1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

একটু সাহস, একটু চেষ্টা করে দেখতে দোষের কি?

আমি বোধ হয় যোগ্য নই, আমি তো ভালো ইংরেজি বলতে পারি না, আমার সিজিপিএ ভালো না। এমন অজুহাতে আমরা হেলায় হারাই অনেক সুযোগ। অথচ সাহস করে পা বাড়ালেই হয়তো আপনার ‘ক্যারিয়ার’ অন্য রকম হতে পারে। তরুণদের সামনে কতশত সুযোগের পথ খোলা আছে, সেসব নিয়ে লিখেছেন ইয়ুথ অপরচুনিটিজের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন নূর

আমরা বলি ইন্টারনেট যাঁর মুঠোয়, সারা বিশ্ব তাঁর হাতে। বাংলাদেশের বিশাল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে বলা হয় দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার হাতেই স্মার্টফোন। কেউ কেউ স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার করে নিজেকে প্রতিনিয়ত আরও উন্নত করছেন। আবার কেউ এখনো বুঝতেই পারেননি, ইন্টারনেটের এই অভাবনীয় শক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়।

বাংলাদেশ থেকে অনেক তরুণ এখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন, তরুণদের মুখপাত্র হিসেবে বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, বৃত্তি নিয়ে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সভা-সেমিনার-কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন, নিজের ভাবনাটা জানিয়ে দিচ্ছেন পুরো পৃথিবীকে। কিন্তু এই তরুণদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে এখনো অনেক কম। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক তরুণ সাহস করে পা বাড়াচ্ছেন না স্রেফ দুটি কারণে। প্রথমত, আত্মবিশ্বাসের অভাব; দ্বিতীয়ত, সুযোগগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতা।

আত্মবিশ্বাসের অভাবটাই বেশি চোখে পড়ে। আমি পারব না, আমাকে বৃত্তির জন্য নির্বাচিত করা হবে না, আমি তো মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না, আমি ইংরেজিতে দক্ষ না, আমি তো মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারি না, আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল নই, আমার সিজিপিএ ভালো না…এমন নানা ছুতোয় আমরা আগেই নিজেকে ‘বাতিল’ ঘোষণা করে দিই। অথচ একটু সাহস, একটু চেষ্টাই হয়তো আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বিশ্বাস করুন, এটা এমন কোনো ‘রকেট সায়েন্স’ নয়। যেসব তরুণ দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে নিজেকে মেলে ধরছেন, তাঁরা আপনার-আমার মতোই শিক্ষাব্যবস্থায় বেড়ে উঠেছেন। প্রবল আগ্রহ থেকে তাঁরা সব সময় সুযোগের সন্ধান করেছেন, আত্মবিশ্বাস থেকে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। যে হাজারো সুযোগ আপনার সামনে রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অল্প কিছুর কথা আজ বলব। নিজ চেষ্টায় আপনি হয়তো আপনার পছন্দসই একটা সুযোগ খুঁজে নিতে পারবেন।

দেশের যত সুযোগ

সহশিক্ষা কিংবা সমাজসেবা কার্যক্রম সব সময় একজন তরুণকে এগিয়ে রাখে, মানুষ হিসেবে তাঁকে আরও পরিণত করে। ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেও এখন এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আপনি দেশের যে প্রান্তে, যে বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েন না কেন, কোনো না কোনো সুযোগ আপনার সামনে আছে।

স্কুলপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে। রেড ক্রিসেন্ট জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসবের মধ্যে আছে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, রক্ত সংগ্রহ, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের আয়োজন ইত্যাদি। এ ছাড়া স্কাউটের কার্যক্রমের সুনাম আছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও স্কাউট বেশ সক্রিয়। স্কাউটের সঙ্গে যুক্ত থাকলে এই অভিজ্ঞতা তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। তরুণেরা সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। পাশাপাশি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই অভিজ্ঞতা আলাদা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে।

