1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

এনটিআরসিএর অভিনব পদ্ধতির ফলে ভোগান্তিতে চাকরিপ্রার্থীরা!

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। দেশে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রায় ৪০ হাজার শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে সম্প্রতি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ।

নিয়োগের এ গণবিজ্ঞপ্তিতে আশার আলো খুঁজে পান চাকরিপ্রার্থীরা। তবে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনের অভিনব পদ্ধতি প্রবর্তন করায় অর্থের অভাবে আবেদন করতে পারছেন না নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হাজারো নিয়োগপ্রার্থী। আবার আবেদন করতে গিয়েও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এনটিআরসিএর অদূরদর্শী গণবিজ্ঞপ্তিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক লাখ চাকরিপ্রার্থী।

এনটিআরসিএর গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সারা দেশে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৩৯ হাজার ৫৩৫টি পদ শূন্য আছে। ১ম থেকে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রত্যাশীদের এসব পদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদন করতে বলা হয়। প্রাপ্ত আবেদনগুলো জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে বাছাইপূর্বক বিধিমোতাবেক প্রতিটি পদের বিপরীতে একজন করে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে।

এরপর নির্বাচিতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকে মোবাইল ফোনে এসএমএস করে নির্বাচিত প্রার্থীর কথা জানিয়ে দেয়া হবে। প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে ১৮০ টাকা করে জমা দিতে বলা হয় এনটিআরসিএর ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে। নিয়োগপ্রত্যাশীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনের পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। এর ফলে একদিকে আবেদনকারীদের মোটা অংকের ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও শুধু আবেদনের সুযোগ না পেয়ে নিয়োগবঞ্চিত হবেন অনেক চাকরিপ্রার্থী।

এনটিআরসিএর প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনের পদ্ধতিটি মোটা অংকের ফি আদায়ের ফাঁদ বলে অভিযোগ তুলেছেন নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রত্যাশীরা। আতিকুর রহমান আতিক নামে এক নিয়োগপ্রত্যাশী বলেন, ‘আমি সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য নিবন্ধিত। আমার বিষয়ে পদ খালি রয়েছে তিন হাজারের বেশি।

মেধাতালিকায় পিছিয়ে থাকায় চাকরি নিশ্চিত করার জন্য আমাকে অন্তত দুই হাজার প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শুধু এনটিআরসিএকেই দিতে হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর বাইরে আবেদনের জন্য আরো অর্থ খরচ হবে। আমার মতো অসচ্ছল ব্যক্তির পক্ষে এত টাকা দেয়া অসম্ভব। মোটা অংকের ফি দিতে অপারগ নিয়োগপ্রত্যাশীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন এনটিআরসিএ কার্যালয়ে। অনুরোধ জানাচ্ছেন সহজ আবেদন প্রক্রিয়ার।

এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে গত সোমবার কথা হয় আমিনুল ইসলাম নামে এক নিয়োগপ্রত্যাশীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শত শত প্রতিষ্ঠানে আবেদনের সামর্থ্য নেই। তাই পদ্ধতি পরিবর্তনের অনুরোধ জানাতে আমরা কয়েকজন মিলে এখানে এলাম। এখানকার কর্মকর্তাদের কথায় হতাশা আরো বেড়েছে। এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, আপনারা আগে ৫-১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতেন। এখন ২-৩ লাখ টাকা খরচ করে দেশের সব প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে চাকরি পেলে অসুবিধা কী?

এদিকে এনটিআরসিএর এ অভিনব পদ্ধতিতে মেধাতালিকার সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়ার অভিযোগ করছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, বর্তমান আবেদন প্রক্রিয়ায় শুধু আবেদন না করায় মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও নিয়োগবঞ্চিত হবেন অনেক চাকরিপ্রার্থী। আবার মেধাতালিকায় পিছিয়ে থাকা অনেকেই নিয়োগ পাবেন বেশি সংখ্যক আবেদন করায়।

এ বিষয়ে এক নিয়োগপ্রত্যাশী বলেন, মনে করেন আমিনুল নামে একজন একটি কলেজে সমাজবিজ্ঞানের জন্য আবেদন করেছেন। তার আবেদন করা কলেজে মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকা আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি থাকায় আমিনুল নিয়োগ পাবেন না। অথচ আমিনুলের তুলনায় মেধাতালিকায় পিছিয়ে থেকেও তার বন্ধু রিয়াজ হোসাইন অন্য একটি কলেজে আবেদন করে নিয়োগ পেয়ে যাবেন। কারণ ওই কলেজে আবেদনকারীদের মধ্যে রিয়াজ মেধাতালিকায় অবস্থান এগিয়ে ছিল। অর্থাৎ কেউ ১০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও নিয়োগ পাবেন। আবার অন্য একজন এক হাজার কলেজে আবেদন করেও নিয়োগ পাবেন না।

এদিকে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদন পদ্ধতির কারণে আবেদন না পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক সংকটেরও সমাধান হবে না। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানে আবেদন পড়বে, শুধু সেসব প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ হবে, আর বাকি সব পদ ফাঁকা থেকে যাবে। এর ফলে যেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রত্যাশীরা আবেদন করবেন না, সেসব প্রতিষ্ঠানের পদগুলো শূন্যই থেকে যাবে। বিষয়ভিত্তিক আবেদন নিয়ে মেধাতালিকার ভিত্তিতে কলেজ বণ্টন করলে এ সমস্যা হতো না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি একটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, এনটিআরসিএর এ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে প্রশ্নবিদ্ধ। যাদের নিয়োগ দেয়া হবে, যেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হবে— কেউই এ প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নন। একদিকে নিয়োগপ্রত্যাশীদের মোটা অংকের অর্থ অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে কাকে কোন এলাকায় নিয়োগের সুপারিশ করবে, তার কোনো ভিত্তি নেই। নিজ এলাকায় পোস্টিং দিলে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক সুচারুভাবে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। তাতে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান উভয়ই উপকৃত হয়।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব মো. আ. আউওয়াল হাওলাদার বলেন, বর্তমান প্রক্রিয়ায় সমস্যা-সম্ভাবনা— উভয়ই আছে। মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকা নিয়োগপ্রত্যাশীদের খুব বেশি আবেদনের প্রয়োজন হবে না। পিছিয়ে থাকাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি আবেদন করতে হবে। যিনি যত বেশি আবেদন করবেন; তার নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। আবার মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও শুধু আবেদন না করায় অনেকে নিয়োগ পাবেন না— এটিও সত্য। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনের বিষয়ে সমস্যার কথা জানাতে অনেকেই আমাদের কাছে আসছেন। আমরা ভবিষ্যতে বিষয়টি ভেবে দেখব। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা।

More News Of This Category