1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

তেলাপিয়া চাষে কোটিপতি

নিজেদের কোন আবাদি জমি ছিল না। এক মাত্র বাবার আয় দিয়েই চলতো আট সদস্যের সংসার। অভাব যেন নিত্যসঙ্গী এ পরিবারের। এই অভাবের সাথে যুদ্ধ করে দুবেলা দু মুঠো ভাতের যোগাড় করতে বাবা হিমশিম খেতেন। তাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে আমাকেও রোজগারে নামতে হয়। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম।

পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই- এ কথাটি বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গেই বললেন যশোর সদরের চাঁচড়া গ্রামের সফল মৎস্য চাষি নুরুল ইসলাম বাবু। নিষ্ঠা, সততা ও পরিশ্রমের ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তেলাপিয়া চাষ করে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন। অর্জন করেছেন অভাবনীয় সাফল্য।

তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে সফলতা স্বীকৃতি স্বরুপ তার শাহ আলী মৎস খামার পেয়েছে সনদ। এ বছর তার নিট আয় এক কোটি ১৬ লাখ টাকা। ব্যবসায়িকভাবে তিনি এখন চাঁচড়ার বড় মাছ চাষিদের মধ্যে একজন।

বাবু জানান তারা ছয় ভাই বোন। বাবা আলী হোসেনের আয়ে চলতে সংসার। নিজস্ব কোন জমি না থাকায় অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে বাবা মাছ চাষ করতেন। আমি সবার বড় ছেলে । অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণীর পর আর লেখা পড়া হয়নি। লেখা পড়া ছেড়ে বাবার সাথে মৎস্য খামারে কাজ শুরু করি। মাছ চাষে সফলতাও আসে। সংসারের অভাব কিছুটা লাভঘ হল।

এরপর ২০০০ সালে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য একক ভাবে শুরু তার মাছের চাষ। বাবা আলী হোসেন, প্রতিবেশি ভাই ভাই মৎস্য খামারের হারুন-আর-রশিদ ও জমজম মৎস্য খামারের ফিরোজ করির বকুলের অনুপ্রেরণায় ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এক বিঘার একটি পুকুর লিজ নেয় বাকিতে। আর বাকিতে ছাড়া হয় তোলাপিয়া মাছের পোণা।

এ বছরই লাভ হয় প্রায় ১ লক্ষা টাকা। শুরু হয় তার সফলতার পথচলা। এর পর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ব্যবসায়িকভাবে তিনি এখন চাঁচড়ার বড় মাছ চাষিদের মধ্যে একজন। সরজমিন তার পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমানে তিনি ৯টি পুকুররে তোলাপিয়া মাছ চাষ করেছেন। পুকুরজলা মিলে ১৩ হেক্টর । তার খামারে মাছের খাবার দেয়া, জাল দিয়ে মাছ ধরা ও পরিচর্যায় নিয়মিত ৭ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা কাজ করেন। আর অনিয়মিতি শ্রমিক আছে প্রায় ১১জন। ফলে বাবুর শাহ আলী মৎস্য খামারে ২০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

এ বছর প্রতি হেক্টর জলাশয়ে ৫৮.১৮ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এ খাতে তার বিনিযোগ মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ মধ্যে তার নিজস্ব পুজিঁ মাত্র ৩০ লাখ টাকা আর ব্যাংক লোন ২৫ লাখ আর বাকি ৭০ লাখ ধার দেনা করে তিনি ব্যবসায় পরিচালনা করছেন।

এ বছর তার মোট বেচাকেনা হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকাও বেশি। বাবু জানান এ বছর তার নিট আয় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তার এ সফলতা যশোরে সদরউপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তোলাপিয়া মাছ চাষে সফলতা অর্জন করায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৫ উপলক্ষে সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তিনি জানান,তার সফলতা দেখে নূর আলম, মিন্টুসহ অনেক বেকার যুবক উৎসাহিত হয়ে তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করেছেন।

নূরুল ইসলাম বাবু বলেন, আগের দিনে মাছ চাষ করে যে কেউ অনেক বেশি লাভবান হতেন। অথচ এখন আর কিছুতেই সেটা সম্ভব নয়। আগের তুলনায় লাভ নেমে এসেছে অর্ধেকে। সবকিছু দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছ কয়েকগুন। মাছের খাবারের দাম বেশি অথচ সে হারে বাজারে মাছের দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

সেই সঙ্গে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। তারপরেও মাছ চাষ বিষয়ে পরামর্শ নিতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার কাছে আসেন, তিনি তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও বাবু যখন কোনো বিষয়ে সমস্যায় পড়েন তখন দ্রুত উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেন।

বাবু জানান, তার পুকুরে প্রতি বছর হেক্টর প্রতি ৫৮.০৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। মাছ চাষ করে একদিকে তিনি যেমন নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অপরদিকে তার এই সফলতা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি আরো জানান মৎস্য চাষিদের জন্য স্বল্প সুদে লোন ও প্রশিক্ষণে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে মাছ চাষে করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আর রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

এবিষয়ে যশোর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, যশোর জেলায় প্রতিবছর দুই লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র তোলাপিয়া ১৮ হাজার ২৭৪ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, এ জেলায় তোলাপিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলায় তোলাপিয়া পোনা উৎপাদন হলেও গুনগত মানের দিক থেকে যশোরের মাছের চাহিদা বেশি। যেকারণে দিন দিন এ মাছের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, চাষি নূরুল ইসলাম বাবুর শাহ আলী মৎস্য খামার তোলাপিয়া উৎপাদনে দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন। জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হয়ে থাকে।

More News Of This Category