1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

বিসিকের প্রকল্প মানেই দেরি

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হাতে কোনো প্রকল্পের দায়িত্ব গেলেই সেটা দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যায়। শুধু পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনের আলোচনায় আসা রাসায়নিক পল্লি বা প্লাস্টিক শিল্পনগর নয়, বেশির ভাগ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই দীর্ঘ সময় ব্যয় করে সংস্থাটি সামান্যই অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে।

বিসিকের এখন চলমান প্রকল্পের সংখ্যা ২৭। বেশির ভাগেরই অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার অভাব, যথাসময়ে বরাদ্দ না পাওয়া, জমি অধিগ্রহণে ব্যয় বেশি হওয়া, দুর্নীতি, জনবল ঘাটতি ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত বিসিক। ২০১০ সালের পর ৯ বছরে বিসিকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১১ জন চেয়ারম্যান।

ঘন ঘন শীর্ষ পদে পরিবর্তন ও অবসরের আগে অল্প সময়ের জন্য নিয়োগ পাওয়ার কারণে বিসিক প্রধানদের মধ্যে সংস্থাটিকে কার্যকর করার দিকে নজর থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটিতে জনবলসংকটও প্রকট। সর্বশেষ হিসাবে, ২ হাজার ৪১০টি পদের মধ্যে খালি আছে ৯২৮টি। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির পদ খালি ৪৫৬টি।

অবশ্য শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার শিল্প মন্ত্রণালয় ও অধীন সংস্থাগুলোতে আমূল পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনে অন্তত ৬৯ জনের মৃত্যুর পর গত সোমবার আশু করণীয় নিয়ে এক সভায় তিনি এই আশ্বাস দেন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে এগিয়ে নিতে ১৯৫৭ সালে বিসিকের জন্ম হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রম, বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে আইন পরিষদে বিসিক (তখনকার ইপসিক) বিল এনেছিলেন। স্বাধীনতার পর জেলায় জেলায় বিসিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত বিসিক ৭৬টি শিল্পনগর তৈরি করেছে।

এসব শিল্পনগরে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বিসিকের হিসাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিল্পনগরগুলোতে চালু থাকা ৪ হাজার ৫৮৩টি শিল্প ইউনিটে ৫৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ লাখ ৭৯ হাজার লোকের। অবশ্য অনেক জেলায় বিসিকের শিল্পনগরের অবস্থা খুবই করুণ।

চামড়াশিল্প নগরের ১৬ বছর: বিসিক সবচেয়ে দীর্ঘ সময় লাগাচ্ছে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প বাস্তবায়নে। ২০০৩ সালে সংস্থাটি ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিতে ১৯৯ একর জমিতে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প গ্রহণ করে। সর্বশেষ প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের অনীহা, মামলা, ঠিকাদারের গাফিলতিসহ নানা কারণে ১৫ বছরেও প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি বিসিক।

সংস্থাটির গত জানুয়ারি মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চামড়াশিল্প নগর প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে বুড়িগঙ্গার বদলে এখন ধলেশ্বরী নদী দূষণের অভিযোগ রয়েছে বিসিকের বিরুদ্ধে।

রাসায়নিক ও প্লাস্টিকশিল্প নগর: ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিসিকের মাধ্যমে রাসায়নিক শিল্পপল্লি প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সেই প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। অবশ্য চকবাজারে আগুনের পর প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার পেয়েছে, এখন ছয় মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা বলছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

প্লাস্টিকশিল্প নগর প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন। ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব আবদুল হালিম জানিয়েছেন, মামলার কারণে এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ আটকে ছিল। জটিলতা সম্প্রতি কেটেছে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বড় শিল্পনগরের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিসিকের নেই।

এসব প্রকল্প বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে দিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উচিত তাদের নিজস্ব কলকারখানা ঠিকমতো চালাতে নজর দেওয়া। অবশ্য বিসিকের রাসায়নিক পল্লি প্রকল্পের পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, ‘বিসিক শিল্পনগর বাস্তবায়নে পাইওনিয়ার প্রতিষ্ঠান। আমরাই দেশে প্রথম শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা শুরু করেছি।’

অন্যান্য প্রকল্প: ওষুধ খাতের এপিআই শিল্পপার্ক প্রকল্প ২০০৮ সালে নেওয়া হয়েছে। অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। ২০১৫ সালে নিজেদের ভবন তৈরির প্রকল্প নিয়ে এখন পর্যন্ত একতলা নির্মাণ করতে পেরেছে বিসিক। ২০১৬ সালে নেওয়া বিসিক মুদ্রণশিল্প নগর প্রকল্প ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা। অথচ অগ্রগতি মাত্র ২৪ শতাংশ।

বৈদ্যুতিক পণ্য ও হালকা প্রকৌশলশিল্প নগর প্রকল্প ২০১৬ সালে নেওয়া। শেষ হওয়ার কথা আগামী জুনে। এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ২৬ শতাংশ। বিসিকের চারটি নৈপুণ্য বিকাশকেন্দ্রের পুনর্নির্মাণের প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা আগামী ডিসেম্বরে। অথচ এ প্রকল্পের অগ্রগতি ১০ শতাংশ। তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।

More News Of This Category