1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

অনিয়মের অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হলেন সিটি ব্যাংকের এমডি

নিজের বেতন বাড়ানো, বাড়তি মেয়াদে গৃহঋণ নেওয়া, বেতনের হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন, নিয়ম লঙ্ঘন করে পছন্দের কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ায় বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ ছাড়তে হয়েছে সোহেল আর কে হুসেইনকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশদ পরিদর্শনে সোহেলে আর কে হুসেইনের এসব অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনের কারণেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক। জানা যায়, ২০০৭ সালে সিটি ব্যাংকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগ দেন সোহেল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান।

দ্বিতীয় দফায় সোহেল হুসেইনের এমডির দায়িত্ব পালনের মেয়াদ ছিলো চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। পর্ষদের চাপে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ মাস আগেই পদত্যাগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় একমাসের ছুটিতে যান সোহেল আর কে হুসেইন। দুইদিন পর ১৬ জানুয়ারি তিনি পদত্যাগ করেন। ছুটিতে যাওয়া এবং পদত্যাগের আগে সোহেল হুসেইন চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

সূত্র বলছে, মাত্রাতিরিক্ত অনিয়মের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকটি বিধি নিষেধ লঙ্ঘিত হয়েছে সিটি ব্যাংকে। পর্ষদের কোনো সদস্য এমডির এসব অনিয়ম ভালো চোখে নেননি। যে কারণে পদত্যাগ না করে আর কোনো উপায় ছিল সোহেল আর কে হুসেইনের।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি মোতাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা থাকে। চুক্তির বাইরে এমডির আর কোনো সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু সোহেল আর কে হুসেইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্ধারিত বেতন-ভাতার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন। এভাবে বেতনের অতিরিক্ত প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে সোহেল আর কে হুসেইনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংক থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি ব্যাংক থেকে যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সোহেল হুসেইন বেতন নিতেন, সেই অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার প্রতিটি লেনদেনের পরিমাণ প্রায় অর্ধশত।

এমডির অ্যাকাউন্ট থেকে এসব টাকা এক সপ্তাহ পর অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা অর্থের উৎস জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পদত্যাগী এমডি সোহেল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০ বছর মেয়াদে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বাড়ি বানানোর (হাউস বিল্ডিং) ঋণ নিয়েছেন সোহেল আর কে হুসেইন। চাকরিকাল ৬০ বছর ধরে তাকে এই ঋণ ১৬ বছরের বেশি মেয়াদে দেওয়ার সুযোগ নেই। ঋণের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ বছর। এতে ঋণ আদায়ে অনিয়শ্চয়তার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাড়ি নির্মাণ ঋণ ছাড়াও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন সোহেল। প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে নেওয়া ঋণ ফেরত এবং বাড়ি বানানোর ঋণ সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে ঋণের বিপরীতে মামলা পরিচালনায় আইনগত ব্যয় বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৭ সালে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি টাকার বেশি। অথচ আগের বছর ব্যয় হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। মামলার পেছনে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে, সেই তুলনায় আদায় যৎসামান্য।

এছাড়া মামলা পরিচালনায় আইনজীবীদের খরচ বাবদ এককালীন ৬০ হাজার টাকার বেশি ছাড় করার সুযোগ না থাকলেও এমডির আদেশে কখনও কখনও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় করা হয়েছে। আর বারবার মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ঘুরে ফিরে কয়েকজন কর্মকর্তাই। মামলা পরিচালনায় অতিরিক্তি অর্থ ব্যয়ের কারণ জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে আইনজীবী পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সিটি ব্যাংকের লিগ্যাল বিভাগের প্রধান সাফায়েত উল্যাহকে যোগদানের দেড় বছরের মাথায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বেতন বাড়ানো হয়েছে ২৯ শতাংশ। এর আগে ব্যাংকের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে এত কম সময়ে পদোন্নতি দেয়নি সিটি ব্যাংক।

সাফায়েত উল্যাহ একই সঙ্গে ব্যাংক নিযুক্ত ল’ ফার্ম চৌধুরী অ্যান্ড উল্যাহর প্যানেলভুক্ত আইনজীবী। এ ঘটনায় সাফায়েত উল্যাহকে ব্যাংকের আইন বিভাগের প্রধান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যোগদানের ৫ মাসের মাথায় সাফায়েত উল্যাহকে ৭০ লাখ টাকা বাড়ি বানানোর ঋণ এবং আরও ৪০ লাখ টাকা বাণিজ্যিক ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ঋণ কতদিনে পরিশোধ করতে হবে, তার কোনো মেয়াদ উল্লেখ করা হয়নি। সীমা লঙ্ঘন করে এত দ্রুত ঋণ প্রদান বিধি বহির্ভুত হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান আব্দুল ওয়াদুদসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনারও নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে একদিনের বেতন কর্তনের মতো লঘু শাস্তি দেন এমডি। ওই কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কিছুদিন পর ওই কর্মকর্তার আবার বেতনও বেড়েছে ১৩শতাংশ। প্রতিবেদনের শেষ অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় সিটি ব্যাংক। সব সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পাশ কাটিয়েছে ব্যাংকটি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সোহেল আর কে হুসেইন তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি অন্য একটি ব্যাংকে যোগ দেওয়ার জন্যই পদত্যাগ করেছি।

More News Of This Category