পরিবার থেকে শুরু। প্রতিবেশীর দ্বারা অনুপ্রাণিত। তোমাকে পাশের বাড়ির আবুল/বাবুলের চেয়ে ভাল রেজাল্ট করতে হবে। এ হিংসা নাকি প্রতিহিংসা? ছেলে-মেয়ের মেধা ভাল। সাইন্স নিয়ে পড়াতে হবে। ভবিষ্যতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে। ছোট মানুষ ও! কি বুঝবে এগুলোর? বড়রা যা সিদ্ধান্ত দিবে ছেলে মেয়ে ভবিষ্যতে তাই হবে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না হলে বাবা-মায়ের নাক কাটা যাবে। মান-সম্মান আর থাকবে না। ছিঃ ছিঃ করবে লোকে।
একবারও কি ভেবে দেখেছেন কোথায় ঠেলে দিচ্ছেন আপনার আদরের সন্তানকে? উজ্বল ভবিষ্যতের চিন্তা করে কত ভারী বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন তার কাধে? সন্তানের সম্ভাবনার সবটুকু নীরবে হত্যা করে, তাকে চালিত করছেন যন্ত্রের মত আপন উল্লাসে। ছেলে-মেয়ের ভারী ভারী প্লাস ওয়ালা রেজাল্ট শিট অর্জন করাই কি লক্ষ? প্রকৃত শিক্ষার কতটুকু শিখতে পারছে কিংবা যা শিখছে আদৌ তা কি আনন্দের সাথে সাচ্ছন্দে শিখছে? ওহ আপনি তো আছেন পাশের বাড়ির ছেলে-মেয়েকে নিয়ে! ওর মত হও! ওকে দেখে শেখো!
অন্যের মত কেন হতে হবে? অন্য একজনের যা ভাল লাগবে তা আপনার ভাল নাও লাগতে পারে। অন্য একজনের যা পছন্দ, আপনার তা অপছন্দের হতে পারে। অন্যের চিন্তার সবটা যে আপনার কাজে আসবে তা কিন্তু নয়। পাশের বাসার ছেলে-মেয়ের মেধা ভাল। অংক ভাল বোঝে। তাই বলে যে আপনার ছেলে-মেয়েরাও অংক ভাল বুঝবে এটা কিভাবে ভাবেন? আপনার ছেলে-মেয়ে হয়তো ফিজিক্স কিংবা কেমিষ্ট্রি ভাল বুঝে। হয়ত এগুলোর কোনটা ভাল না লাগলেও অন্য কোন বিষয়ে তাদের ভাল লাগে। খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন কি কখনও, তাদের ভাল লাগার বিষয়টি কি?
লেটোর দলে যোগ দিয়ে, রুটির দোকানে কাজ করে সবাই নজরুল হতে পারে না। ভার্সিটি ড্রপ আউট করলে ষ্টিভ জবস হওয়া যায় না। কাঠুরিয়ার কাজ করলেই আব্রাহাম লিংকন হওয়া যায় না। জুতার দোকানে কাজ করে সবাই ম্যাক্সিম গোর্কি হতে পারে না। একই চেহারায় যেমন দুটো মানুষ হয়না তেমনি একজন আরেক জনের মত হতে পারে না। একই ক্লাশের সবাই যেমন প্রথম হতে পারে না তেমনি পাশের বাড়ির ছেলে-মেয়ের মত আপনার ছেলে-মেয়ে হতে পারবে না। সহজ একটা বিষয়কে কেন জটিল করে তুলেন?
আপনার সন্তানের অর্জনকে কি কখনও প্রশংসা করতে পেরেছেন? তার অর্জনকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছেন কতটুকু? আপনার সন্তানের চাহিদা পূরণ করে চলেছেন সত্য কিন্তু তার মানুষিক চাহিদার কতটা পূরণ করতে পেরেছেন? কাধে ভারী ব্যাগের বোঝা দিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওর মত হও! ওকে দেখে শেখো!
একটা ছেলে মেয়েকে যখন তার অর্জনের জন্য তিরস্কার করা হয়! অন্যের অর্জনের চেয়ে ছোট করে দেখে তুলনা করা হয়! তখন তার মনের মধ্যে দিয়ে কি বয়ে যায় একবার ভেবেছেন কি? প্রতিবছর এসএসসি, এইচএসসি ফলপ্রকাশের পর এতগুলো আত্মহত্যার খবর কেন পত্রিকার পাতায় দখল নেয়? ফলাফল তো খারাপ হতেই পারে! কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার মধ্যে সে কেন আনন্দ খুজবে? কেন মুক্তি পেতে চাইবে? আপনার আমার প্রতিযোগীতার বলি হয় কোমলমতি এসকল শিক্ষার্থীরা।
মেধাবিকাশের যে সময়ে আপনার সন্তানেরা থাকবে হাসিখুশি সে সময়ে তাদের অনেকের মধ্যে বিরাজ করে বিষন্নতা। মা-বাবার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে নিজের মেধাশক্তির সম্পূর্ণটা বিকশিত করতে ব্যর্থ হয়। একটা দীর্ঘ সময় প্রতিযোগীতার মনোভব নিয়ে চলার কারনে, একটা সময় এসে কাউকেই সে বন্ধু ভাবতে পারে না। সবাইকে তার প্রতিযোগী মনে করে। নিজেকে বন্দি কিংবা ব্যর্থ ভেবে মুক্তি পেতে চায় আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজ করে।
সময় এখনই। টেনে ধরুন প্রতিযোগীতার এ লাগাম। আপনার সন্তানের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভাল লাগা না লাগার গুরুত্ব দিন। প্রতিবেশীর সাথে তুলনা না করে সহযোগী সম্পর্ক তৈরীতে সাহায্য করুন। খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন আপনার সন্তানের প্রতিভা কোন দিকে? সেদিকে তাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে থাকুন। পেশা হিসেবে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এমন নয় কৃষকের কাজেও সম্ভাবনা আছে। মুক্ত হতে দিন তাকে। উড়ে বেড়ানোর জন্য একটা আকাশ নয়, আকাশের ওপরেও তার সম্ভাবনার সীমানা রয়েছে!
লেখক:
মোঃ মাসুদুর রহমান মাসুদ
উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম।