বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আর নেই। আজ বুধবার তিনি মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। পরিবারের সদস্যদের বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন।
স্টিফেন হকিং পৃথিবীর সেরা মহাকাশবিজ্ঞানীদের একজন, যাঁর লেখা ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের একটা। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর ও আপেক্ষিকতা নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত ছিলেন ব্রিটিশ এই পদার্থবিদ।
লুসি, রবার্ট ও টিম নামে স্টিফেন হকিংয়ের তিন সন্তান। তাঁরা বলেছেন, ‘আমরা গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় বাবা আজ মারা গেছেন। তিনি বিখ্যাত এক বিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর কাজ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে।’
স্টিফেন হকিংয়ের ‘সাহস ও অধ্যাবসায়ের’ প্রশংসা করেন তাঁর সন্তানেরা। তাঁরা বলেন, ‘হকিংয়ের প্রতিভা এবং রসবোধ বিশ্বব্যাপী মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে অন্যতম সেরা তাত্ত্বিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় স্টিফেন হকিংকে। তাঁর জন্ম হয়েছিল ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে, ৮ জানুয়ারি ১৯৪২ সালে। দুরারোগ্য মোটর নিউরন ব্যাধি ছিল স্টিফেন হকিংয়ের। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা তাঁকে রুখতে পারেনি। আইনস্টাইনের পর হকিংকে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। মা ইসাবেল হকিং ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন, হকিং বড় হয়ে চিকিত্সক হোক। ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞান আর গণিতে। এরপরও মহাবিশ্বের অজানা বিষয়গুলো নিয়ে সব সময় উত্সুক ছিলেন তিনি। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিওরি’র প্রবক্তা বলা হয় স্টিফেন হকিংকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক পদ থেকে ২০০৯ সালে অবসর নেন। রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিকাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৮৮ সালে ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন হকিং। বইটিতে তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টি–রহস্য নিয়ে তত্ত্ব দেন। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্টসেলার হিসেবে বইটির এক কোটি কপি বিক্রি হয়। মহাবিশ্ব নিয়ে প্রকাশিত তাঁর আরেকটি বই ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’।
প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ান্স পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার, উলফ পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক, হিউ পদক, আলবার্ট আইনস্টাইন পদকসহ এক ডজনেরও বেশি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
হকিংয়ের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে দেওয়া। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব কাজ করে মহাজগতের অতিকায় বস্তু নিয়ে আর কোয়ান্টাম তত্ত্বের বাহাদুরি হচ্ছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতে।