1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

নিজের ভালোর জন্য অপরের ক্ষতি করার মনোভব বদলান

আমরা সফল মানুষদের গল্প শুনতে পছন্দ করি। বিল গেটস, জাকারবার্গ, আইনস্টাইন কিংবা একজন এপিজে আবদুল কালামের সাফল্যগাথা পড়ে আমরা অনুপ্রাণিত হই। কিন্তু সেই মানুষটা কিভাবে সফলতার শীর্ষে পৌছলেন তা নিয়ে কি একবারও চিন্তা করি? চিন্তা করলে সেগুলো কি নিজের জীবনে এপ্লাই করার চেষ্টা করি?

ক’জন অভিভাবক আছেন যারা তাঁর সন্তানকে স্বপ্ন দেখান? সবাই ভাবে, আমার ছেলে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, বড় কর্মকর্তা হবে, জজ-ব্যারিস্টার হবে। কেন মহাকাশ বিজ্ঞানী হবে না? কেন একজন বিলগেটস বা জাকারবার্গ হবে না? এমন কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে হবে যা অন্যেরা শুনলে চমকে উঠবে। তা না হলে স্বপ্ন কিসের?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলে-মেয়েরা বাসায় মা-বাবার চাপে থাকে। স্কুলে টিচারদের চাপে থাকে। তারা খেলতে যেতে পারে না। মন খুলে হাসতে পারে না। টেক্সট বইয়ের বাইরে কোনো বই পড়ে না। পত্রিকা পড়ে না। স্মার্ট ফোন নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত। তাহলে ছেলেমেয়েরা শিখবে কী? সৃজনশীলতা আসবে কোত্থেকে?

উন্নত দেশগুলোতে কিন্তু প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়ায় তেমন চাপ থাকে না। খেলাধুলা আর আনন্দ-স্ফূর্তির মধ্য দিয়ে তাদের লেখাপড়া শেখা হয়ে যায়। ওভাবে শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের তৈরি করে। শিক্ষকরা খেলতে খেলতেই লক্ষ্য করেন, কোন বাচ্চা কি করতে চায়? কোন বাচ্চার ঝোঁক কোন দিকে? সেদিকেই তাকে ধাবিত করা হয়।

একজন হতে চায় খেলোয়াড়; তাকে যদি ধরেবেঁধে ডাক্তারি পড়তে দেওয়া হয় তাহলে কি হবে? কোনো সন্তানের ওপর অভিভাবকের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। আমাদের দেশে প্রত্যেকের ওপর অভিভাবক কিংবা শিক্ষকরা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। ফলে বাচ্চারা সঠিকভাবে এগোতে পারে না। তারা যদি নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারে তাহলে অনেক ভালো করতে পারে। এ বিষয়টি অভিভাবকদের অনুধাবন করতে হবে।

একটা ছেলে বা মেয়ের সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে অভিভাবকের একটা বড় ভূমিকা থাকে। সেই ভূমিকা হতে হবে ইতিবাচক। সারাক্ষণ লেখাপড়ার জন্য বেশি চাপ দেয়া ঠিক না। আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়ার অভ্যাস করানো বেশি জরুরি। বিশ্বকে জানতে হলে নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বেশি বেশি বই পড়তে হবে। শুধু পাঠ্য বই পড়ে হয়তো পরীক্ষায় পাস করা যাবে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে না।

ছেলে-মেয়েকে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে হবে। তার ওপর কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করা যাবে না। তাকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। ক্লাশে ফার্স্ট-সেকেন্ড হলেই যে সে পরবর্তী জীবনে ভালো করবে তা নয়। তাকে ভালো মানুষ হতে হবে। সততা, নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে হবে। ভালো-মন্দ বুঝে কাজ করা এবং ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

একটা কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, মিথ্যা দিয়ে খুব বেশি দূর যাওয়া যায় না। নিজের ভালোর জন্য অপরের ক্ষতি করার মনোভাব বদলাতে হবে। অন্যের ক্ষতি করে নিজে ভালো থাকা যায় না। প্রকৃতিও সেখানে রুখে দাঁড়ায়। যারা হেসে খেলে বড় হয়, যারা অন্যের ক্ষতি চিন্তা করে না, বরং অন্যের যথাসম্ভব উপকার করে, মনখুলে যারা হাসতে পারে; তারাই হেসেখেলে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। তাদের জীবনই অনেক আনন্দময় হয়ে ওঠে।

আমি অনেক ভালো ছাত্রকে চিনি, যারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ফার্স্ট-সেকেন্ড হতো; তারা পরবর্তী জীবনে ভালো করতে পারেনি। মধ্য কিংবা পেছনের সারিতে থেকেও অনেকে পরবর্তী জীবনে অনেক ভালো করেছেন। জীবনটা হচ্ছে একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অব্যাহত প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। সেখানে ভুল হতে পারে। তা আবার শুধরে নিতে হয়।

কোথাও বাধা এলে থমকে যাওয়া চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে মনোবল একটা বড় শক্তি। যত বিপদই আসুক, মনোবল শক্ত রাখতে হবে। একটা মাকড়সার কথাই ভাবুন না! এক মাথা থেকে আরেক মাথায় সুতা বাঁধার জন্য মাকড়সা কতবার চেষ্টা করে! কেউ কি তা লক্ষ্য করেছেন? লেখক: মোস্তফা কামাল। তথ্যসূত্র: কালের কন্ঠ।

More News Of This Category