রিচার্ড ব্র্যানসনকে বলা হয় “the rebel billionaire” এবং সত্যিকারার্থে এই নামটির জন্যে তিনিই পারফেক্ট। বোল্ড বিজনেস ডিসিশান নেয়া এবং ভয়ংকর এডভেঞ্চারাস শখের জন্যে বিখ্যাত ব্রানসন এমন একজন মানুষ যিনি রিস্ক নিতে ভয় পান না। ১৬ বছর বয়সে ব্র্যানসনকে যখন স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয় তখন বিজ্ঞ হেডমাস্টার সাহেব বলেছিলেন, ‘হয় তুমি জেলে যাবে না হয় কোটিপতি হবে’। ব্র্যানসনের বিজনেস ভেঞ্চারের প্রথম বছরেই এই দুই ভবিষ্যৎবাণীর একটি, জেলে যাওয়ার ব্যাপারটি সত্যি হয়েছিল!
তার প্রথম ভেঞ্চার Virgin Mail Order কে ব্যর্থ বললে কম বলা হয়। কাজ ছিল কমদামে মিউজিক রেকর্ড কুরিয়ার করা। একদিন ব্র্যানসন একটা বড় অর্ডার পেলেন বেলজিয়াম থেকে। ইউকে থেকে বেলজিয়ামের পথে ব্রানসন নিজেই রওয়ানা হলেন। তখনকার ইউ কে ট্যাক্স আইন অনুসারে, ব্রানসন রেকর্ডগুলো কিনতে পেরেছিলেন অনেক কম দামে যেহেতু সেগুলো ইউকে’র বাইরে বিক্রি হবে। ঝামেলাটা বাধলো তখন যখন পথে ফ্রেঞ্চ অথোরিটি কাগজপত্র দেখতে চাইলো যেটা ব্রানসনের কাছে ছিল না। অগত্যা তাকে আবার ইউকে ফিরে আসতে হলো। ফেরার পথে তার মাথায় একটা চোরা বুদ্ধি এলো।
ট্যাক্স ফ্রি রেকর্ডগুলো যে আবার ইউকে ফিরে এসেছে এটা তো কেউ জানে না, তাইলে এগুলো এখানেই বিক্রি করে ফেললে প্রফিট মার্জিন অনেক, হ্যাঁ, এটা অবশ্যই অপরাধ, কিন্তু ব্র্যানসন তখন ঋণে জর্জরিত, তিনি ভাবলেন এরকম দুই–চারটা দাও মারতে পারলে সকল ঋন অনায়াসে শোধ করে দেয়া যায়। যা ভাবা সেই কাজ, ব্র্যানসন শুরু করলেন এই শর্টকাট। ট্যাক্স ফাকি দেয়া রেকর্ডের পাহাড় জমতে থাকলো তার গোডাউনে।
এরকম সময় একদিন একটা ফোন এলো, পরিচয় প্রদানে অনাগ্রহী একজন ফোনের ওই প্রান্ত থেকে জানালেন আগামি কাল ব্রানসনের ফ্যাক্টরিতে কাস্টমস কতৃপক্ষ হানা দিতে যাচ্ছে। ব্র্যানসন গায়ে মাখলেন না, কেউ দেখে বুঝতেই পারবে না কোনটা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া রেকর্ড আর কোনটা সাধারন রেকর্ড। কিন্তু হাসি মুছে গেল যখন শুনলেন এক্সপোর্টের রেকর্ডগুলোতে “E” মার্ক করা থাকে যা শুধু UV লাইটেই বোঝা যায়।
এইবার ব্র্যানসনের কপালে চিকন ঘাম দেখা গেল, পার্টনারকে নিয়ে ওই রাত্রে বের হলেন ফ্যাক্টরিতে, হাতে সদ্য কেনা UV লাইট। সারা রাত ধরে “E” মার্ক করা রেকর্ড আলাদা করা হলো, তারপর ভোরের আগেই সরানো হলো অক্সফোর্ডে অবস্থিত তাদের আরেকটা শপে আর সকালবেলা ব্রানসন দাঁড়িয়ে থাকলেন হাসিমুখে কাস্টমস অফিসারদের স্বাগত জানাতে।
