1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

নিজের কাছে অতিরিক্ত নগদ অর্থ রাখবেন না

আজকের দিনে ‘অর্থ’ ছাড়া এক মুহূর্ত পথচলা প্রায় অসম্ভব। এটি এমন একটি জিনিস এবং এর ক্ষমতা এতোটাই যে, প্রচলিত যাবতীয় সব ধরনের সমস্যার সমাধান আপনি এটি দ্বারা করতে পারবেন। যদিও এই অর্থের প্রয়োজনীয়তা সবাই উপলব্ধি করতে পারে না। তাইতো কেউ লক্ষ্যাধিক আয় করেও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পরিচালনা করতে পারে না, এর কারণ হলো ‘অপব্যয়’।

অপরদিকে কেউবা ত্রিশ হাজার টাকা আয় করেও সপরিবারে খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবন পরিচালনা করছে, সাথে মাস শেষে কিছু অর্থ সঞ্চয়ও করতে পারছে যা শুধু মিতব্যয়ীদের দ্বারাই সম্ভব। ‘মিতব্যয়ীতা’ দৈনন্দিন জীবনে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনকেই বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্পণ্য না করে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার করাই ‘মিতব্যয়ীতা’।

“Those who when they expend, are neither extravagant nor sparing, and it is a medium in-between.” – Al-Qurân ‘মিতব্যয়ীতা’ সফলতা অর্জনেরও একটি অন্যতম মাধ্যম। শুধু অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সবক্ষেত্রেই অতিরিক্ত বিলাসিতা ত্যাগ করে ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই জীবনে সফল হবার প্রথম ও প্রধান শর্ত।

“মিতব্যয়ীতা” যা ধনী-গরিব সব শ্রেনীর মানুষের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো মিতব্যয়ীতায় সকলকে আরও উৎসাহিত করতে বিশ্বজুড়ে ৩১ অক্টোবর বিশ্ব মিতব্যয়ীতা দিবস পালন করা হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে সহজেই মিতব্যয়ী হওয়া যায়।

সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ: মিতব্যয়ী হওয়ার মানে এই নয় যে, আপনি একেবারেই খরচ করা কমিয়ে দিবেন। বরং আপনার যতোটুকু প্রয়োজন ততোটুকু অবশ্যই ব্যয় করবেন তবে তা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এবং পরিকল্পনাটি অবশ্যই হতে হবে পূর্ববর্তী। কারণ, তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা অনুযায়ী যেকোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। “If we command our wealth, we shall be rich and free. If our wealth commands us, we are poor indeed.” ~ Edmund Burke

জীবন পরিচালনার জন্য ‘অর্থ’ যেহেতু অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস, যা অনেক কষ্টে উপার্জন করতে হয়, তাই অর্থ সম্পর্কিত যেকোনো কাজই সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার অর্থ অপচয় অনেকাংশেই কমে আসবে। আর হ্যাঁ, শুধু অর্থনৈতিক নয়, জীবনের প্রতিটিক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা আপনার পথচলাকে সহজ করে দিবে।

পরিবারের সুস্থতা নিশ্চিতকরণ: “সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” অতএব পরিবারের প্রত্যেকের সুস্থতা বজায় রাখতে কোনো ধরনের কৃপণতা নয়। আমাদের দেশের গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা হলো- আমরা অসুস্থ হলে অল্পতেই সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করি না।

এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে বা ডাক্তার দেখাতে অনেক টাকা লাগবে ভেবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যেকোনো ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনে সেবন করি। হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য সুস্থতা অনুভব করি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সঠিক চিকিৎসার অভাবে সেই রোগটি আমাদের শরীরে সুপ্ত অবস্থায় রয়ে যায় যা ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার ধারণ করে।

