আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, অন্যদিকে সুদকে করেছেন হারাম। মানুষ তার হালাল ব্যবসার মাঝেই নিজের সুখ, শান্তি ও আত্মার প্রশান্তি লাভ করে। কিন্তু এ ব্যবসার পরিধি আজ অনেক শাখা-প্রশাখায় ছড়ানো। হরেক রকমের ব্যবসায় আজ মানুষ জড়িত। ডিজিটালের এ যুগে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যন্ত অনলাইনে এবং অফলাইনে চলছে অনেক ধরনের ব্যবসা।
যার কিছুকে ইসলাম সমর্থন করছে আবার কিছুকে ইসলাম পুরোপুরি সমর্থন করছে না। এর মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ একটি ব্যবসা হলো, স্টক বা গুদামজাত ব্যবসা। যাকে আরবি অভিধানে বাইয়ে ইহতিকার বা গুদামজাত বা রাখি মালের ব্যবসা বলা হয়। উদহারণত যেমন, কেউ ৭ লাখ টাকার শুঁটকি কিনে রাখল এ উদ্দেশ্যে যে, ২০ দিন পর দাম বেড়ে গেলে তা বিক্রি করে দেবে।
অথবা ৪ লাখ টাকার ভুট্টা কিনে রাখল, ১০ দিন পর দাম বেড়ে গেলে বাজারে বেচে দিল। তো এই পন্থানুসরণ করে বেচাকেনা করার ব্যাপারে শরয়ি জায়েজ-নাজায়েজ উভয় সুরতই রয়েছে। আর তা এভাবে যে, যদি মানুষ বা প্রাণীদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ক্রয় করে এমনভাবে স্টক করে রাখা হয় যে, যার দ্বারা মানুষ বা প্রাণীর ক্ষতি হয় তবে এই স্টক মাকরুহে তাহরিমি।
যেমন, কেউ মানুষ বা প্রাণীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ক্রয় করে এমনভাবে স্টক করে রাখল যে, বিশেষ প্রয়োজনের মুহূর্তেও (অর্থাৎ যখন ওই মালের অভাবে মানুষ ও অন্য প্রাণীদের কষ্ট হয় বা দুর্ভিক্ষের সময়) আরও বেশি মুনাফার আশায় বিক্রি করল না। এটাই নিষিদ্ধ গুদামজাত।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাল আটকে রেখে জিনিসপত্রের মূল্য প্রচুর বৃদ্ধি পেলে বা দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেলে মানুষ ও প্রাণীদের দুঃখ, কষ্ট ও অসহায়ত্বকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজে লাভবান হওয়া। এটা শরিয়তে নাজায়েজ।
তবে কেউ যদি নিজের উৎপাদিত প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র জমা করে রাখে বা দূরবর্তী এমন এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র ক্রয় করে এনে জমা করে রাখে, যেখান থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তা সাধারণত আমদানি করা হয় না অথবা আরেক সুরত হলো, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র ছাড়া অন্য কিছু জমা করে রাখে।
তবে এ দুসরতে তা নাজায়েজ গুদামজাত বা ইহতিকার এর মধ্যে পড়বে না। কিন্তু এমতাবস্থায়ও যদি মানুষ বা প্রাণীদের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয় তবে সম্পদ আটকে না রেখে ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করাই ইসলাম ও মনুষ্যত্বের দাবি।
(মুসলিম, হাদিস নং ৪২০৭; সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ১২৬৭; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬০৬-৬০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২১৩; আল বাহরুর রায়েক ৮/২০১-২০২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/১৯)।