1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

নতুন নিয়মে সঞ্চয়পত্র কিনতে ভোগান্তি

সঞ্চয়পত্র কেনার নতুন নিয়মের কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে গ্রাহকের নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ লাগবে। এর সঙ্গে নিজ নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টও লাগবে, যেখানে প্রতি মাসে পাঠানো হবে মুনাফার টাকা।

একই সঙ্গে দাখিল করতে হবে নমিনিদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র। গ্রাহকদের জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে সঞ্চয়পত্র কেনার এসব নতুন নিয়ম। এতে সঞ্চয়পত্র কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ গ্রাহকরা পড়ছেন বিপাকে। অনেকে আগের মতো আর সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না।

গত ২ মে থেকে বিভাগীয় শহরগুলোতে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম চালু করা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এ নিয়ম চালু হবে। অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফরমে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও টিআইএন নাম্বার দেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট ঘর রয়েছে। একই সঙ্গে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারও দিতে হবে।

এসব না দিলে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে তিন লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছিলেন রাজধানীর পোস্তগোলার বাসিন্দা লিপি আক্তার নামের একজন গৃহিণী। দীর্ঘদিন সংসারের খরচ বাঁচিয়ে অল্প অল্প করে এই টাকা জমিয়েছেন তিনি।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে জানতে পারেন, নতুন নিয়মে তার সঞ্চয়পত্র কেনার প্রস্তুতি নেই। লিপি আক্তার বাংলাদেশ ব্যাংকে টাঙানো বিজ্ঞপ্তি বারবার পড়ছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার তো টিআইএন নেই। আমি কি তাহলে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারব না?’ আবার বলছিলেন, ‘টিআইএন ছাড়া এক লাখ টাকা করে কি দুইবারে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে?’ এ সময় পাশ থেকে আরেকজন বলছিলেন, এক অর্থবছরে টিআইএন ছাড়া এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। এর বেশি কিনতে চাইলে নিজের টিআইএন সনদ জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। তখন লিপি আক্তার চিন্তিত হয়ে পড়েন।

শুধু লিপি আক্তার একা নন, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের ওয়েবভিত্তিক (অটোমেশন) সিস্টেমের আওতায় সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন পুরুষ-মহিলা-নির্বিশেষে অনেক গ্রাহকই। যারা নতুন সিস্টেম সম্পর্কে আগে থেকে জানতেন না। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে যারা সাধারণ গৃহিণী, তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। কারণ তাদের টিআইএন সনদ নেই। অনেকের নেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টও।

লিপি আক্তার বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ গৃহিণী। আমার টিআইএন সনদ নেই। এটা তুলতে সময় লাগবে। তাহলে আমি একবারে তিন লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছি না। এখন এক লাখ টাকার কিনতে পারতাম। কিন্তু সেটিও পারছি না। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চাইছে। আজ তো আর হচ্ছে না, তাই চলে যাচ্ছি।’

রাজধানীর সাইনবোর্ড থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে আসেন শেখ সাদিয়া আক্তার স্বর্ণা নামের আরেক গৃহিণী। তিনি বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু সেটা কিনতে পারছি না। টিআইএন সনদ চাচ্ছে। কিন্তু এটা তো আমার নেই। এটা কখনও দরকার হয়নি। শুধু টিআইএন নয়, নতুন নিয়মে আরও অনেক কিছু চাওয়া হচ্ছে। যেগুলো পরিপালন করা কঠিন।’

রাজধানীর কমলাপুর থেকে আসা আরেক গৃহিণী সুমাইয়া আক্তারও একই অভিমত দেন। তিনি বলেন, ‘এটা সমস্যাই বাড়িয়েছে। শুধু টিআইএনই নয়, আমরা যদি এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রও কিনি তাহলেও ব্যাংক হিসাব নম্বর ও তার চেকের পাতা জমা দিতে হবে। আগে এগুলো ছিল না।

এখন নমিনির এনআইডির ফটোকপিও জমা দেয়ার নিয়ম করেছে। এছাড়া আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদপূর্তির পর ওই টাকা দিয়ে নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনতেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই টাকা আগে নগদে তুলে সঞ্চয়পত্র কেনা সম্ভব হলেও এখন নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে চেকের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে। এতে টাকা বহনের নিরাপত্তা ঝুঁকিও আছে। কে দেবে আমাদের সেই নিরাপত্তা?’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে সরকার থেকে একটা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সে সুবিধা কে বা কারা ভোগ করছে এবং সরকার এখান থেকে এর বিপরীতে যে টাকা ঋণ হিসেবে নিচ্ছে সেটা একটা নিয়মের মধ্যে থাকা উচিত।

দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই এটা হওয়া উচিত। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে। ফলে কেউ চাইলেই অবৈধ অর্থে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না। প্রাথমিকভাবে কিছুটা অসুবিধা হলেও প্রচারণা বাড়লে সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে যাবে। তখন আর অসুবিধা হবে না। তথ্যসূত্র: যুগান্তর।

More News Of This Category