কাস্টমস অফিসাররা কিছুই পেলেন না আর ব্রানসন গোঁফের আড়ালে হাসতে থাকলেন। কিন্তু হাসি মুছে যেতে বেশি সময় লাগলো না যখন তিনি আরেকটি ফোন পেলেন এবং জানলেন অক্সফোর্ডের শপেও একইসাথে কাস্টমস হামলা হয়েছে! ব্রানসনকে গ্রেফতার করা হলো, জরিমানা হলো ৬০,০০০ পাউন্ড যা চিকনা পথে কামানো টাকার প্রায় ৩ গুন। হাজতে নির্ঘুম রাত কাটাতে গিয়ে জীবনের চরম শিক্ষা নিলেন।
ব্রানসন শিক্ষা নিলেন জীবনেও আর এমন কাজ করবেন না যাতে তাকে অপদস্থ হতে হয়, জেলে যেতে হয়। তার পরবর্তী জীবনে এরকম অনেক অবস্থা তৈরি হয়েছিল যে ঘুষ দিলে বা আইনের ছোটখাট এদিক–সেদিক করলে লাভবান হতে পারতেন কিন্তু তিনি তা কখনো করেননি। এদিক–সেদিক করে হয়তো কিছু টাকা বানানো যায়, কিন্তু লং রানে আদতে লাভ হয় না। ব্যবসায় আর জীবনে শর্টকাট বলে কিছু নেই। If there are no shortcuts in life, then life is too short to think small!
তাই ব্রানসনের শিক্ষার ব্যাপ্তিটা আরো বড় ছিল। তিনি জানতেন যে অনিয়ম তার রক্তে, এটাই তার শক্তি কিন্তু তা হতে হবে নিয়মের মধ্যে থেকেই। তিনি বড় চিন্তা করতেন কিন্তু প্রচলিত নিয়মের একটু ব্যতিক্রম করে, এবং অবশ্যই আইনের মধ্যে থেকে। আর তাই তিনি যে ব্যবসায় হাত দিয়েছেন সেখানেই চ্যালেঞ্জ করেছেন প্রচলিত ব্যবসার ধারাকে।
রেকর্ড স্টুডিওকে তিনি বিরক্তকর কাজের জায়গা থেকে বানিয়েছেন আর্টিস্টদের থাকার জায়গা, তৈরি করেছেন স্পেস যাতে ক্রিয়েটিভিটি বিকাশে সহায়ক হয়।
এয়ারলাইন্স ব্যবসাতে তিনি নিয়ে যোগ করেছেন ব্যক্তিগত আনন্দের জায়গা যাতে জার্নি বিরক্তিকর না হয়ে ওঠে। রেকর্ড স্টোরকে এত বড় বানিয়েছেন যাতে লোকজন রেকর্ড কিনতে এসে হারিয়ে যায়। কর্পোরেট CEO-র গুডি বয় ইমেজ থেকে পাবলিক পাগলামি যোগ করেছেন তিনি। আর এভাবেই তিনি ডজন ডজন ব্যবসা দাড়া করিয়েছেন, Virgin Megastores, Virgin Records, Virgin Airlines, Virgin Holidays, Fuel, Money, Digital, Cosmetics, Trains, Healthcare, Virgin Galactic, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে। (একটা জিনিস কমন ছিল শুধু, Virgin)
ব্যর্থ ভেঞ্চারও যে ছিল না তা নয়, Virgin Cola (আমাদের দেশে এটা এখনো চলে), Virgin Brides, Virgin Clothes, Virgin Vodka।কিন্তু ব্যর্থতা এমন জিনিস যেটা ব্রানসন কখনো ভয় পান নি। তিনি স্বীকার করেন, তার জীবনে সেরা যে ঘটনা ঘটেছে সেটা হলো তার জেলে যাওয়া।
তথ্যসুত্র: কর্মজীবন ডটকম।