1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

একটা ছবি ট্রাভেল ব্যবসায় সফলতা এনে দিয়েছে

রাধা ভিয়াস একটি ডেটিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচয় হওয়া ব্যক্তির সাথে যখন প্রথম দেখা করতে যান তখন জানতেন না যে, সেই রাতেই তার প্রেমে পরে যাবেন আর তখন থেকেই একসাথে ব্যবসা করার কথাও ভাবতে থাকবেন! ২০১২ সালে রাধার বয়স যখন ৩২, জুটি বানানোর ওয়েবসাইটে এমন একজনকে খুঁজে পান যারও কিনা তার মতোই ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। ঐ ব্যক্তির নাম লি থম্পসন।

ডেটিং-এর প্রথম দিনেই লন্ডনের একটি পানশালায় গল্প করতে করতে তারা খুঁজে পেলেন যে, ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী একাকী মানুষদের জন্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্র্যাভেলের ব্যবস্থা খুব বেশি নেই। এই বয়সীদের জন্যে খুব কমই ভাবে ভ্রমণ পরিকল্পনাকারীরা। মিজ রাধার যুক্তি ছিল যে, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের জন্যে দলবেধে পর্যটন বা ভ্রমণের যতটা ব্যবস্থা রয়েছে, তার বয়সী মানুষের জন্যে তেমন ব্যবস্থা নেই।

৩১ বছর বয়সী লি একমত হন, আর তখনই তারা এ নিয়ে পরিকল্পনায় মেতে ওঠেন। রাধা বলেন যে, “এরপর থেকে আমরা যতই এই সম্পর্কিত ব্যবসায়িক ধারণা বা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে থাকি, ততই আমাদের উত্তেজনা বাড়তে থাকে।” “আর এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা আমরা কেবল একটি জুটি হিসেবেই আবদ্ধ হয়ে পরলাম তা নয়, দেখা গেল আমরা ব্যবসায়িক অংশিদারও হয়ে গেছি।”

এখন তাদের পরিচয়, তারা বিবাহিত দম্পতির সাথে সাথে ‘ফ্ল্যাশ প্যাক’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক। যে প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৩০ ও ৪০ বছর বয়সী অন্তত ১০ হাজার মানুষকে দলবেধে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা ও জর্ডানে ভ্রমণে নিয়ে যায়।

যেভাবে শুরু হলো ব্যবসার চিন্তা: এমন ভ্রমণ ব্যবস্থার চিন্তা রাধার মাথায় এসেছিল একবার যখন সে একটি দলের সাথে কম্বোডিয়ায় গিয়েছিল। সেই দলটির অধিকাংশের বয়স ছিল বিশের কোঠায়। রাধা বলছিলেন, “দলটির সবাই খুব ভালো ছিল, কিন্তু তারা আমার থেকে এতটাই ছোট ছিল যে আমার ভাবনার সাথে তাদের মিল খুব বেশি ছিলনা।”

“তখনই আমার চিন্তা এল যে, কেউ কি আমার বয়সী মানুষদের জন্যে ছুটি কাটাতে কোনো ভ্রমণ পরিকল্পনা করছে?” প্রথম দেখার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রাধা এবং লি’র সম্পর্ক যত দানা বাঁধতে থাকে, সেই সাথে চলতে থাকে তাদের পর্যটন সংক্রান্ত ব্যবসা নিয়ে গবেষণা। তারা একমত হন যে তারা এতে সফল হতে পারবেন।

মিজ রাধা কাজ করতেন তহবিল সংগ্রহের একটি প্রতিষ্ঠানে আর মি. লি ছিলেন ফটো সাংবাদিক। তারা সেসব কাজের ফাঁকে ফাঁকেই সময় বের করেন তাদের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর জন্যে। তারা তাদের কোম্পানির নাম দেন ‘ফ্ল্যাশ প্যাক’ যার পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো “ফ্ল্যাশ ব্যাকপ্যাকিং” যা দিয়ে বোঝায় দ্রুত গোছগাছ করে বেরিয়ে পরা। আর প্রাথমিকভাবে দুজনে মিলে পুঁজি হিসেবে যোগাড় করেন ১৫ হাজার পাউন্ড।

যেভাবে ধরা দিল সাফল্য: কিন্তু সাফল্য শুরুতেই ধরা দেয়নি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যবসাটির জন্যে তারা প্রথম যখন ওয়েবসাইট চালু করেন, তখন মাত্র একজন সিয়েরা লিওনে দু:সাহসিক ছুটি কাটানোর জন্যে নাম লিখিয়েছিলেন। “ব্যবসার প্রথম ছয়টি মাস ছিল কষ্টকর,” রাধা বলছিলেন।

