1. editor@islaminews.com : editorpost :
  2. jashimsarkar@gmail.com : jassemadmin :

ব্যবসা বড় করার পথে বাধা অতিক্রমের উপায়

ব্যবসাগুলো শুরু হয় ছোট আকারে। স্মল ইজ বিউটিফুল— ক্ষুদ্রই সুন্দর। কিন্তু সব উদ্যোক্তাই স্বপ্ন দেখেন বড় হওয়ার, আকাশ ছোঁয়ার। কেউ বাড়েন লম্বালম্বি আবার কেউ সমান্তরাল। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর হাতেখড়ি বাণিজ্য বা ট্রেডিং দিয়ে। সেখানে সফল হলে উৎপাদনে আসেন। আবার কেউ সেবা খাতে যান। ব্যাপারটা যত সহজে বলছি, বাস্তবে মোটেও সহজ নয়। নতুন উদ্যোক্তার সামনে থাকে অনেক বাধা-বিপত্তি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তাকে এগোতে হয়। ব্যবসা বাড়ানো দূরে থাক, টিকে থাকাই অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে ঝরেও যান। অর্থ হারান, উদ্দীপনা হারান, পরিবারে লাঞ্ছিত হন।

ছোট আর বড় ব্যবসার পরিচালনা এক রকম নয়। ব্যবসা বড় করাতে হলে বাধাগুলো বুঝতে হবে। চিনতে হবে উদ্যোক্তা বা ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো। সব গাছ মহীরুহ হয় না। হওয়ার প্রয়োজনও নেই। বন মানে শাল আর সেগুন নয়, থাকে লতাগুল্ম, এমনকি দূর্বা ঘাসও। কিন্তু শাল গাছকে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পানি দিই শাল গাছ হয়ে ওঠার জন্য।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধাপ পেরোয়। জানতে হবে ধাপগুলো। প্রত্যেক ধাপের (উদ্যোক্তার কাছে) চাহিদা আলাদা। নেইল সি চার্চিল ও ভার্জিনিয়া লুইস হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে ‘বর্ধিষ্ণু ক্ষুদ্র ব্যবসার ৫টি ধাপ’ প্রবন্ধে ব্যবসার জন্ম ও বেড়ে ওঠাকে ‘অস্তিত্ব’, ‘বেঁচে থাকা’, ‘সফলতা’, ‘উড্ডয়ন’ ও ‘সম্পদের সম্পূর্ণতা’ ইত্যাদি ধাপে বিভক্ত করেছেন।

অস্তিত্ব: ব্যবসার প্রারম্ভে শুরু হয় অস্তিত্বের লড়াই। উদ্যোক্তার বড় চ্যালেঞ্জ, পণ্য বাজারে চলবে কিনা। খরচ ওঠার মতো যথেষ্ট পরিমাণ বিক্রি হবে কিনা। অনেক ক্ষেত্রে একজন ক্রেতার অবদান বিক্রয়ের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। অনেক উদ্যোক্তা এটাকে শক্তি হিসেবে ভাবেন। বুদ্ধিমানদের ভাবনা— একমাত্র গ্রাহকের ওপর নির্ভরতা কমানো অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো।

এ পর্যায়ে উদ্যোক্তা নিজেই ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকেন। তাকে একাধিক কার্যক্রম, যেমন— বিক্রয়, ক্রয়, অর্থ ব্যবস্থাপনা, কর্মী ব্যবস্থাপনা (কারখানা হলে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা) ইত্যাদি দেখতে হয়। সুতরাং উদ্যোক্তাকে একাধিক কার্যক্রমে দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। ব্যবসা আর উদ্যোক্তা এ পর্যায়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে। অর্থ ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তা তাই নিজেই দেখভাল করেন। সাধারণত উদ্যোক্তা নিজের টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা ভালো না করলে টাকা ফুরানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার নটে গাছটি মুড়োনোর আশঙ্কা বেশি।

বেঁচে থাকা: প্রথম স্তর উতরে গেলেই এ পর্বে আগমন। তার মানে পণ্যের প্রাথমিক চাহিদা এরই মধ্যে যাচাই হয়ে গেছে। এখন লড়াই বিক্রি বাড়ানোর। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা, যাতে নগদ টাকা পজিটিভ অর্থাৎ হাতে (বা ব্যাংকে) টাকা জমা থাকে। প্রথমে লক্ষ্য স্থির করা হয় অবচয় বাদ দেয়ার আগে উদ্বৃত্ত আনয়নের। অর্থাৎ ক্যাশ পজিটিভ। তারপর অবচয় বাদ দেয়ার পর। অর্থাৎ নিট লাভ পজিটিভ।

উদ্দেশ্য, ব্যবসাটা নিজের পায়ে দাঁড়ানো, আপন উপার্জনে পথচলা। এ পর্যায়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। তবু উদ্যোক্তাকে দৈনন্দিন কাজকর্মে জড়িত থাকতে হয়। সময় দিতে হয়। নিয়ম-কানুন, পদ্ধতি-প্রক্রিয়া তখনো সাজানো হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে মালিকের ওপর প্রচণ্ড নির্ভরতা। ফোরম্যান বা সেলস ম্যানেজার থাকলেও সিদ্ধান্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাই নেন।

ব্যবসা শুরুর আগে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার মতো ছক কেটে অনেক কিছুই হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করারও ফুরসত হয় না। পরিকল্পনার একমাত্র প্রয়োগ দেখা যায়— বাজেট। এ স্তর থেকে ব্যবসা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে, আবার একইভাবে বহুদিন চলতে পারে। উদ্যোক্তা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে বা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

যে স্বপ্ন বা পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তা পথচলা শুরু করেছিলেন, তার অনেক কিছুই ভেস্তে যায়। অনেক পজিটিভ জিনিস ঘটে না। আবার ছকের বাইরের অনেক নেগেটিভ জিনিসের উদ্ভব ঘটবে। কোনো এক সময় মনে হতে পারে, গোটা পৃথিবী বুঝি উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। নিজের ওপর আস্থা চলে যায়। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, যাদের খুব আপন ভেবে ব্যবসায় অংশীদার করেছিল, তাদের অনেকের ভিন্ন চেহারা উদ্ভাসিত হয়। মনে হতে পারে, তাদের আগের চেহারাটা নেহাত মুখোশ ছিল। মাঝে মাঝে সব ছেড়ে-ছুড়ে চলে যেতে ইচ্ছে হতে পারে। আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগাও বিচিত্র নয়।

সফলতা: এ স্তরে এসে ব্যবসা লাভের মুখ দেখে। উদ্যোক্তার সামনে তখন দুটি পথ খোলা থাকে— সম্প্র্রসারণ করা অথবা একই ধাঁচে ব্যবসা চালানো। প্রথম পথ বেছে নিলে উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় আরো অনেকদিন যুক্ত থাকতে হবে। আর দ্বিতীয় পথ বেছে নিলে তিনি ধীরে ধীরে বিযুক্ত হতে পারবেন। একজন উদ্যোক্তা বসে থাকতে পারেন না। তাই হয়তো তিনি নতুন কোনো উদ্যোগ নিয়ে উঠেপড়ে লাগবেন। বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য পেশাজীবী ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেবেন। বিভিন্ন পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, নীতি তৈরি করবেন।

ব্যবসার কিছু বিশ্বস্ত গ্রাহক বা গ্রাহকশ্রেণী গড়ে উঠবে। বাজারের একটা অংশ দখলে এসে যাবে এরই মধ্যে। উদ্যোক্তা সংযুক্ত না থাকলেও ব্যবসায় খুব একটা অসুবিধা হবে না। বিক্রয় বাড়বে। লাভ বাড়বে। এভাবে চলতে পারে অনির্দিষ্ট কাল, যদি না আশপাশের পরিবেশ বদলে যায় অথবা ব্যবস্থাপকরা খুব অদক্ষ বা অযোগ্য হন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে এমনকি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

উদ্যোক্তা প্রথম পথ বেছে নিলে ব্যবসা সম্প্রসারণে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন। যোগ্য, দক্ষ ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেবেন। দ্বিতীয় পন্থার জন্য খুব যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যবস্থাপক নিয়োগের প্রয়োজন হয় না; বরং বেশি দক্ষ ব্যবস্থাপক নিয়োগ দিলে গত্বাঁধা কাজে তিনি বা তারা হতাশ হয়ে যেতে পারেন।

সম্প্রসারণে দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকলেও উদ্যোক্তা খেয়াল রাখেন, এতদিনের অর্জিত সাফল্য যেন বিঘ্নিত না হয়। অর্থাৎ বিক্রি, নগদ প্রবাহ যেন ঠিক থাকে। ব্যবসা পরিচালনে যেন বাধা না আসে; বরং পরিচালনা ঝামেলাবিহীন করার জন্য উদ্যোক্তা ঋণের জোগান নিশ্চিত করেন। ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে যে অর্থের প্রয়োজন! সব ঠিক থাকলে ব্যবসায় প্রার্থিত সাফল্য আসতে পারে। আবার ওলটপালট হতে পারে অনেক কিছু, মুখ থুবড়েও পড়তে পারে ব্যবসা।