স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে শুধু সামাজিক উন্নয়ন নয়, নিজের দক্ষতাগুলোও ঝালাই করে নেওয়া যায়। দেশে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। যেমন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ দেশের ৩২টি জেলায় কাজ করছে। তা ছাড়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক ক্লাব। এসব কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হলে দক্ষতা বাড়ে, ভবিষ্যতে চাকরি বা বৃত্তির ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার পাওয়া যায়।

অনেকেই শিক্ষাজীবনে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে চান। চোখ-কান খোলা রাখলে এমন অনেক আয়োজনে যুক্ত হওয়া যায়। যেমন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার বিভিন্ন শিক্ষামাধ্যমের তরুণদের একত্র করে তাঁদের নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ দেয়। পঞ্চম শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত বাংলা বা ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন মেয়াদে অংশগ্রহণ করতে পারে। ব্রিটিশ কাউন্সিল চার দিনব্যাপী অ্যাকটিভ সিটিজেন ইয়ুথ লিডারশিপবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এসব প্রকল্পে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তরুণেরা নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ, দলগত কাজ, আত্মমূল্যায়ন, বাস্তব সমস্যা সমাধান ও সমাজের বিভিন্ন পরিবর্তনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে উদ্ভাবনী ভাবনাকে উৎসাহ দিতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেয় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। আপনার বা আপনাদের যদি নিজস্ব কোনো প্রকল্প থাকে, সেই প্রকল্পকে সমৃদ্ধ করার জন্য আপনিও এই অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেন। টাকার অঙ্কে অনুদানের পরিমাণ ৫ থেকে ২০ লাখ। অতএব, পুঁজি নেই বলে আগেই পিছিয়ে যাওয়াটা ভুল হবে। আগে নিজের ভাবনাটা সাজিয়ে ফেলুন, আবেদন করুন। কাজে নামলে অন্তত ভুলগুলো ধরা পড়বে।

এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে যাঁরা দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চান, তাঁদের জন্য বৃত্তি ও ফেলোশিপের সুযোগ দেয় সরকার।

দেশের বাইরে যত সুযোগ

বিভিন্ন দেশের সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি খরচে সে দেশে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। শুধু সরকার নয়, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও বৃত্তি প্রদান করে থাকে। বৃত্তির সুযোগ নিয়ে আপনি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে পারেন। আপনি যদি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র হন, এখনই খোঁজখবর নিতে শুরু করুন। জানুন, বৃত্তি পেতে হলে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করুন। সাধারণত উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক-পরবর্তী শিক্ষার জন্য বেশির ভাগ বৃত্তি দেওয়া হয়। চীন, ব্রুনাই, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, শ্রীলঙ্কা, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, কানাডা, রাশিয়া, সুইডেন…আরও বেশ কিছু দেশ নিয়মিত বৃত্তি দেয়।

শুধু বৃত্তি নয়, দেশের বাইরে বিভিন্ন তরুণ সম্মেলন, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি, ইন্টার্নি বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেমন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তাদের ইন্দোনেশিয়া অফিসে ইন্টার্নি নিয়োগ করছে, সেখানে আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। তা ছাড়া জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ডয়চে ভেলেসহ শতাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে আছে ইন্টার্নের সুযোগ।

দেশ-বিদেশের সুযোগগুলো আমরা একসঙ্গে তুলে ধরি ‘ইয়ুথ অপরচুনিটিজ’-এর মাধ্যমে। www. youthop. com-এ ঢুঁ মেরে অথবা ইয়ুথ অপরচুনিটিজের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, কোথায় কী সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইএমকে সেন্টারের ফেসবুক পেজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নোটিশগুলোতে নিয়মিত চোখ রাখলে আপনি আরও অনেক সুযোগের খবর পাবেন। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইলে আগে সুযোগ সন্ধান করা জরুরি।

তথ্যসুত্র: প্রথম আলো ডটকম।

More News Of This Category