1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

নিজেকে কলুর বলদ ভাবতে যাবেন না কারন ওটা আপনার বস ভাবে

অনেকের কাছে চাকরী সোনার হরিণ নয় হাতি। কারও কাছে চাকরী মানে নিরাপত্তা। আবার কারও কাছে সেই চাকরীটা আতংক। আতংকের কথা শুনে আৎকে উঠবেন না প্লিজ। কেন আতংক বলছি সেটা জানতে চার থেকে পাচ মিনিটে ধৈর্য্য ধরে লেখার শেষটা পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে এক মুহুর্ত দেরী না করে শুরুটা করা যাক।

বর্তমান সময়টা সব শ্রেণীর মানুষের কাছে খুব চ্যালেজিং। বিংশ শতাব্দীর এই প্রতিযোগীতার বাজারে একটা চাকরী যোগাড় করা চাট্টি খানি নয়। মামা-খালুর কেরামতিতেও যেন প্রতিযোগীতা লেগে আছে। জিতে যেতে হলে শুধু আপনার নয় মামারও মামা থাকা চাই। সরকারী চাকরী যোগাড়ে থাকা চাই এক সমুদ্র যোগ্যতার বিলাসিতা। আর বেসরকারী চাকরী, সেখানেও যেন ভেলকিবাজির শেষ নেই।

অবশ্য শেষ নেই বললে ভুল হবে। বিকাল ৫ টার অফিস রাত ৯টা ১০টায় শেষ। সকালে উঠে টেবিলে নাশতা শেষ না হলেও জ্যামে পড়ে ঘামে ভিজে শরীরে থাকা জামাটার বারোটা বেজে শেষ। অফিসে একটু লেটে ঢুকলেই বসের ঝাড়ি খেয়ে সারা দিনের কাজের মুড শেষ। কাজের চাপে বাড়ি থেকে আসা বউয়ের ফোন কলটা বেজে বেজে শেষ। অফিস থেকে ঘরে ফিরতে না ফিরতে শান্তিও শেষ।

অনুগ্রহ পূর্বক নিজেকে কলুর বলদ ভাবতে যাবেন না। কারন ওটা আপনার উর্ধতন বস ভাবে। না হলে কৌঁশলে আপনাকে খাঁটিয়ে মারে। সেই সাথে ইনক্রিমেন্ট আর প্রমোশনের লাল মুলা ঝুলিয়ে রাখে। বছর শেষে আপনার কাজে সন্তুষ্ট না হলেও বছর বছর ব্যবসা বাড়িয়ে মালিক মহাজন তৃপ্তির ঢেকুর তুলে। বলি আপনার সাথে যে বৃদ্ধা আঙুল টা আছে সেটা তুলে রেখেছেন কেন। কাজে লাগান!

ওহ আপনার তো অফিস আছে! কাজ আছে! ব্যস্ততা আছে! নেই শুধু অবসর! আচ্ছা হটাৎ যদি আপনাকে অবসরে পাঠানো হয় তাহলে কেমন হয় বলুন তো। সেচ্ছা অবসর! চাকরী চুত্যি! এই বয়সটা যখন আপনার ৩৮ থেকে ৪৫ এর কোঠায়! ঠিক আপনার বেতনের একই টাকায় যখন আপনার বদলে ২/৩ জন আপনার স্থলে খাটানো যায়। তাহলে মাস শেষে আপনাকে এতগুলো মোটা অংকের টাকা দেওয়ার কোন মানেই হয় না। বিদায় হোন!

বেশতো চাকরীটা গেলো। অনেক দিন পরিমিত বিশ্রাম নেওয়া হয়নি। অবশ্য সে সুযোগ জুটবে না। টেনশন আপনাকে বিশ্রামের সুযোগ দিলে তো। অনেক দিন চাকরী করে যা গুছিয়েছেন তা দিয়ে না হয় বড়জোড় ৩ থেকে ৬ মাস চালিয়ে নিবেন। অবশ্য তত দিনে যে নতুন চাকরী জুটে যাবে এ নিশ্চয়তাও নেই। নতুন করে বেকার হওয়ার মজা কিন্তু মন্দ নয়। বিশেষ করে যখন সমস্ত পরিবারের ভার আপনার মাথার উপর। আপনিই যেখানে পরিবারের একমাত্র হর্তাকর্তা বল ভরসা।

চাকরী যাবার প্রথম কিছু দিন যতটা রিলাক্স বোধ করছিলেন এবার বোধহয় ততটা নেই। আসলে আমাদের এই এক দোষ। টেনশন ছাড়া থাকতে একমুহুর্ত ভাল লাগে না। কিসের রিলাক্স! আশপাশের পরিচিত মানুষগুলো কেমন যেন অপরিচিতের মত আচরণ করছে। এই দেখে কি রিলাক্স বোধ করা যায়। কাছের দূরের যারাই একটু জানতে পেরেছে তারাই কেমন যেন একটু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে।

ইতিমধ্যে অবশ্য বেশ কিছু পরিচিত জনেরা আপনাকে আশার বাণী দিয়ে সিভি সংগ্রহ করে নিয়েছে মেইলে। এদিকে মাস যায় আর আশ্বাসের দীর্ঘশ্বাস ভারী হয়। এতদিনে যারা চাকরী জুটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তারও ফোন কল ধরাও বন্ধ করে দিয়েছে। পকেটের ওজন কমতে না কমতে দূর সম্পর্কের আত্মীয়, নিকট আত্মীয়, আপন আত্মীয় সবাই কেমন যেন এড়িয়ে চলছে আপনাকে।

নতুন করে বেকারত্বের প্রতিটা দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। পকেট ইতিমধ্যে খালি করে সল্প মেয়াদী, দীর্ঘ মেয়াদী সব ধরণের ধারের খাতা খুলে বসেছেন। সন্তানের স্কুলের বেতন, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ও ওষুধের টাকা, বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল গ্যাস বিল, সংসার খরচ সব মিলেয়ে এবার দিশেহারা হবার পালা। এতক্ষণে হয়ত সেই ব্যংক কর্মকর্তাদের কথা পড়েছে। যারা আপনার বেতনের অংকের উপর ভিত্তি করে লোন অফার করত। তারা আবার খুব রশিক বেকারদের তো লোন হয় না।

অবশেষে এবার ওপরের পানে চেয়ে থেকে সৃষ্টিকর্তার সাহায্যের আশা আর হতাশার পথে দীর্ঘ সময় হাঁটা। ব্যবস্থা কিছু একটা জুটে যাবে ততক্ষণে হয়ত কাধে চেপে বসেছে মন্দ ঋণের বোঝা। হয়তো আগের থেকে কম-বেশী বেতনে কিংবা ছোট-বড় কোন পদে। মাঝের দুঃসহ স্মৃতিটা হয়ত ভুলেও যাবেন। কিন্তু এই পরিস্থিতি তো সবার জন্য সুখকর নয়। কারন এই সময়টাতে সঠিক সিদ্ধান্ত সবার নেওয়া হয় না।

সবার সব রকমের যোগ্যতা থাকে না। কেউ কেউ সেই দুঃসহ কষ্টের সমুদ্র থেকে সাঁতরে উঠে আসলেও অনেকের বের হয়ে আসতে পারে না। তারা কে কোথায় কিভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেয় সে খোঁজও অনেকের থেকে যায় অজানা। গত কিছু বছরে বাস্তবতা থেকে দেখে আসা কিছু মানুষের গল্প এটি। তবে গল্পটা সবার জন্য এমন নয়। আরও ভিন্ন থেকে আরও ভিন্ন। তবে এই সময়ে কঠিন পরীক্ষার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হয়। যতক্ষণ না আপনি সরকার যন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী হতে পারছেন। অথবা আপনার গল্পটা আপনার বস নয় আপনি নিজেই লিখছেন। লেখক: মোঃ মাসুদুর রহমান (মাসুদ) উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম।

More News Of This Category