উড্ডয়ন: পণ্যের পরীক্ষা হয়ে গেছে, বাজার যাচাই হয়ে গেছে, কাঁচামাল, শ্রমিক উৎপাদন প্রক্রিয়া সবকিছু একটা নিয়মে চলে এসেছে। সরবরাহ, বিক্রয়, পাওনা আদায় সবকিছু পদ্ধতির মধ্যে এসেছে। এ স্তরে বিবেচ্য হলো, ব্যবসা দ্রুত সম্প্রসারণ করা এবং সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেয়া। সাফল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন বিকেন্দ্রীকরণ, বিশেষায়নভিত্তিক বিভাগীকরণ।

বিশেষত কারিগরি ও বিপণন বিভাগ। যোগ্য ব্যবস্থাপক নিয়োগ করে ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তর অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি তৈরি করতে হবে। উদ্যোক্তা আস্তে আস্তে ব্যবসা থেকে দূরে সরে যাবেন। পেশাজীবীরা সেই জায়গা দখল করে নেবেন।

অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা দ্রুত সম্প্রসারণ করতে চান। সেক্ষেত্রে নগদ তহবিলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ব্যবসার প্রথমদিককার অনেক কর্মী বাদ পড়তে পারেন। এমনকি বিনিয়োগকারীরা চাইলে প্রধান নির্বাহীও বাদ যেতে পারেন। সম্প্রসারণ সফল না হলে প্রতিষ্ঠান আগের ধাপে ফিরে সেই স্তরে সফলভাবে চলতে পারে। তবে বড় কিছু দুর্ঘটনা ঘটলে গড়িয়ে পড়তে পারে আরো পেছনে— ‘বেঁচে থাকা’, এমনকি ‘অস্তিত্ব’ ধাপেও।

সম্পূর্ণতা: এ ধাপের বড় চ্যালেঞ্জ অদ্যাবধি অর্জিত সাফল্য সংঘবদ্ধ করা এবং তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছোট প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন— নমনীয়তা, উদ্যোক্তাসুলভ উদ্দীপনা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বড় হওয়ার পরও বজায় রাখা। প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করেছে। হোক সেটা নিজস্ব অর্থ অথবা ঋণ নেয়ার সক্ষমতা। দক্ষ পেশজীবী ব্যবস্থাপক নিয়োজিত হয়েছে। নিয়ম-নীতি, পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি স্থাপিত হয়েছে। এসব পজিটিভ শক্তির সঠিক সমন্বয় ঘটাতে পারলে প্রতিষ্ঠানটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। আর না পারলে একই বৃত্তে ঘূর্ণায়মান চলতে থাকবে। বড় হওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন উপাদান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এদের কিছু ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত এবং কিছু উদ্যোক্তা সম্পর্কিত।

আর্থিক সম্পদ: প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সক্ষমতা থাকতে হবে। নগদ অর্থ অথবা ঋণ নেয়ার যোগ্যতা অথবা উভয় যত বেশি থাকবে প্রতিষ্ঠানের বড় হওয়া তত মসৃণ হবে।

কর্মী সম্পদ: উদ্যোক্তার একার পক্ষে একটি ছোট আকারের প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব। বড় হওয়ার জন্য তাকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। যোগ্য, বিশ্বস্ত, আন্তরিক ও দক্ষ কর্মী প্রতিষ্ঠানের পথ চলার অবলম্বন। দিনের শেষে তারাই প্রতিষ্ঠানকে ওঠাবে অথবা ডোবাবে।

পদ্ধতিগত সম্পদ: শুধু দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিলেই হবে না, তাদের উদ্বুদ্ধ করা এবং রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রেষণা থাকতে হবে। কর্মীদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। আবার সেই ক্ষমতা যাতে কেউ অপব্যবহার না করতে পারে, সেজন্য অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরালো হতে হবে।

ব্যবসায়িক সম্পদ: বাজারে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও দখল তার অগ্রযাত্রাকে মসৃণ করবে। বিশ্বস্ত ক্রেতা, সরবরাহ কাঠামো ও বিক্রেতা ধীরে অর্জন করতে হয়। এছাড়া বাজার সম্পর্কে জ্ঞান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সহায়তা করবে। ব্যবসা বড় করার জন্য উদ্যোক্তার নিজস্ব গুণাবলি, ইচ্ছা, সাহস, বুদ্ধি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উদ্যোক্তার স্বীয় উদ্দেশ্য ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে সাযুজ্য: উদ্যোক্তার নিজের উদ্দেশ্যের সঙ্গে ব্যবসার উদ্দেশ্যের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। একটি ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান হিসেবে একবার সিলেটে মাঠ পরিদর্শনে গেলাম। বিক্রয়কর্মীরা অনুনয় করছিলেন, তারা ঋণ দেয়ার মতো উপযুক্ত গ্রাহক পাচ্ছেন না। আমি বাজারে ঘুরতে বেরোলাম; যা দেখলাম, তাতে আমার চোখ ছানাবড়া।

