1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

দরিদ্রতম দেশ গায়ানা বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশে রুপান্তর হতে যাচ্ছে

দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ গায়ানা এখন তেলসমৃদ্ধ হওয়ার পথে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটি এ মহাদেশের শীর্ষ ধনী দেশে পরিণত হবে। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশেও রূপান্তর হতে পারে গায়ানা। কিন্তু তারা কি তথাকথিত ‘তেল অভিশাপ’ এড়াতে পারবে? নব আবিষ্কৃত ঐশ্বর্যের সুবিধা কি গায়ানার সব নাগরিক ভোগ করতে পারবে?

গত বছরের নভেম্বরে গায়ানায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পেরি হলোয়ে জানিয়েছেন, অনেকেই জানে না গায়ানার অর্থনীতি কতটা বিরাট আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। ২০২০ সালের মধ্যে গায়ানার জিডিপি ৩০০ থেকে ১০০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এটি বিশাল। গায়ানা হবে এ মহাদেশে শীর্ষ ধনী দেশ এবং সম্ভবত বিশ্বের শীর্ষ ধনী।

শুনতে কিছুটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও হিসাব করলে দেখা যাবে এটি অবিশ্বাস্য কিছু নয়। গায়ানার জনসংখ্যা মাত্র ৭ লাখ ৫০ হাজার। মাথাপিছু হিসাবে দেশটির সম্পদ হবে আকাশচুম্বী। গায়ানায় তেল উত্তোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রধান অপারেটর এক্সনমবিল জানিয়েছে, গায়ানার সীমানায় অবস্থিত আটলান্টিক সমুদ্রের নিচে ৫৫০ কোটি ব্যারেলের বেশি তেলের সন্ধান পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র ইংরেজি ভাষাভাষী অঞ্চল এবং সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ গায়ানায় দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার খুবই উচ্চ। সে হিসাবে দেশটির জন্য তেল আবিষ্কারের এ খবর নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু ইতিহাস গায়ানাকে একটি সতর্কবার্তা দিচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে দেখা গেছে, বড় ধরনের তেলের উৎস আবিষ্কার হওয়ার পর দুর্নীতির মাত্রা প্রচণ্ড হারে বেড়ে গেছে। আর এতে নবলব্ধ তেলসম্পদ অপচয় বা চুরি হয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশের এ ধরনের ঘটনাগুলো ‘তেল অভিশাপ’ হিসেবে পরিচিত।

বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী এনজিও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় প্রধান ট্রয় থমাস বলেন, গায়ানায় দুর্নীতি ক্রমে বাড়ছে। থমাস বলেছেন, তেল অভিশাপের বিষয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। একে তেল অভিশাপের প্রাথমিক ইঙ্গিত হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি অনাস্থা ভোটে হেরেছে গায়ানার ক্ষমতাসীন জোট। দেশে নির্বাচন দেয়ার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন জোট এ অনাস্থা ভোটকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে, যার কারণে দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এক আন্দোলনকারী বলেন, আমরা সরকারের কাছে চাইছি তারা যেন আমাদের সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। তারা শুধু চায় ক্ষমতায় থাকতে এবং তেল থেকে আসা অর্থের নিয়ন্ত্রণ নিতে।

দুই পক্ষের মধ্যে আইনি লড়াই এখনো চলমান। চলতি সপ্তাহেই মামলার সর্বশেষ আপিলের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ক্যারিবিয়ান কোর্ট অব জাস্টিজ আপিলের শুনানি প্রদান করবেন। গায়ানার এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির নতুন প্রধান ভিনসেন্ট অ্যাডামস তিন দশক মার্কিন জ্বালানি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশেও আমাদের এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। তেলসম্পদ পাওয়ার পর তাদের অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে।

এ ফাঁদ থেকে বাঁচার একটি উপায় আছে বলে মনে করেন অ্যাডামস। তার মতে, শিক্ষা, শিক্ষা এবং শিক্ষাই একমাত্র উপায়। গায়ানা এবং যেকোনো দেশের জন্য এটিই বিনিয়োগের সর্বোত্তম খাত। গায়ানার উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান গায়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ পুনর্গঠনের বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি। বিভাগটির ডিন এলিনা ট্রিম বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের এখন পর্যন্ত পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মসূচির কোনো ল্যাব নেই।

পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী তৈরি করতে না পারলেও এখানকার অন্য প্রকৌশলীদের তেল খাতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। দুই বছর আগে ১০ জনকে এ খাতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত বছরও একই নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তাদের আরো ২০ জন কর্মী প্রয়োজন।

জর্জটাউনের দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোর একটি সোফিয়া। এ অঞ্চলের মানুষকে তেমন একটা আশান্বিত হতে দেখা যাচ্ছে না। এখানকার অল্প কিছু স্বনির্মিত বাড়ি ও কুঁড়েঘরে বিদ্যুৎ চালু হয়েছে। একটি ইউথ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা কলিন মার্কস আশঙ্কা করছেন, সম্ভাব্য নতুন সম্পদ এ অঞ্চলের মানুষের উপকারে আসবে না। এছাড়া দেশের জন্য এ সম্পদ কতটা উপকারে আসবে, এ বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি নাইজেরিয়া, গিনি ও ভেনিজুয়েলার তেলসম্পদের পরিণতির বিষয় উল্লেখ করেন। তথ্যসূত্র: বিবিসি

More News Of This Category