খোলার দরজা থাকে এবং এগুলো নিখুত স্টেনলেস ডিজাইনের হয়।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে যেগুলো করা যাবে না: মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে ডিম সিদ্ধ করতে পারবেন না কারন এটি ওভেনের ভিতরে বিস্ফোরিত হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আপনি মাইক্রোওয়েভ ওভেন এ কোন কিছু বেশি কড়া করে ভাজতে পারবেন না। কড়া করে ভাজার সময় তেল অতিরিক্ত গরম হয়ে পরবে যেটা থেকে আগুন ধরে যেতে পারে। তাই আপনার মাইক্রোয়েভ ওভেন এ কোন কিছু কড়া করে ভাজা উচিত হবে না। উপরের বিষয়গুলোও ছাড়াও মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর জন্য নির্দিষ্ট বাসন-কোসন ব্যবহার করাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
বিক্রয় পরবর্তী সেবা: কোন অনুমোদিত ডীলার বা সরবরাহক এর কাছ থেকে মাইক্রোয়েভ ওভেন কেনার আগে তাদের সেবা বিশেষ করে বিক্রয় পরবর্তী সেবা সম্পর্কে ভালভাবে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।