1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করছে কোডারসট্রাস্ট

প্রোগ্রামিং শেখানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্থ আয়ের সুযোগ করে দিতে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ডেনমার্ক ভিত্তিক কোডারসট্রাস্ট। প্রতিষ্ঠানটি মূলত প্রোগ্রামিং শিখতে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়। আর একজন শিক্ষার্থী যখন প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষ হয়, তখন তার জন্য বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের সুযোগও করে দেওয়া হয়। মার্কেটপ্লেস থেকে অর্জিত অর্থের একটি অংশ দিয়ে ঋণ পরিশোধের সুযোগও থাকে। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে চালু হলেও কোডারসট্রাস্টের শুরুটা হয়েছিল ২০১২ সালে।

যেভাবে হলো শুরু
কোডারসট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান প্রধান নির্বাহী ফার্ডিনান্ড কেয়ারলেফ ছিলেন ড্যানিশ আর্মির একজন কর্মকর্তা। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের পতন পরবর্তী সময়ে তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত সেখানে তাকে একটি রিকভারি প্রজেক্টে দায়িত্ব দেওয়া হয় যার মূল কাজ ছিল ইরাকের ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে ইন্টারনেট এবং ই-লার্নিংয়ের সুযোগ পৌঁছে দেওয়া। প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হন তিনি। মূলত কোডারসট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মূল অনুপ্রেরণা তিনি এখান থেকেই পেয়েছিলেন। কোডারসট্রাস্ট প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ডানিডা। এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই-লার্নিংয়ের সুযোগ চালু করা।

যেভাবে কাজ করে কোডারসট্রাস্ট
মূলত প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়। প্রোগ্রামিং শেখানোর দায়িত্বও পালন করে তারা। এক্ষেত্রে রয়েছে তিনটি ভিন্ন মডেল। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের জন্য কোডারসট্রাস্ট ঋণের ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে সে যখন কাজ শুরু করে, তখন আয়ের একটি অংশ থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু করে। এক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হিসেবে আয়ের ১০ শতাংশ পরবর্তী তিন বছর নিয়ে থাকে কোডারসট্রাস্ট। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থী কোডারসট্রাস্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখে। ৬ মাসের কোর্স শেষ হলে তাকে এই অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। আর শিক্ষার্থী আয় শুরু করলে পরবর্তী তিন বছর সেখান থেকে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। তৃতীয়ত, কোর্স ফি’র পুরোটাই শিক্ষার্থী পরিশোধ করে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে কোন সার্ভিস চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

বাংলাদেশে কার্যক্রম
বাংলাদেশে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল কোডারসট্রাস্ট। দেশের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখানোর উদ্দেশ্যে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য দক্ষ প্রশিক্ষকও নিয়োগ দিয়েছে কোডারসট্রাস্ট। কোডারসট্রাস্ট বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এখানে। এর মধ্যে আছে সি, জাভাস্ক্রিপ্ট, পাইথন, বুটস্ট্রাপ, অ্যাঙ্গুলার জেএস, জে কোয়েরি, পিএইচপি, এইচটিএমএল, সিএসএস, মাইএসকিউএল প্রভৃতি। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি অনলাইনেও প্রোগ্রামিং শিখিয়ে থাকে কোডারসট্রাস্ট। এক্ষেত্রে ট্রায়াল এবং পেইড নামের ভিন্ন দুটি প্যাকেজ আছে কোডারসট্রাস্টের। লাইভ ক্লাস, অনলাইন কোর্সের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে কোডারসট্রাস্টের লাইভ ক্লাসের সুযোগ। এক্ষেত্রে একজন মেন্টর সরাসরি অনলাইনে প্রোগ্রামিং শেখানোর কাজ করেন। একা কিংবা গ্রুপ করে লাইভ ক্লাসের সুযোগ আছে এখানে।

আওয়ার অব কোড
বিশ্বব্যাপী প্রোগ্রামিং শেখার আয়োজন হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ‘আওয়ার অব কোড’। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে আওয়ার অব কোড আয়োজন করে কোডারসট্রাস্ট। এ উপলক্ষ্যে দেশের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছিল প্রোগ্রামিং শেখার আসর। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। আওয়ার অব কোডে সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবার অংশ নিয়েছিল।

সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য প্রোগ্রামিং কোর্স
সম্প্রতি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামিং কোর্স শুরু করেছে কোডারসট্রাস্ট। রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগ শুরু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং শেখানো হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। পরবর্তীতে এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইন্টারভিউ: ফার্ডিনান্ড কেয়ারলেফ, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, কোডারসট্রাস্ট
কোডারসট্রাস্ট কেন বাংলাদেশে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? আয়ের পরিমাণ বেশি, কাজের সময় বেছে নেওয়া যায় নিজের ইচ্ছামতো এবং পছন্দমতো কাজ করার সুযোগ থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে ৫০টির মতো মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের পরিমাণ ৫ লাখের বেশি। ম্যাককিনসের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ফ্রিল্যান্স পোর্টালগুলোতে ১৫ কোটির বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের তরুণ মেধাবী তরুণদের কাজের সুযোগ এবং আয়ের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে এই মার্কেটপ্লেসগুলো। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটিই অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কর্মী নিয়োগ দেবে। আর এই পুরো খাতেই সবথেকে ভালো অবস্থানে এবং এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে কোডারট্রাস্ট কতটা কার্যকরভাবে কাজ করছে?
ফ্রিল্যান্সাররা যেন অধিক পরিমাণে আয় করতে পারেন, সে জন্য তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনেকদিন ধরেই তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কোডারসট্রাস্ট। বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের কাছে যেন বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা আস্থা অর্জন করতে পারে, সেজন্য আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লেও তাদের দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সমপূর্ণ চিত্র ক্লায়েন্টদের সামনে উঠে আসছে না। আর এ সমস্যা সমাধানে কোডারসট্রাস্ট ফ্রিল্যান্সারদের জন্য চালু করেছে ‘ট্রাস্ট স্কোর’। এই স্কোর মূলত একজন ফ্রিল্যান্সারের উপর কতটা আস্থা করা যেতে পারে, সে তথ্যই উপস্থাপন করবে। যার ট্রাস্ট স্কোর যত বেশি, তার উপর একজন ক্লায়েন্ট তত বেশি আস্থা রাখতে পারেন। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসের রিভিউ এবং রেটিংয়ের উপর ভিত্তি করে এই ট্রাস্ট স্কোর নির্ধারণ করা হয়। এর মাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সার আরও বেশি আয় করতে পারবেন।

মেয়েদের প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করার জন্য কোডারসট্রাস্টের কোনো পরিকল্পনা আছে?
আমরা প্রতিনিয়তই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের আগ্রহী করতে কাজ করছি যা সামনের দিকেও অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি কোডারসট্রাস্ট একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করছে নারীদের জন্য যার মাধ্যমে তারা অনলাইন মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে নিজেদের তৈরি করতে পারবে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে লিঙ্গ, অবস্থান, সামাজিক অবস্থান এগুলোর পরিবর্তে কেবল তার যোগ্যতা এবং কাজেরই গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থী কোডারসট্রাস্টে প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে?
এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী এখানে প্রোগ্রামিং কোর্সে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে এখন দক্ষ প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছে যাদের আয় এখন অনেক বেশি। বর্তমানে ৩৫টি বেশি দেশের ক্লায়েন্টের কাজ করছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।

কোডারসট্রাস্ট সুবিধাবঞ্চিতদের প্রোগ্রামিং শেখানোর কোনো পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কিনা?
বর্তমানে কড়াইল বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখাচ্ছে কোডারসট্রাস্ট যাদের পক্ষে কখনোই এটা সম্ভব ছিল না। মাত্র ৬ মাস আগে শুরু করে বর্তমানে তারা বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে আয় করছে। এর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা আরও বাড়িয়ে নিচ্ছে।

কোডারসট্রাস্টের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা কী?
আমরা দেশের সকল ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই সুযোগটি দিতে চাই কারণ এটি তাদের জন্য নিজেদের জীবন বদলে দেওয়ার একটি সুযোগ। মাত্র তো শুরু হলো। সামনের দিকে অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে আমরা আরও অধিক পরিমাণ শিক্ষার্থীকে এই সুযোগটি করে দিতে পারব বলে আশা করি।

তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক ডটকম ডট বিডি।

More News Of This Category