একটা কথা আমি প্রায়ই আমার কাছের মানুষদের বলি। আর সেই কথাটি হল আপনি আমি যা কিছু করছি তা তো পরিবারের জন্যই। তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। কাজের ব্যস্ততায় যখন এই পরিবারকে উপেক্ষা করেন ঠিক তখন থেকে দুরত্ব শুরু হয় পরিবারের মানুষগুলোর সাথে। কাজ আর পরিবার বিপরীতমুখী অবস্থান নেয়।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব জরুরী। ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে সারা দিন কর্পোরেট ব্যস্ততায় পরিবারের সাথেও যদি কর্পোরেট আচরণ করেন তবে পরিবারের মানুষগুলোর আন্তরিকতা হারাবেন এটা নিশ্চিত। বন্ধন যতটুকু তা কেবল প্রয়োজনের তাগিদে থাকবে। দিনশেষে ভিতরে জ্বালা, বাইরে জ্বালা মনে হতে থাকবে। অতি কাছের মানুষগুলোকেও অপরিচিত মনে থাকবে দিন দিন।
প্রতিদিন যাত্রা শুরু হয় কাক ডাকা ভোর থেকে। চলতে থাকে রাত অবধি। পথিমধ্যে বাসে চাপ, বসের চাপ, কাজের চাপ, আর অফিসিয়াল পলিটিক্স তো আছেই। এত কিছুর মধ্যে আবার পরিবার সামলাবেন কখন একথা বলে পার পেতে চান। কিন্তু চাইলেই কি আর দায়িত্ব এড়ানো যায়।
আপনার স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবা, আদেরর ছোট ভাই-বোন আপনার প্রত্যাশায় পথের পানে চেয়ে থাকে। আপনার সাথে একান্ত কিছু সময় কাটানো, খোশ গল্প, পারিবারিক আড্ডা অথবা সল্প পরিসরের বিনোদনের অপেক্ষায়। তাদের ছোট খাট অভিমান খুনসুটি গুলো আপনার চোখ এড়িয়ে যায় কাজের চাপে। কাজ আর বৈষয়িক চিন্তা করেই সারাটা দিন গাধার খাটুনি খেটে চলেছেন। একবার ভেবেছেন কি আপনার শ্রমে ঘামে তৈরী করা সম্পদ আপনি আদৌ ভোগ করে যেতে পারবেন কি?
আপনি পরিবারের যে মানুষগুলোকে ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করছেন সেই মানুষগুলোর অন্তরের কান্না শোনার চেষ্টা করেছেন কি কখনও? একটি বার তাদের অন্তরে জমানো ক্ষোভগুলো প্রকাশের সুযোগ করে দিয়ে দ্যাখেন কতটা অভিযোগ জমে আছে এই মানুষগুলোর মনে। আপনার আয়ের অর্থ তাদেরকে হয়ত সুরক্ষিত করছে কিন্তু কতটা সুখী করতে পারছে তা কি একমুহুর্তের জন্যও ভেবেছেন?
প্রতিটা কর্মব্যস্ত দিনের থেকে কিছুটা সময় বের করুন পরিবারের মানুষগুলোর জন্য। তারা অনেক কিছু প্রত্যাশা করে না আপনার কাছ থেকে। ছোট্ট ছোট্ট হাসি-তামাশায় ভরে তুলুন আপনার চারপাশ। আদরের সোনামনিকে নিয়ে একটু খানি বেরিয়ে আসুন আশে পাশে কোথাও থেকে। বৃদ্ধ মা-বাবার পাশে বসে কিছুটা সময় গল্প করে কাটান। ভাল মন্দ খোজ খবর করুন। আদরের ছোট্ট ভাই বোনদের প্রেরণা দিন। পুরস্কৃত করুন তাদের অর্জনকে। খোঁজ খবর রাখুন কিভাবে তাদের সময়গুলো কাটছে। পরিবারের সকলকে নিয়ে বাইরে একটা দিন একটা ভাল রেষ্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করুন।
যে মানুষটা তার সমস্ত ভালবাসার কাছের মানুষগুলোকে ছেড়ে আপনার সহধর্মীনি হয়ে শত ত্যাগ স্বীকার করে চলেছেন তার কাজের মূ্ল্যায়ন করুন। প্রশংসা করুন। তার কাজে সাহায্য করুন। মিষ্টি ভালবাসার কিছু আনন্দময় মুহুর্ত তৈরী করুন। জীবনটা অনেক সুন্দর। কর্পোরেট দুনিয়ার মত করে পারিবারিক জীবন চলে না। অযথা জীবনটাকে জটিল ও অসুখী করে তুলতে যাবেন না। পারিবারিক বন্ধন মজবুত করতে মূল্যবোধ, পারস্পারিক সহযোগীতার সৃষ্টি করতে হয়। তো শুরু হোক নতুন করে পথচলার। যেখানে সুখের সীমানা হোক অন্তহীন।
লেখক:
মোঃ মাসুদুর রহমান মাসুদ
উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম।