1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

নতুন গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বাজার বাড়ছে!

মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাহিদা। গাড়ি কেনার ঋণ দিতে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে গাড়ি কেনায় ঝুঁকছেন অনেক মানুষ। তবে বিক্রির দিক থেকে পুরোনো গাড়িই শীর্ষে।

আর নতুন গাড়ির চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। সে জন্য গত দুই বছরে নতুন আমদানি বেড়েছে। জানা যায়, একসময় পুরোনো গাড়ির চেয়ে নতুন গাড়ির দাম কয়েক গুণ বেশি ছিল। তবে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নতুন গাড়ির বেচাবিক্রি কম। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রকল্পের জন্য অনেক নতুন গাড়ি বিক্রি হচ্ছে।

বাণিজ্যিক বা পণ্য পরিবহনের জন্য নতুন গাড়ি বিক্রি সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কিস্তিতে গাড়ি কেনার সুবিধা দিয়েছে দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী দেশের প্রধান এই বন্দর দিয়ে গত সাত বছরে ১৬ হাজার ২২১টি নতুন গাড়ি আমদানি হয়েছে। ২০১৩ সালে ১ হাজার ৬৫০টি নতুন গাড়ি আমদানি হয়।

পরের বছর সেটি বেড়ে ২ হাজার ৮৬-তে দাঁড়ায়। গত বছর ২ হাজার ১৩৪টি নতুন গাড়ি আমদানি হয়েছে। আর চলতি বছরের ১০ মাসে ১ হাজার ৭৯৪টি নতুন গাড়ি এসেছে। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাসেই আসে ১ হাজার ২৯৭টি।

অবশ্য দেশে গাড়ি বিক্রির দিক থেকে নতুনের চেয়ে পুরোনো অনেক বেশি এগিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট আমদানি হওয়া গাড়ির প্রায় ৮৮ শতাংশ পুরোনো বা রিকন্ডিশন্ড। গত বছর ২ হাজার ১৩৪টি নতুন গাড়ির বিপরীতে পুরোনো গাড়ি এসেছে ১৬ হাজার ১৫৩টি। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই এসেছে ১৩ হাজার ৩৭৬টি পুরোনো গাড়ি। এসব গাড়ির প্রায় সবই আসে জাপান থেকে।

নতুন গাড়ি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ আসছে। বিশ্বখ্যাত মিতসুবিশি, টয়োটা, হুন্দাই, নিশান, ফোর্ড, টাটা, মাহিন্দ্র, হিনো, অশোক লেল্যান্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অনুমোদিত বিপণন প্রতিষ্ঠান আছে দেশে।

বাংলাদেশে টয়োটা ও হিনো গাড়ির ডিস্ট্রিবিউটর নাভানা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপক মো. লুৎফুল করিম বলেন, করপোরেট
অফিস ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নতুন গাড়ি কেনা হয়। সেই বাজার স্থিতিশীল থাকলেও ব্যক্তিপর্যায়ে নতুন গাড়ি বিক্রি ওঠানামার মধ্যে আছে।

কারণ হচ্ছে, পুরোনো গাড়ির চেয়ে নতুন গাড়ির দাম কয়েক গুণ বেশি—মানুষের মধ্যে পুরোনো মনোভাবটি এখনো রয়ে গেছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে লুৎফুল করিম বলেন, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালে একটি গাড়ি যেখানে সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিল, সেখানে নতুন গাড়ির দাম ছিল ১২-১৪ লাখ টাকা।

তবে সময়ের ব্যবধানে বাজার অনেকটাই সংশোধিত হয়েছে। এখন নতুন ১৫০০ সিসির একটি টয়োটা অ্যাভানজা গাড়ি কিনতে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাগে। তার বিপরীতে পুরোনো টয়োটা অ্যালিয়েন বা প্রিমিওর ২০১৪ বা ২০১৫ মডেলের একটি গাড়ি কিনতে ৩৩ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লাগবে।

গত ৫ বছরে প্রায় দেড় হাজার টয়োটা অ্যাভানজা বিক্রি করেছে নাভানা লিমিটেড। তথ্যটি জানিয়ে লুৎফুল করিম বললেন, ‘নতুন গাড়ির ব্যবসা বাড়ছে। তবে আনুপাতিক হারে এখনো কম। পুরোনোর চেয়ে নতুন গাড়ির দাম কয়েক গুণ বেশি, এই মনোভাব পরিবর্তন হলে বিক্রি আরও বাড়বে। সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, নতুন কিংবা পুরোনো উভয় গাড়ির দাম আকাশচুম্বী হওয়ার মূল কারণ আমদানি পর্যায়ে উচ্চ শুল্ক হার। সরকার যদি শুল্ক কমাতে না চায়, তবে মূল্য কমাতে দেশের অভ্যন্তরে গাড়ি উৎপাদন কিংবা সংযোজন কারখানা স্থাপনই হচ্ছে বড় সমাধান। তবে গাড়ি উৎপাদনের মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।

গাড়ি সংযোজনের সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে আছে। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি কার, জিপ, বাসা, ট্রাক, পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স সংযোজন ও বাজারজাত করেছে। তবে বেসরকারি পর্যায়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়তে বড় বিনিয়োগ দরকার।

বাংলাদেশে মিতসুবিশি, মার্সিডিজ-বেঞ্জ ও মাহিন্দ্র ব্র্যান্ড গাড়ির ডিস্ট্রিবিউটর র‍্যাংগস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ মনে করেন, গাড়ি সংযোজনের কারখানা করার মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে গাড়ির চাহিদা থাকতে হবে। না হলে সংযোজন কারখানা টিকে থাকতে পারবে না।

ভারতীয় ব্র্যান্ড মারুতি সুজুকি গাড়ির এদেশীয় পরিবেশক উত্তরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনই যদি সরকার আমাদের দেশে গাড়ি বানাতে বলে, তাহলে সেটি বাস্তবতার কারণেই সম্ভব নয়।

গাড়ি উৎপাদন করতে হলে প্রথমে যন্ত্রাংশ সংযোজন দিয়ে শুরু করতে হয়। আমাদের সেই ইচ্ছা আছে। কিন্তু গাড়ির সংযোজন কারখানা করতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো দরকার, তা সরকারের সহযোগিতা না পেলে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একই সঙ্গে সরকারকে অবশ্যই রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকেও নিরুৎসাহিত করতে হবে।’

বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ জনে গাড়ি রয়েছে ৩ জনের। টয়োটাসহ জাপানি নতুন মডেলের গাড়ির দাম ২০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা। অডি, বিএম​ডব্লিউসহ জার্মানির বিলাসী গাড়ির দাম ৭০ লাখ থেকে সোয়া ২ কোটি টাকা। চলতি বছর মোটরসাইকেলের বিক্রি ছাড়াবে ২.৫ লাখ।

সূত্র: কারমুডি ও বিএমএএমএ।

More News Of This Category