লবণ, চিনি আর ভাত—এই তিন খাবারকে পুষ্টিবিদেরা ‘সাদা বিষ’ বলছেন। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ যদি লবণ, চিনি আর ভাত বেশি পরিমাণে খায়, তাহলে দ্রুত মোটা হয়ে যাবে, যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সুস্থ থাকতে হলে পরিমাণমতো খেতে হবে এই তিন ‘সাদা বিষ’।
বারডেম হাসপাতালের সাবেক প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার আলো বলেন, চিনি, লবণ বা চাল সাদা করতে গিয়ে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এতে এই তিন খাবারের প্রাকৃতিক গুণাবলি আর থাকে না। এ কারণে এই তিন খাবার মানুষকে মোটা করে দেয়।
উদাহরণ দিতে গিয়ে আখতারুন নাহার বলেন, ‘আমরা যে লবণ ও চিনি খাই, তা দেখেতে ধবধবে সাদা। প্রাকৃতিকভাবে যে লবণ সংগ্রহ করা হয়, তা কিন্তু তত সাদা নয়। এটি সাদা করার জন্য হাইড্রোস ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক দিয়ে পরিশোধন করা এই লবণে সোডিয়াম বেশি থাকে, যা শরীরের কোষে কোষে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে মানুষ মোটা হয়। তাই বেশি লবণ খেলে মানুষ মোটা হতে থাকে, যা মানুষ নিজেও জানে না।’
একইভাবে আখের রস থেকে যে চিনি তৈরি হয়, তা কিছুটা বাদামি রঙের। এই চিনিতে আয়রন থাকে। কিন্তু সাদা করার জন্য হাইড্রোসের ব্যবহারে চিনির ওপরের আয়রন চলে যায়। ওই পরিশোধন করা চিনিতে শুধু কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা মানুষকে মোটা করে তুলতে সহায়তা করে।
চাল সাদা করলে মানুষ তাতে আকৃষ্ট হয় বেশি। তাই চাল সাদা ও ঝরঝরে করতে বিক্রেতারা তাতে রাসায়নিক ব্যবহার করেন। এতে চালের ওপরের ভিটামিন বি-১ ও অন্যান্য ভিটামিন চলে গিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা মানুষকে মোটা করে। আখতারুন নাহার বলেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। স্থূলতা কাটাতে বেশি বেশি সাদা ভাত, চিনি বা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
সাদা ভাত, চিনি ও লবণ বেশি খাওয়ার বিষয়ে আরও বেশ কিছু দিকের কথা জানালেন বিআরবি হাসপাতালের পথ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান ইসরাত জাহান। তিনি বলেন, চাল অতিরিক্ত সাদা করার কারণে সেই চাল থেকে রান্না হওয়া ভাতে কার্বহাইডেট ছাড়া আর তেমন কোনো পুষ্টিগুণ থাকে না। এ জন্য এই খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। এতে মানুষের ক্ষুধা বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে মানুষের বেশি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এ কারণে মানুষ দ্রুত মোটা হয়ে যায়।
ইসরাত জাহান বলেন, বেশি চিনি খেলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। এই চিনি রক্তের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে মানুষের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়, ডায়াবেটিকস ও স্ট্রোক হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত চিনি পেটে থাকা চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে মানুষ মোটা হতে থাকে। এ থেকে নানা ধরনের রোগের জন্ম হয়।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে মানুষের নানা ক্ষতির দিক তুলে ধরে ইসরাত বলেন, প্রতিদিন একজন মানুষ পাঁচ গ্রাম বা এক চা-চামচ লবণ খেতে পারেন। এর বেশি খেলে সেটি ক্ষতি করে। এই অতিরিক্ত লবণ শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন হৃদ্রোগ রোগ সৃষ্টি হয়। বেশি লবণ বিশেষ করে বয়স্ক লোকের বেশি ক্ষতি করে।
ভাত বা চিনির বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক চিনি খেলে শরীরের জন্য ভালো হয় বলে জানালেন ইসরাত জাহান। ফল খেলে শরীরের চিনির ভারসাম্য ঠিক থাকে। তাই প্রতিদিন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। রং চা চিনির পরিবর্তে দারুচিনি দিয়ে খাওয়ার কথা জানালেন তিনি। এতে শরীরে চিনির পরিমাণ ঠিক থাকবে। এ ছাড়া বাদামি চালের ভাত খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। তাঁর মতে, এই চালের ভাতে আঁশ থাকে, যা খেলে দ্রুত ক্ষুধা লাগবে না এবং কার্বহাইডেট কম বলে তা শরীরের ক্ষতিও করবে না।
ইসরাত বলেন, সব খাবারই পরিমাণের বেশি খেলে ক্ষতি করতে পারে। তবে সাদা ভাত, চিনি ও লবণ—এই তিন সাদা খাবার বেশি খাওয়া থেকে দূরে রাখতে হবে নিজেকে। তাহলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।