২০০৯ সালের কথা। স্নাতক পাঠ শেষ করার পর আমি চাকরির সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একের পর এক ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছি। একটি চাকরি ভয়ানকভাবে দরকার আমার। তা না হলে আমাকে তল্পিগল্পা গুছিয়ে ওয়াশিংটন থেকে ফিরে যেতে হবে নিজ শহর ক্যালিফোর্নিয়ায়। আমার তখন কেবলই দেরি হয়ে যাচ্ছিল, কোনো চাকরি মিলছিল না।
এরকম ক্রান্তিকালীন সময়ে আমি হুট করেই সিদ্ধান্ত নিই, একটা জনসংযোগ কার্যাংলয় (পাবলিক রিলেশন ফার্ম) করব। আমার সম্বল বলতে তখন ২০০ ডলার আর বিপণনে সহজাত আগ্রহ। এইটুকু মাত্র সম্বল নিয়ে একেবারে অজানা অচেনা ঝুঁকির মধ্যে একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তারপর শুধু পরিশ্রম আর পরিশ্রম। বছর ছয়েক পর দেখলাম ‘কার্টলার পাবলিক রিলেশন ফার্ম’ নিউিইয়র্কের সবচেয়ে পরচিত আর জনপ্রিয় একটা ফার্মে পরিণত হয়েছে।
আর দশজন উদ্যেক্তার মতো আমিও শুরু করেছিলাম খুব ক্ষুদ্র পরিসর থেকে, খুব সামান্য পুঁজি নিয়ে। আমি মনে করি, ব্যবসায় সাফল্য লাভের সুনির্দিষ্ট কোনো বিনিয়োগ-বাজেট নেই। অর্থাৎ শুরুতেই কী পরিমাণ অর্থ বিনিযোগ করলে একটি ব্যবসায় সফল হবে তার ধরাবাঁধা কোনো বাজেট নেই। তবে ব্যবসায়ের শুরুতেই যদি পাঁচটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা যায়, আশা করা যায় ব্যবসায় সাফল্যের মুখ দেখবে।
১. ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক : যে কোনো ব্যবসা দাঁড় করানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ‘আইডিয়া’ খুঁজে বের করা এবং তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইডিয়াটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। একটি ভালো আইডিয়া ছাড়া কোনো কোম্পানি দাঁড় করানো বাস্তবিক অর্থেই কঠিন একটা ব্যাপার। আমি মনে করি, এ জন্য উদ্যেক্তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ককে ব্যাবহার করা প্রয়োজন।
যখন আমি ব্যবসা শুরু করি তখন আমার পরিচিত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমি কী করতে যাচ্ছি সে ব্যাপারে তাদের জানিয়েছিলাম, এমনকি তাদেরকে এ-ও বলেছিলাম, আপনাকে কিন্তু আমার প্রথম গ্রাহক হতে হবে! এভাবে আমি প্রথমেই তিনজনকে পেয়ে গেলাম যাদের একজন ছিল আমার আত্মীয়, আরেকজন ছিল যার কাছে কলেজে পড়ার সময় আমি ইন্টার্নশিপ করেছিলাম এবং শেষজন ছিল আমার এক বন্ধু।
এখন আমাদের গ্রাহক সংখ্যা চল্লিশের ওপর। সুতরাং ব্যবসার শুরুতেই গ্রাহক জোগাড় করো।
২. ছড়িয়ে পড়ো : শুরুতে একজন উদ্যেক্তাকে বিভিন্ন দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে হয়। ডাল-পালা মেলে দিতে হয়। মনে রেখ, পুঁজি বা অর্থই ব্যবসা দাঁড় করানোর একমাত্র প্ল্যাটফর্ম নয়। কখনো কখনো পরামর্শক, স্বেচ্ছাসেবী এবং অফিসের কর্মীরাই ব্যবসা দাঁড় করানোর মূল হাতিয়ার হতে পারে।
প্রথমদিকে আমি অ্যাকাউনিটং সফটওয়্যারের জন্য কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নিতাম না। এটা বিনামূল্যে দিতাম। কারণ এর মাধ্যমে আমি আমার গ্রাহকদের সন্তুষ্ট রাখতে পারতাম। তাই নতুন উদ্যেক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ, প্রয়োজনীয় খাতে খরচ করতে কখনো ভয় পেয়ো না। তবে কোথায় সঞ্চয় করতে হবে সে পদ্ধতিও জানতে হবে তোমাকে।
৩. উপদেশ তালাশ করো : মানুষের মাঝে ব্যর্থতা ও সফলতা তালাশ করো। খুঁজে দেখ, একজন মানুষ একটা কিছু করতে গিয়ে কেন ব্যর্থ হলেন কিংবা একজন মানুষ কেন সফল হলেন। এসবের ভেতর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। ব্যর্থতা কাটিয়ে যারা সফল হয়েছে তাদের কাছ থেকে উপদেশ নাও।
ব্যবসা সংক্রান্ত প্রচুর প্রবন্ধ-নিবন্ধ পড়ো এবং বই পড়ো। আর হ্যাঁ, মনে রেখ, ব্যবসাকে গতিশীল রাখার মন্ত্র একজন ব্যবসায়ীই ভালো বলতে পারবেন। তাই বিভিন্ন ধরনের জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রচুর সময় ব্যয় করো। ছলেবলে কৌশলে তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতার গল্প বের করো। তাকে কখনোই বুঝতে দিয়ো না তুমি তার একজন ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বী। এসব ক্ষেত্রে তোমাকে অবশ্যই অনেক কৌশলী হতে হবে।
৪. ব্যতিক্রমী অফার দাও : প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই গ্রাহকদের জন্য ভিন্ন ধরনের অফার দিতে হবে। প্রচলিত অফার দিয়ে ব্যবসায় সফল হওয়া কঠিন। কোনো ধরনের ব্রান্ড ভ্যালু ছাড়াই একটি পণ্যকে কীভাবে গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে? এজন্য তোমাকে অবশ্যই ব্যতিক্রমী অফার দিতে হবে।
৫. সৃজনশীল হও : সবার আগে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সৃজনশীল হও। একই ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসায় নামলে সেই পণ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ভিন্নতা রাখতে হয়। সেই ভীন্নতা আনার জন্য তোমাকে সৃজনশীল হতে হবে। নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্যের মূল্য নির্ধারন এবং গুণাগুন রক্ষা করে গ্রাহকের মন জোগানো সত্যিই খুব দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার। এ জন্য সৃজনশীল হওয়ার বিকল্প নেই।
ভাষান্তর মারুফ ইসলাম।
এন্টারপ্রেইনার থেকে সংক্ষেপিত।
তথ্যসূত্র: দি প্রমিনেন্ট ডটকম।