বিশাল বিশাল দোকান। পণ্য বোঝাই করা দোকানে। কিন্তু আমাদের বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, পণ্য মজুদের তুলনায় বিক্রয় কম। কারণ কী— আমি অনুসন্ধিত্সু। সিলেটে তো ক্রেতাদের টাকার অভাব হওয়ার কথা নয়। বিক্রয়কর্মী জানালেন, উদ্যোক্তাদের পরিবারের অধিকাংশ বিদেশে থাকেন। দেশে থাকা একমাত্র ভাই পারিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। তার পরিচয় দেয়ার স্বার্থে একটা কিছু করা দরকার।

তাই অন্য ভাইবোনরা পুঁজি জোগান দেন। প্রচুর টাকা নিয়ে দোকান খুলে বসেন আদুরে ভাই। বিক্রি কী হয়, কতটুকু হয়, চাহিদা কতটুকু আছে, তা এক্ষেত্রে সামান্যই গুরুত্ব বহন করে। ব্যবসায়িক লাভ-লোকসানের চেয়ে উদ্যোক্তার উদ্দেশ্য সামাজিক পরিচয়।

উদ্যোক্তার কারিগরি দক্ষতা: যে ব্যবসা শুরু করবেন, সে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা (একাধিক উদ্যোক্তা হলে) তাদের কোনো একজনের জ্ঞান বা দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এছাড়া অন্য কারো বিপণন ও কোনো একজনের অর্থ ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান থাকতে হবে।

উদ্যোক্তার ব্যবস্থাপনা দক্ষতা: মানুষ চালানোর দক্ষতা থাকতে হবে উদ্যোক্তার। কর্মীরা শুধু বেতনের জন্য কাজ করেন না। তারা চান স্বাধীনতা, স্বীকৃতি, পুরস্কার। শুধু ধমক দেয়া বা দুর্ব্যবহার করা ভালো ব্যবস্থাপনার লক্ষণ নয়। সংক্ষুব্ধ কর্মী দিয়ে প্রতিষ্ঠান বেশি বড় হতে পারে না।

উদ্যোক্তার কৌশলগত দক্ষতা: উদ্যোক্তার বর্তমানের বাইরে দেখতে পারার সক্ষমতা থাকতে হবে। নিজের ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও সবলতা বুঝতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের দিক নির্ধারণ করতে হবে। আবেগের বশবর্তী হয়ে বা হুজুগে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। তাকে হতে হবে নির্মোহ, নির্মম।

এ বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিষ্ঠানের ধাপভেদে একেকটি একেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন— উদ্যোক্তার দক্ষতা ‘অস্তিত্ব’ বা ‘বেঁচে থাকা’ স্তরে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কৌশলগত দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ উড্ডয়ন বা সম্পূর্ণতা স্তরে। আর্থিক সম্পদ প্রত্যেক ধাপেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে চতুর্থ বা পঞ্চম ধাপে কর্মী সম্পদ, পদ্ধতিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক সম্পদ ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর্থিক সম্পদকে তাই অন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। তবে দিন শেষে উদ্যোক্তার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যই প্রধান। তিনি ঠিক করবেন প্রতিষ্ঠানটি ছোট রেখে নিজের কব্জায় রাখবেন, নাকি বড় করার বিনিময়ে অনেকের প্রতিষ্ঠান করে তুলবেন।

একজন উদ্যোক্তা সব গুণে গুণান্বিত হবেন, তা আশা করা ঠিক নয়। তার বা তাদের ঘাটতিটা কোথায়, জানতে হবে। সে ঘাটতি পূরণের জন্য লোক নিয়োগ করতে হবে। আলিবাবার জ্যাক মা বলেছেন, তিনি নিজের চেয়ে দক্ষ লোক নিয়োগ করেন। কারণ তাদের কাছ থেকে তিনি শিখতে পারেন। ‘আমি ব্যবসার মালিক, আমি সবার চেয়ে বেশি জানি’— অনেকের মধ্যে এ অহম কাজ করে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান আপনার সাইজমাফিক থাকবে। ১০ জনের গুণের সম্মিলনের সমান বড় হতে পারবে না।

কৃতজ্ঞতা: নেইল সি চার্চিল ও ভার্জিনিয়া লুইস; হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড তথ্যসূত্র: বনিকবার্তা।

More News Of This Category