1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস এখন চীন।

একটা সময় বাংলাদেশে চীনারা আসত মূলত ঠিকাদার হিসেবে। এখনো আসছে। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বড় বিনিয়োগও করছে তারা। রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) বাইরেও নানা খাতে বিনিয়োগ করছে দেশটি। গত পাঁচ অর্থবছরের সমন্বিত পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎসও এখন চীন। এ সময়ে চীন থেকে দেশে বিনিয়োগ এসেছে ৮১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ অর্থবছরে চীনের পরই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। আলোচ্য সময়ে দেশটি থেকে আসা বিনিয়োগের পরিমাণ ৭৮৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগের উৎস সৌদি আরব। দেশটি থেকে গত পাঁচ বছরে বিনিয়োগ এসেছে ২৪৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার।

বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনে শ্রমের মজুরি বেড়েছে। দেশটি এখন উচ্চপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী। এ পরিস্থিতিতে দেশটি থেকে অনেক বিনিয়োগ অন্য দেশে সরে যাচ্ছে। এ বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, চীনের বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডারের আকার বেশ বড়। তারা বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশেও দেশটির বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক। দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে ভারত না থাকলেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আছে। কাজেই এ অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ চিত্রে তার প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন। পদ্মা সেতুসহ বেশকিছু বড় প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবেও রয়েছে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দেশটি থেকে বড় বিনিয়োগ আসছে পায়রা বন্দরে। আলোচনা হয়েছে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনা বিনিয়োগ নিয়েও। সর্বশেষ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগ করেছে চীনা কনসোর্টিয়াম। জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান শেভরনের বাংলাদেশের ব্যবসাও কিনতে চেয়েছিল চীনা প্রতিষ্ঠান।

তবে বাংলাদেশের চাহিদা ও দেশটির সক্ষমতার বিচারে এ বিনিয়োগ কম বলে মনে করেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। চীনের বিনিয়োগ আরো বাড়াতে এখনই শক্তিশালী প্রকল্প পরিকল্পনা জরুরি জানিয়ে তারা বলছেন, ১০-২০ বছর পরে উন্নত বাংলাদেশে যে ধরনের প্রকল্প প্রয়োজন, এখনই তা লাইনআপ করে রাখা প্রয়োজন।

এগুলো হতে হবে বড় প্রকল্প। তাহলে চীনের মতো বড় অর্থনীতির দেশ থেকে বিনিয়োগ আনা সহজ হবে। শুধু প্রকল্প প্রস্তাব দিলে হবে না।বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এটিএম আজিজুল আকিল বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশে বিপুল বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সামর্থ্যবান বিনিয়োগকারী দেশগুলোর অন্যতম চীন। তাদের বিনিয়োগ আসবে, এটা অনেকদিনের প্রত্যাশা। কিন্তু আমাদের চাহিদা ও দেশটির সক্ষমতার বিচারে এ বিনিয়োগ কম। তবে আশার কথা হলো ধীরগতিতে হলেও বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে।

বিডার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিদেশী বিনিয়োগের শীর্ষ ১০ উেসর মধ্যে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডস। আলোচ্য সময়ে এ দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ এসেছে যথাক্রমে ২২৬ কোটি ১০ লাখ, ১৯৬ কোটি ২০ লাখ ও ১৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

শীর্ষ দশের সপ্তম থেকে দশম অবস্থানের দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, থাইল্যান্ড ও জাপান। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ এসেছে ১২১ কোটি ৯০ লাখ, ভারত থেকে ৯৭ কোটি ৬০ লাখ, থাইল্যান্ড থেকে ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ও জাপান থেকে ৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে জাপানের কাছ থেকেও বড় আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এ দেশটিও স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্টের দিকে ঝুঁকছে। জাপানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে গত দুই বছরে, সব দেশই এখানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশে বসে অনেক ধরনের ব্যবসা করা সম্ভব বলেই এ আগ্রহ প্রকাশ করছে তারা।

বিডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার বা সাড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। এ বিদেশী বিনিয়োগগুলো এসেছে মোট ৪৫টি দেশ থেকে।

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রচলিত উৎস হিসেবে চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, ভারত থেকে সংগত কারণেই বিনিয়োগের প্রত্যাশা বেশি থাকে। যদিও প্রাপ্তি এখনো তেমন একটা বড় নয়। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) নির্বাহী পরিচালক জামিল ওসমান বলেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই কৌশলগত বিনিয়োগ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। চীন হোক বা অন্য কোনো দেশ, সবার ক্ষেত্রেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা।

More News Of This Category