ক্রমবর্ধমান সংকটের কারণে দোকান বন্ধের হিড়িক পড়েছে যুক্তরাজ্যে। গত বছর ফাঁকা দোকানের সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ৫০০-এরও বেশি দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে লোকাল ডাটা কোম্পানি (এলডিসি)। খবর গার্ডিয়ান।
শত শত ব্যাংক, পানীয় দোকান, রিয়াল এস্টেট কোম্পানি, ফ্যাশন শপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সেলুন, বিউটি শপ, ভ্যাপিং স্টোর, ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ কিংবা বারের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রথম সারির ৬৫০টি কেনাকাটার জায়গার ওপর চালানো এলডিসির জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
নতুন দোকান, রেস্তোরাঁ, বার ও অন্যান্য খুচরা জিনিস বিক্রয়কারী দোকান খোলার সংখ্যা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৪৩ হাজার ২৭৮-এ দাঁড়িয়েছে। বন্ধ হওয়া দোকানের সংখ্যা সামান্য বেড়ে ৫০ হাজার ৮২৮-এ দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৮ সালের নিট বন্ধ হওয়া দোকানের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থাটির মতে, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ।
সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থার মুখে পড়েছে বহুমুখী চেইন শপগুলো। পাউন্ডওয়ার্ল্ড, ম্যাপলিন, টয়েস আর আস ও মাল্টিইয়র্কের অবস্থা অত্যধিক খারাপ হয়ে পড়ায় তারা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। নিউ লুক, কার্পেটরাইট ও মাদারকেয়ার দোকান বন্ধ ও ভাড়া কর্তন করতে এরই মধ্যে মালিকপক্ষের সঙ্গে আইনি চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে।
খরচ বৃদ্ধি, মন্থর ব্যয় ও ভোক্তাদের দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মতো আরো বিভিন্ন কারণে গোরমিট বার্গার কিচেন, প্রতিদ্বন্দ্বী বার্গার চেইন বায়রন এবং একই সঙ্গে জ্যামিজ ইতালিয়ান, কার্লোসিয়োস ও প্রেসসো গ্রুপের মতো নামিদামি রেস্তোরাঁ গ্রুপ তাদের অনেক শাখা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
২০১৯ সালেও এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডেবেনহ্যামস ও ফিলিপ গ্রিনের আর্কেডিয়া এম্পায়ার কয়েক ডজন দোকান বন্ধ করার জন্য দোকানের মালিকপক্ষের কাছে আবেদন করবে। ২০২২ সাল নাগাদ মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার গ্রুপও ১০০ দোকান বন্ধ করে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
এলডিসির খুচরা বিক্রয় ও স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের প্রধান লুসি স্টেইনটন জানিয়েছেন, পরিবর্তনের দিক থেকে ২০১৮ ছিল নজিরবিহীন আরেকটি বছর। ব্যবসার জগতে নতুন ধারণা চলে আসার ফলে ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে পুরনো অনেক ব্র্যান্ড। ব্যবসা কাঠামোর অবিরাম এসব পরিবর্তনের কারণে পাকাপোক্ত কোনো ভিত্তি তৈরি হতে পারছে না। ফলে অধিকাংশ অপারেটরের জন্য ব্যবসা চালানো যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।
পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা, ভাড়া ও ট্যাক্স বেড়ে যাওয়ার সম্মিলিত কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্রেতাদের অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝোঁকা এবং অবকাশ কাটানোর প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আসায় এ শিল্পে বড় কিছু পরিবর্তন আসছে। এখন ক্রেতারা শপিং সেন্টারে যাওয়ার চেয়ে ঘরে বসেই খাবার ও পানীয় গ্রহণের অভিজ্ঞতা নিতে চাইছেন।
এ সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টেসকো অনলাইন বিক্রয়ের ওপর ২ শতাংশ কর আরোপ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। এটা কার্যকর হলে দোকানের ক্ষেত্রে আরোপিত করের চাপ কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে। অনেকগুলো সংসদীয় তদন্ত সত্ত্বেও হাতেগোনা কয়েকটি পদক্ষেপ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
দোকান বন্ধের এ হিড়িকের মধ্যেও কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালো করেছে। গ্রেগস ও কার্ড ফ্যাক্টরির পর গত বছর সবচেয়ে বেশি নতুন দোকান চালু করেছে আলদি নামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালে তাদের শাখা ছিল ৬৫১টি, গত বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৫৪টি।
এলডিসি জানিয়েছে, দোকানের জায়গা থেকে ভালো আয়ের উদ্দেশ্যে মালিকপক্ষ এরই মধ্যে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে শুরু করেছে। তারা দোকানগুলোকে বাসাবাড়ি, গুদাম বা ব্যায়ামাগারে রূপান্তর করতে শুরু করেছে। তথ্যসূত্র: বনিকবার্তা।