1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

এফএমসিজি বাজারে সবচেয়ে বর্ধনশীল দুদ্ধজাত পণ্য!

এফএমসিজি (ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস) বাজারের অন্যতম পণ্য ডেইরি। এক সময় দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত মিল্ক ভিটা প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি করলেও দুগ্ধজাত পণ্যে ব্যক্তি খাতে উল্লেখ করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। গত কয়েক বছর ব্যক্তি খাতের একাধিক দেশীয় প্রতিষ্ঠান এ খাতে ব্যবসা করছে। দেশের দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারে রয়েছে বিদেশী বড় প্রতিষ্ঠানও।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যই এখন দেশের এফএমসিজি বাজারের সবচেয়ে বর্ধনশীল পণ্য। বার্ষিক ২৪ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে এ পণ্যের বাজার।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ দেশে এফএমসিজির বাজার দ্রুত বাড়াচ্ছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটর। ২০১৭ সালের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে এফএমসিজি বাজারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে তাদের প্রতিবেদন চলতি বছর প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

তাতে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত দেশের এফএমসিজি বাজারে খাদ্যপণ্যের মধ্যে ডেইরি পণ্যের বাজার বেড়েছে বার্ষিক গড়ে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। দেশের এফএমসিজি বাজারে এটাই সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল পণ্য। এছাড়া পার্সোনাল কেয়ার ও কসমেটিক পণ্যের বাজার বাড়ছে ১২ শতাংশ হারে। ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে বাসায় ব্যবহূত হোম কনজাম্পশন প্রডাক্টের বাজার।

বিশেষজ্ঞ ও বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে শহরে মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। গুণগত মানের পণ্য বাছাইয়ের পাশাপাশি বাড়ছে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার ও হেলথ কেয়ার পণ্যের বাজার। এর ফলে দ্রুত বড় হচ্ছে দেশের এফএমসিজির বাজার। এর মধ্যেও আবার বেশি বাড়ছে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার।

ইউরোমনিটরের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের হাজার কোটি টাকার বাজার এখন ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্যাকেটজাত দুধের বাজারই ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে লক্ষণীয় হারে বেড়েছে দুধের উৎপাদন ও চাহিদা। ২০০৯ সালে দেশে দুধের উৎপাদন ছিল ২২ লাখ টন। ২০১৭ সালে তা ৯২ লাখ টন ছাড়িয়েছে। এ সময় দেশের ডেইরি খাতে মিল্ক ভিটার বাইরে ব্যক্তি-উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ব্র্যাকের আড়ং মিল্ক, প্রাণ মিল্ক, আকিজ মিল্ক, আমো মিল্ক, উত্তরা মিল্ক, আফতাব মিল্ক ও আরডি মিল্কের মতো বড় প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাজারে পাস্তুরিত প্যাকেটজাত তরল দুধ, ফ্লেভার্ড মিল্ক, ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধ, ননিবিহীন গুঁড়ো দুধ, কনডেন্সড মিল্ক, ইউএইচটি ফ্লেভার্ড মিল্ক, আইসক্রিম, ইউএইচটি পাস্তুরিত তরল দুধের পাশাপাশি মাখন, ঘি, মিষ্টি দধি, টক দধি, ক্রিম, ললিস, রসমালাই, চকোলেট, লাচ্ছি, লাবাংয়ের মতো পণ্য উৎপাদন এবং বিপণন করছে। যদিও দেশে দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারের সম্ভাবনা আরো অনেক বেশি বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

প্রাণ ডেইরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইলিয়াছ মৃধা বলেন, দেশে দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারের সম্ভাবনা অনেক বড়। দুধের উৎপাদন ও সংগ্রহ পর্যায়ে এখনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ফলে আমদানির ওপর ভর করেই দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে হচ্ছে। ভোগ্যপণ্যের মধ্যে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় এক্ষেত্রে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার আরো সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।

এফএমসিজি বাজারে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের পরই দ্রুতবর্ধনশীল হিসেবে শিশুখাদ্যকে উল্লেখ করেছে ইউরোমনিটর। যদিও এর বড় অংশই দুগ্ধজাত পণ্য থেকে আসে। শিশুদের বিভিন্ন এ খাবারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যে প্রবৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা কনফেকশনারির প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর মিষ্টি ও স্ন্যাকসের বাজার প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ২ শতাংশ।

একই রকম প্রবৃদ্ধি নুডলসের বাজারেও। ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আইসক্রিমের বাজারের বাড়ছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। এর বাইরে গত চার বছরে সুপের বাজার বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। ১৪ শতাংশ হারে বেড়ে বর্তমানে ২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে ফ্রোজেন ফুড বা হিমায়িত খাদ্যের বাজার। আর ১০ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে বিস্কুট ও বেকারি পণ্যের বাজার।

দেশে শহুরে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তনের কারণে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে পার্সোনাল কেয়ার ও কসমেটিক সামগ্রীর ব্যবহারও। ইউরোমনিটর দেশে কসমেটিক পণ্যের বাজারে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করলেও তার বড় অংশই এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে।

ফলে বাজার বাড়ছে না স্থানীয় উৎপাদকদের। বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিটিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে কসমেটিকসের বাজার ৬ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে।

বিসিটিএমএর সভাপতি খন্দকার সিরাজ উদ্দিন বলেন, ২০১২ সালে দেশে বৈধভাবে ৮ হাজার কোটি টাকার কসমেটিক পণ্য বিক্রি হয়। তবে স্থানীয় উৎপাদকদের পণ্যের বিক্রি কিছুটা কমেছে। দেশের বাজারে ৮০ শতাংশ দখলে রাখলেও ইউনিলিভারের মতো প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধি সংকটে রয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোহিনূর, কেয়ার ব্যবসাও কমেছে।

মানুষের আয় বৃদ্ধির চেয়ে গুণগত মানের প্রয়োজনেই দেশে এফএমসিজির বাজার দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভোগ্যপণ্যের মধ্যে মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি ব্যয় করছে খাদ্যপণ্যে।

প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া খাবারের উৎস কমে যাওয়ায় মানুষ অনেক বেশি কৃত্রিমতার মধ্যে চলে গেছে। খাদ্যপণ্যের গুণগত মানে সমস্যা হওয়ার কারণে মানুষকে আবার পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারে ঝুঁকতে হচ্ছে। ফলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে শহরে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে তারা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা।

More News Of This Category