“আপনারা হয়তো রাতারাতি সাফল্যের অনেক গল্পই শোনেন, কিন্তু আমাদের বেলায় সেসব কিছুই হয়নি। আমরা সিয়েরা লিওনে ভ্রমণে পাঠাবার জন্যে মাত্র একজনকে পেয়েছিলাম। কিন্তু তার টাকা ফেরত দিয়ে দিতে হয়েছিল, কেননা সে যাত্রার আর কাউকেই পাওয়া যায়নি।” এরপর লন্ডন ভিত্তিক এই দম্পতির এই পর্যটন ব্যবসার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে, আর সেটি সম্ভব হয় লি-র একটি বিপণন ভাবনা থেকে।

ব্যাপারটি ঘটে ২০১৪ সালে ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ে, মি. লি একটি বিশেষ ছবি দেখে তার ভাবনাটি প্রথম মাথায় আসে। এ নিয়ে লি বলেন, “রিও ডি জেনিরোর উঁচু পাহাড়ে যীশু খৃষ্টের যে বিখ্যাত বিশাল মুর্তিটি আছে, তার ওপর থেকে একজন শ্রমিক একটি ছবি তুলেছিলেন, যেখান থেকে নিচে পুরো শহরটি চমৎকারভাবে দেখা যায়।”

“আমি জানতাম যে যদি আমিও সেখানে উঠে একটি সেলফি তুলতে পারি তবে সেটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরবে বা ভাইরাল হবে।” এরপর মি. লি ব্রাজিলের পর্যটন সংস্থার কাছ থেকে এমন একটি কাজ করার অনুমতি আদায় করেন। আর শহরটি থেকে ৭৩৮ মিটার বা ২হাজার ৪২১ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে নিজের একটি ছবি তোলেন।

আর তার প্রত্যাশা অনুযায়ীই ছবিটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে এটি ছড়িয়ে পরে। বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলো তার সাক্ষাতকার প্রচার করতে থাকে, আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যে, তাদের প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাশ প্যাকের ওয়েব সাইটে বাড়তে থাকে মানুষের তৎপরতা।

শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি মাসে একশ জনের মতো পর্যটকের জন্যে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতো। এরপর থেকে ব্যবসাটির প্রসার ঘটতে থাকে আর বর্তমানে এর প্রবৃদ্ধি হয়েছে চারগুণ। আজ ফ্ল্যাশ প্যাকের বার্ষিক আয় প্রায় ৪ মিলিয়ন পাউন্ড এবং সম্পদ ১০ মিলিয়ন পাউন্ড। সেইসাথে এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাইরের বিনিয়োগ, যদিও রাধা ও লি বেশিরভাগ অংশের মালিক।

ট্রাভেলজু নামের একটি ওয়েবসাইটের কর্ণধার ও পর্যটন বাণিজ্য বিশ্লেষক জোয়েল ব্র্যান্ডন-ব্রাভোর মতে ফ্ল্যাশ প্যাকের মতো খুব কম প্রতিষ্ঠানই আছে যারা ৩০ ও ৪০ এর কোঠায় থাকা নিঃসঙ্গ পর্যটকদের কথা ভেবে কাজ করে। মি. ব্রাভো বলেন, “যেসব একাকী পর্যটক পৃথিবী ঘুরে দেখতে চান কিন্তু তাদের অর্থ কড়ি থাকলেও সময়ের অভাব এবং সঠিক পরিকল্পনা নেই-তাদেরকে লক্ষ্য করেই এই প্রতিষ্ঠান ভ্রমণের ব্যবস্থা করে।”

“এটি বহু ব্লগারকে একা একা ঘুরে বেড়াতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং প্রমাণ করেছে যে একাকী বেড়ানোরও একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে,” বলছিলেন ব্রাভো। রাধা এবং লি দু’জনেই স্বীকার করেন যে, নিজের জীবন সঙ্গীর সাথে ব্যবসা শুরু করলে সম্পর্কে কিছুটা প্রভাব ফেলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি খু্বই ইতিবাচক একটি ব্যাপার-এটাও দু’জনের মত।

“আমি এটা একা চালিয়ে নেবো- কল্পনাই করতে পারি না,” বলছিলেন লি। “একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করা খুবই একাকীত্বের একটি ব্যাপার, আর যদি কাজের উত্থান পতন ভাগাভাগি করে নেবার মতো কেউ থাকে তবে তা অসাধারণ।” শুরু থেকেই রাধা এবং লি তাদের কাজ ভাগাভাগি করে করতেন। এখন রাধা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এবং লি নিজেকে ‘চিফ বাজ মেকার’ বলে দাবি করেন যার কাজ মূলত যোগাযোগ বৃদ্ধি আর ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

আমরিকা আর কানাডার বহু মানুষের চাহিদা বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে তারা উত্তর আমেরিকায় এর একটি অফিস খোলার পরিকল্পনা করছে। সেই সাথে ভ্রমণের স্পটও তারা বাড়াতে চায়। রাধার মতে, পর্যটন ব্যবসার ক্ষেত্রে বয়স ভিত্তিক পরিকল্পনার না থাকার যে ঘাটতি, সেটিকেই তারা আসলে কাজে লাগিয়েছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।

More News Of This Category