একটা সময় তা ভালোভাবেই প্রকাশ পায়, যখন তা সাধারণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন আমাদের কাজ করার শক্তি অকেজো হয়ে পড়ে, ফলে উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি এবং চিকিৎসা খরচও হয়ে পড়ে অনেক ব্যয়বহুল। ভুগতে হয় পুরো পরিবারকে। এরকম হাজারো পরিবার আছে, যারা পরিবারের কোনো একজন সদস্যের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে একটা সময় নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাই পরিবারের সুস্বাস্থ্য নিয়ে কোনো অবহেলা নয়।

পরিকল্পিত বাজেট নির্ধারণ: ছোটবেলায় বাংলা বইয়ের এক কথায় প্রকাশে পড়েছিলাম, “আয় বুঝে ব্যয় করে যে= মিতব্যয়ী”। ঠিক তাই! আপনি যদি জীবনে সফল হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই মিতব্যয়ী হতে হবে। আপনার ব্যয়ের পরিমাণ কখনো যেন আয়ের চেয়ে বেশি না হয় বরং কম করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করুন।

সেই বাজেটই আপনাকে অপ্রয়োজনে অর্থ ব্যয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। “Don’t tell me what you value, show me your budget and I will tell you value.” ~ Joe Biden বাজেট অনুযায়ী চলার সবচেয়ে কার্যকরী একটি পদ্ধতি হলো- বিভিন্ন খাতে আপনার বাজেটকৃত টাকাগুলো আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করে রাখুন।

যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা, বিনোদন ও অন্যান্য ব্যয় অনুযায়ী বাজেট করা যেতে পারে। এমনকি আপনি প্রতিটি বাজেটের অর্থ আলাদা খামে রেখে লিখে রাখুন, কোন অর্থটা কিসের জন্য আপনি ব্যয় করতে চান। ভুলেও এক বাজেটের অর্থ অন্য বাজেটে ব্যয় করবেন না। একটু কষ্ট করে হলেও চালিয়ে যাবেন, দেখবেন বাজেটকৃত মাসটি ঠিকই ভালোভাবে কেটে যাবে।

অবসর সময়কে কাজে লাগান: আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা তাদের জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় অকারণ ও অবহেলায় নষ্ট করে থাকে। অথচ গড়ে ৬৫-৭০ বছরের ক্ষুদ্র জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডের মূল্য অতুলনীয়। তাই তো, বিখ্যাত সব সফল ব্যক্তিদের জীবনী লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তারা প্রতিদিন ১২-১৪ ঘন্টা নিরলসভাবে কাজ করে থাকেন। “Everyday is a bank account, and time is our currency. No one is rich, no one is poor, we’ve got 24 hours each.” ~ Christopher Rice

মিতব্যয়ীতা শুধু অর্থের জন্যই নয় বরং সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আপনাকে মিতব্যয়ী হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার কাজ, খাওয়া, ঘুম, বিনোদন ও অন্যান্য কাজ সম্পাদনের পরেও যদি কিছু অবসর সময় পেয়ে থাকেন তাহলে সে সময়টুকুও বাড়তি আয়ের জন্য কোনো মাধ্যম ব্যবহার করুন। পরিমাণে অল্প হলেও সমস্যা নেই। ঐ অর্থগুলো আপনার সন্তানের ঐচ্ছিক চাহিদা, বাড়তি খরচ ও সঞ্চয় বৃদ্ধিতে কাজে দিবে।

মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকুন: মাদক সেবনের কোনো ইতিবাচক দিক নেই, যা আছে পুরোটাই নেতিবাচক। এটি আপনার অর্থ, শারীরিক, মানসিক ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে এটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। কিছুদিন আগে এক প্রেস কনফারেন্সে ‘জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর’ এর সদস্য ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশে প্রায় ৭০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে, আর প্রতিবছর মাদকের পেছনে তারা ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে।’

অতএব মাদক আপনাকে দিন দিন শুধু ব্যর্থতার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে, সফলতার দিকে নয়। এবং মাদক গ্রহণের ফলে সৃষ্ট রোগসমূহও জীবননাশক। যা আপনাকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিবে। তাই আপনি যদি ন্যূনতম কোনো প্রকার মাকদের সাথেও জড়িত থাকেন, তাহলে আজ হতেই এ পথ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার চেষ্টা করুন। এতে আপনি শারীরিকভাবে যেমন সুস্থ থাকবেন, তেমনি প্রতিদিন মাদকের পেছনে নষ্ট হতে যাওয়া অর্থগুলোও বেঁচে যাবে। এই মিতব্যয়ীতাই একদিন আপনাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়: মনে রাখবেন, জীবন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে বিপদ আসাটা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় এবং সেই যুদ্ধক্ষেত্রের বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনাকেই লড়তে হবে। এখানে কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসবে না, কারণ তারাও ঠিক আপনার মতোই তাদের জীবনযুদ্ধে লড়ছে।

জীবনযুদ্ধের বিপদ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করতে পারে আপনারই গড়া সঞ্চয়। তাই আপনার আয়-ব্যয় যাই হোক না কেন, সঞ্চয়ের জন্য আলাদা একটি বাজেট রেখে দিবেন। “Small amounts saved daily add up to huge investments in the end” ~ Margo Vader
আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় সাধন করে প্রতি মাসে নিদির্ষ্ট পরিমাণ টাকা সঞ্চয় হিসেবে রেখে আপনি আনুপাতিক বাজেট নির্ধারণ করতে পারেন। এই বাজেট পদ্ধতিকে অনেকেই ৫০-৩০-২০ বাজেটও বলে থাকে।

এই পদ্ধতিতে আপনার অর্জিত টাকা আনুপাতিক হারে ব্যয় করতে হবে। যেমন- ৫০ শতাংশ অর্থ আপনি এমন কাজে ব্যয় করবেন যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং কোনোভাবেই অবহেলা করা সম্ভব না। ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করবেন আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনে এবং বাকি ২০ শতাংশ অর্থ আপনি সঞ্চয় করবেন ও প্রয়োজন ছাড়া সঞ্চয়ের অর্থ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকবেন।

নিজের কাছে অতিরিক্ত নগদ অর্থ রাখবেন না: আপনি অনেক ভালো একটি চাকরি করেন কিংবা বড় একজন ব্যবসায়ী। আপনার কাছে সবসময় অতিরিক্ত অর্থ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে বর্তমান সময়ে নিজের কাছে নগদ অর্থ রাখাটা কি আদৌ নিরাপদ? মোটেও না! এটি যেমন আপনাকে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগাবে, ঠিক তেমনি নগদ অর্থ থাকার ফলে আপনার অতিরিক্ত খরচের পরিমাণও বেড়ে যাবে। কেননা হাতে নগদ টাকা থাকলে তা আমরা অনায়াশেই শেষ করে ফেলি।

মাসের শুরুতেই আপনার বাজেট অনুযায়ী অর্থগুলো আলাদা করে রাখার পর অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় হিসেবে রেখে দিন। বাইরে কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে আগে থেকেই লিস্ট করে রাখুন এবং সেই খরচ অনুযায়ী টাকা সাথে নিন। অতিরিক্ত অর্থ সাথে নিলে প্রয়োজনের বাইরেও বিভিন্ন পণ্য কেনার প্রবণতা এসে যায়, যা আপনাকে মিতব্যয়ী হতে বাধা প্রদান করে।

সুতরাং, আপনি মানুন আর না মানুন, বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘অর্থ’। আর এই অর্থ উপার্জন করা কতোটা কঠিন সেটা ভালো করেই জানেন। তাই আপনার কষ্টার্জিত অর্থ কখন এবং কীভাবে সঠিক জায়গায় ব্যয় করবেন তার পরিকল্পনা আপনাকেই করতে হবে। মূল্যবান জিনিস মূল্যবান কাজেই ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আপনি, আপনার পরিবার ও আপনার আশেপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে খুব ভালো থাকতে পারবেন। তথ্যসূত্র: স্পাইক স্টোরি।

More News Of This Category